ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় মুফতি কাজী ইব্রাহিমের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মুফতি ইব্রাহিমকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হাসানুজ্জামান। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান নোমান দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বুধবার দুপুরে ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে নানান বক্তব্য দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত মুফতি কাজী ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।
ঢাকা মহানগর ডিবি উত্তরের সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) মুন্সি আব্দুল লোকমান বাদী হয়ে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা এ মামলা করেন। মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে জেড এম রানা নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ৪২০, ৪০৬ ও ৩৮৫ ধারায় প্রতারণার অভিযোগে মুফতি কাজী ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।
সম্প্রতি ওয়াজ মাহফিল, ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে মুফতি কাজী ইব্রাহিম নানা বক্তব্য দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। তার বক্তব্যের অনেক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর লালমাটিয়ার জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে তাকে আটক করে ডিবির একটি দল।
মুফতি ইব্রাহীমের রিমান্ড চায় পুলিশ:ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত মুফতি কাজী ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড চাইবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। ডিএমপি’র সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শরিফুল ইসলাম জানান, মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে (মুফতি ইব্রাহীম) আদালতে পাঠানো হয়েছে। বিশদ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে। এর আগে ডিএমপি’র ডিবি উত্তরের সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি মো. আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত মুফতি কাজী ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা। এর আগে, গত মঙ্গলবার রাতে জেড এম রানা নামে একজন বাদী হয়ে ৪২০, ৪০৬ ও ৩৮৫ ধারায় প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন। ওসি আরও বলেন, আজ আদালতে পাঠিয়ে দুটি মামলায় তার রিমান্ড চাইবে পুলিশ।
সম্প্রতি ওয়াজ মাহফিল, ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে মুফতি ইব্রাহীম বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। তার বক্তব্যের অনেক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর লালমাটিয়ার জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে তাকে আটক করে ডিবির একটি দল।
দুর্ধষ আদালতে যা বললেন মুফতি ইব্রাহীম ও আইনজীবীরা :
মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে ইসলামিক বক্তা মুফতি কাজী ইব্রাহীমের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মো. নোমানের আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে কাজী ইব্রাহীমের ১০ দিনের রিমান্ড চান ?মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, ‘মুফতি ইব্রাহীম একজন ইসলামি বক্তা। আমি নিজেও মাঝে মাঝে উনার বক্তব্য শুনি। যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এ দেশে বসবাস করে, তাই আলেমদের এখানে সম্মান করা হয়। সেই সুযোগ নিয়ে মুফতি ইব্রাহীম বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছেন। এর পেছনে কারা জড়িত তা বের করতে তদন্ত কর্মকর্তার প্রার্থিত ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আর্জি জানাচ্ছি।’
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক শুনানিতে বলেন, ‘মুফতি ইব্রাহীম একজন হাদিস বিশারদ। তিনি কোনও রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তিনি কোরআন ও হাদিসের আলোকে বক্তব্য দেন। হয়রানিমূলকভাবে তার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে দুই দিন ডিবি হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তাই রিমান্ডের কোনও যৌক্তিকতা নেই।’
এ সময় কাজী ইব্রাহীম আদালতকে বলেন, ‘তৎকালীন মিশর সরকার হযরত ইউসুফ (আ.) কে শাসক হিসেবে নিজেই দায়িত্ব দেন। আমার থিম ও স্বপ্ন হলো—বাংলাদেশের সরকারও একসময় এমন কোনও একজন আলেম বা যোগ্য লোককে এই দেশের দায়িত্ব দেবেন। শাসক ও আলেম মিলে দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বা শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দেইনি; বরং তাদের পক্ষেই কথা বলেছি।’ এ সময় তিনি কেঁদে ফেলেন।
এরপর আদালত কাজী ইব্রাহিমের উদ্দেশে বলেন, ‘রিমান্ড মানে আপনাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জিজ্ঞাসা করবে। আপনাকে যা জিজ্ঞাসাবাদ করে ঠিকমতো উত্তর দেবেন। রিমান্ড মানে অন্য কিছু না, যে মারধর করবে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। রিমান্ড মানে ভয়-ভীতির কিছু না।’
তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই সরকারের আমলে গত ১০ বছরে আমাদের ২-৩ হাজার মানুষকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ড শেষে দেখা গেছে অনেকে ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। তার রিমান্ড বাতিলের প্রার্থনা করছি।’
এরপর আদালত কাজী ইব্রাহিমের দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। যেহেতু কাজী ইব্রাহীম আলেম মানুষ। সেহেতু তাকে ভদ্রতার সঙ্গে আনা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় এ মামলা করেন। এর আগে একই থানায় তার বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা হয়। সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর লালমাটিয়ার জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে তাকে আটক করে ডিবির একটি দল।