নওগাঁর ধামইরহাটে মধ্যযুগীয় কায়দায় আনারুল ইসলাম নামের একজন মেধাবী ছাত্রের ডান হাতের দুটি আঙুল কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আনারুল ইসলাম(২২) পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড চকউমর পাটারি পাড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। ২০১৮ জয়পুরহাট পলিটেকনিকেল ইনষ্টিটিউটে ভর্তি হয় চতুর্থ সেমিস্টার পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ওই ইনস্টিটিউটে পঞ্চম সেমিস্টার না থাকায় স্থান পরিবর্তন করে বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি মেধাবী ছাত্র হাওয়াই ২০১৭ সালে সফিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ফাইভ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। স্থানীয় এক বন্ধুর সহযোগিতা নিয়ে বগুড়া পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট এ ভর্তি হওয়ার জন্য এতিমখানা পূর্ব পাশে ইঞ্জিনিয়ার মেস ভাড়া করেন। মেসে পড়াশোনা করার কারণে চাঁদা দিতে হবে এমন দাবি করেন ওই এলাকার কয়েকজন যুবক। এ বিষয়ে আহত ওই যুবক বলেন, গত মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুইজন সন্ত্রাসী মেসের রুমে ঢুকে আমার মোবাইলসহ টাকা দাবি করে। এগুলো না পেয়ে প্রথমে মূখে কাপড় গুজে দিয়ে আমাকে একটি ওয়াশ রুমে নিয়ে যায়। তারপর আমার দুই হত পিঠমোড়া করে প্লাস দিয়ে ডান হাতের ২ টি আংগুল কেটে দেয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় অনেকটা গোপনে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। সে আরো বলেন, চোখেমুখে একরকম আতঙ্ক নিয়েই আনারুল ইসলাম বলেন, ‘আমিতো পড়াশোনা করতে চাই। বাবা মার স্বপ্ন পূরণের জন্য ভালো একটা চাকরি করতে চাই। কিন্তু ওরা তো আমার আঙ্গুল কেটে দিয়েছে, আমি পরীক্ষা দিব কিভাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাকে বাঁচান’। প্রতিবেশী আসাদুল ইসলাম বলেন, ছেলেটি অনেক মেধাবী, পড়াশোনায় ভালো। ওর মা কাজ করে আর বাবা ভ্যান চালায় সংসারসহ ছেলেটির পড়াশোনার খরচ চালায়। ছেলেটির এভাবে আঙ্গুল কেটে দেওয়া আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি। বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সারাদিন ভ্যান চালাই। অভাবের সংসারে যে দু’চার টাকা পাই তা দিয়েই সংসারসহ ওর পড়াশোনার খরচ চালাতে হয়। ছাত্র হিসেবে অনেক মেধাবী হয়াই ওকে নিয়ে আমরা অনেক স্বপ্ন দেখতাম। তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, ছেলেটি আমার স্বপ্ন দেখতো। পড়াশোনা করে একদিন অনেক বড় হবে, বড় চাকরি করবে.! ছেলের উপর মধ্যযুগীয় এমন অমানবিক নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়ে মা সাহারা খাতুন বলেন, সংসারে ও একমাত্র আমাদের আশার প্রদীপ ছিল। ছাত্র হিসেবেও ও ছিল মেধাবী। এখন তো ওর হাতের আংগুল নেই, কলম ধরবে কিভাবে? এ বিষয়ে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আব্দুল গনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। যেহেতু ঘটনাটি বগুড়ায় ঘটেছে সেহেতু অভিযোগটি সেখানে দিতে হবে।