সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২২ অপরাহ্ন

কামরাঙা যখন বিষ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

অনেকেই কামরাঙা খেতে পছন্দ করেন। টক জাতীয় এই ফলে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে এবং এতে ক্যালরিও কম। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য কামরাঙা বিষ হিসেবে কাজ করতে পারে, তাই সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এ প্রতিবেদনে কামরাঙার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় দিকই তুলে ধরা হলো।
কামরাঙা খাবেন কেন? সুস্থ মানুষেরা পরিমিত পরিমাণে কামরাঙা খেয়ে উপকার পেতে পারেন। কামরাঙার উল্লেখযোগ্য ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টিগুলো হলো- ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৫, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ফোলেট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফোলেট ও কপার। একাধিক গবেষণার ফলাফলে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে, কামরাঙা ক্যানসার এড়াতে সাহায্য করবে। এই ফলের ফাইবার ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে। এতে উপস্থিত উচ্চমাত্রার ফাইবার ওজন কমাতেও সহায়তা করে। এসব ফাইবার বিপাক ও হজম ক্রিয়া উন্নত করে- এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটফাঁপা, পেট কামড়ানি ও ডায়রিয়া থেকে উপশম পাওয়া যায়।
কামরাঙার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সোরিয়াসিস ও ডার্মাটাইটিসের উপসর্গ প্রশমিত করতে পারে। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে, যা শ্বেত রক্তকণিকা উৎপাদনের মাধ্যমে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হলে কোভিড-১৯ এর মতো ভাইরাস সংক্রমণ সহজেই বিতাড়িত হয়। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ জনিত গলা ব্যথা কমাতেও ফলটি অবদান রাখতে পারে। কামরাঙার উচ্চ মাত্রার সোডিয়াম ও পটাশিয়াম শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবে কাজ করে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এছাড়া স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন ও যথাযথ রক্তপ্রবাহ নিশ্চিত করে। এতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমাতে পারে।
* কামরাঙা খাবেন না কেন? কামরাঙাতে বহুবিধ পুষ্টি রয়েছে বলে আমরা সহজেই ধরে নিতে পারি যে, এটি খেলে শরীর উপকৃত হবে। কিন্তু একথা সকলের জন্য প্রযোজ্য নয়, বিশেষত যাদের কিডনি রোগ রয়েছে। গবেষকরা জানান, এই ফলে ক্যারামবক্সিন নামে যে বিষ রয়েছে তা কিডনি রোগকে শোচনীয় করে বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। সুস্থ কিডনি এই বিষকে শরীর থেকে বের করে দিতে পারে, কিন্তু এই কাজে অসুস্থ কিডনির সক্ষমতা কম।
কিডনি রোগীর শরীরে ক্যারামবক্সিন জমতে থাকে এবং একসময় মস্তিষ্কে চলে আসে। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে এই বিষ বেড়ে গেলে এসব উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে- হেঁচকি, পেশির অসাড়তা, খিঁচুনি, মানসিক বিভ্রান্তি ও দীর্ঘসময় চেতনাহীনতা (কোমা)। অতঃপর মৃত্যু ঘনিয়ে আসে।শরীরে ক্যারামবক্সিনের বিষক্রিয়া হচ্ছে ধারণা করলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিতে হবে, অন্যথায় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়বে।
ব্রাজিলে অবস্থিত পন্টা গ্রোসা স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব মেডিসিনের গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, কিডনি রোগীর পেট খালি থাকলে বেশি কামরাঙা না খেলেও বিষক্রিয়ায় ভুগতে পারেন। কামরাঙা খাওয়ার আগে প্রচুর পানি পান না করলে বিষক্রিয়া আরো বেড়ে যেতে পারে। কিডনি যত বেশি অকার্যকর হবে, বিষক্রিয়া জনিত পরিণতির ঝুঁকিও তত বেশি। তবে শরীরে ক্যারামবক্সিনের মাত্রা কত হলে বিষক্রিয়া হয় তা নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেননি গবেষকরা। কিডনি রোগের ধরন যেমনই হোক না কেন, সতর্কতাস্বরূপ কামরাঙা পরিহার করাই উত্তম। কিডনি রোগের পাশাপাশি স্নায়ুতাত্ত্বিক সমস্যা থাকলে এই ফল মুখে না নেওয়াটাই নিরাপদ।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ‘আমার তো কিডনির সমস্যা নাই, তাহলে আমি কি ইচ্ছেমতো কামরাঙা খেতে পারব?’ বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি হয়তো জানেন না আপনার কিডনিতে কোনো সমস্যা আছে কি না; তাই সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। কিডনি রোগ নেই ভেবে ইচ্ছেমত কামরাঙা খেতে যাবেন না, নিশ্চিত হতে চেকআপের প্রয়োজন আছে। এমনকি কিডনি সুস্থ হলেও এই ফল বেশি খাওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ অক্সালেটের প্রভাবে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া ক্যারামবক্সিনের প্রভাবে স্নায়ুতাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। কামরাঙা খেতে চাইলে এই তিন পরামর্শ বিবেচনা করুন- খালিপেটে খাবেন না, বেশি পরিমাণে খাবেন না এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। তথ্যসূত্র: ওয়েব এমডি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com