দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। এরইমধ্যে এই অবস্থান থেকে সরে আসছে ক্ষমতাসীনরা। নদীর নাব্য ধরে রাখতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া টানেল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশে (আইইবি) এক সেমিনারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ তথ্য দেন। ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা শেখ হাসিনার উন্নয়নের সংগ্রাম, নিরবচ্ছিন্ন স্বপ্নের মহাসড়কে খুলনা থেকে চট্টগ্রাম’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপ-কমিটি। সেমিনারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, নদীর নাব্য ধরে রাখতে সরকার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ব্রিজ না করে টানেল করার পরিকল্পনা করছে। এসময় মন্ত্রী সড়ক নিয়ে বলেন, শুধু রাস্তা নির্মাণ করলেই হবে না, মজবুত করতে হবে। পাশাপাশি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করাটাও জরুরি।
পরে বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গত নির্বাচনের আগে বিএনপি ভিশন-২০৩০ নামে যে পলিটিক্যাল স্ট্যান্ডবাজি করেছিলো তা এখন ডিপ ফ্রিজে। বিএনপির কাউন্টার ভিশন কখনো আলোর মুখ দেখবে না। এমনিতেই বিএনপি নেতিবাচক রাজনীতির জন্য জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১, ২০৪১ ও ২১০০, যখন যা করার দরকার তখন তিনি তাই করবেন। সব পরিকল্পনাই প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনায় আছে।
স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এবং উপ-কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, দেশে এ পর্যন্ত উত্তর-দক্ষিণ সংযোগকারী যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও পূর্ব-পশ্চিম সংযোগকারী সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। ফলে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় রাজধানী ঢাকার উপর চাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। খুলনা অথবা বরিশাল থেকে কোনো গাড়ি যদি চট্টগ্রাম বন্দরে যেতে চায়, তবে ঢাকা ছাড়া তাদের যাওয়ার কোনো সরাসরি ব্যবস্থা নেই। পূর্ব-পশ্চিম সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করতে পারলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ৪-লেন সড়কের উপর চাপ বহুলাংশে কমে যাবে। তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সমগ্র সমুদ্র উপকূলজুড়ে তাদের রোড নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। ফলে বন্দর থেকে বন্দরে পণ্য পরিবহনে তাদের একটা সমন্বিত নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। আমরা সমুদ্র উপকূল দিয়ে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারলে দেশের ব্লু-ইকোনমিতে একটা বিশাল প্রভাব ফেলবে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে যোগাযোগের একটি হাব। সিঙ্গাপুরের মতো বাংলাদেশও সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থার একটা রোল মডেল হয়ে উঠবে। ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, দেশের সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের একটা নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। এখন বাংলাদেশের মানুষ বছরের বিভিন্ন সময় থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারত ঘুরতে যায়, কিন্তু তখন ঘুরতে যাবে নোয়াখালী, সন্দ্বীপ ও হাতিয়াসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন পর্যটন নগরীতে। শুধু দেশের নয় বিদেশি পর্যটকে এই অঞ্চলটি মুখরিত হবে। সরাসারি বিদেশি বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচিত হবে। ফলে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি আরও শতকরা দুইভাগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য প্রফেসর ড. মো. হোসেন মনসুরের সভাপতিত্বে সঞ্চালনা করেন আইইবির ঢাকা কেন্দ্রের সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার কাজী খায়রুল বাশার। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার এ. এফ. এম. সাইফুল আমিন। এছাড়া আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন আইইবির প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. নূরুল হুদা, বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. মিজানুর রহমান, সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, সড়ক ও জনপদের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান।