রুহুল আমিন গাজীর মুক্তি দাবিতে বিআরজেএ’র বিক্ষোভ সমাবেশ
স্বাধীনতার উষালগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, অনেকে বলে দেশে গণতন্ত্র নেই তাতে কি উন্নয়নতো হচ্ছে। আমি বলি দেশে কোনো উন্নয়নই হচ্ছে না আর গণতন্ত্রতো নাই-ই। গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন-বিআরজেএ’র উদ্যোগে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর নিঃশর্ত মুক্তি ও সকল সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অনেকে উন্নয়নের কথা বলেন, উন্নয়ন যদি হয় তাহলে গত এক-দেড় বছরে ২ কোটি লোক দরিদ্র হয়েছে কেন? কয়টা লোকের চাকরি হয়েছে? কয়টা কারখানা হয়েছে? কেবল মেগা প্রজেক্ট কয়েকটা হচ্ছে যেখান থেকে এরা লুট করতে পারে। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট ৬০ হাজার কোটি যায়। এরা লুটেরা, এরা ভোট ডাকাত, এরা জুলুমবাজ। এরা মানুষের অধিকারে বিশ্বাস করে না, সাংবাদিকদের লেখার অধিকারেও বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্রের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের (সরকার) বলি একবার বিবেচনা দেখান, দয়া দেখান, আপনারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। মানুষের বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন। সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান দেখাননি, মামলার ভিত্তি নেই, জামিন পাবার অধিকার রাখেন কিন্তু জামিন দিবে না। এভাবে সমস্ত সাংবাদিক বিশেষ করে প্রতিবাদী সাংবাদিক ও লেখকদের লেখনি বন্ধ করার জন্য পায়তারা করা হচ্ছে। যারা গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তাদের দাবির প্রতি আমিও সমর্থন জানাই। মুক্তির দাবি জানাই। বিএফইউজে’র সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির জন্য ১১ মাস ধরে রাস্তায় আন্দোলন করছে। যদিও তার কোনো অপরাধ নেই। অথচ, দেশের অনেক খুনি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা সমাজে বুক ফুলিয়ে বিচরণ করছে। এম আবদুল্লাহ আরো বলেন, রুহুল আমিন গাজীর সন্তান যখন তার মাকে প্রশ্ন করে ‘আমি কি আমার আব্বুকে জীবিত দেখতে পাবো না?’ সেই প্রশ্নের উত্তর কি কোনো মা দিতে পারে? পারে না। পাষাণ ক্ষমতাশীলদের বুকে দয়া-মায়া নেই। এজন্যই রুহুল আমিন গাজীকে মুক্তি দিচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, যে রুহুল আমিন গাজী জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছেন, তিনি নাকি রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ করেছে। এটা পাগলের প্রলাপ। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তার জামিনও হচ্ছে না। জামিন আবেদন বারবার বাতিল করছে। এ লজ্জা আমরা কোথায় রাখবো। আর দেরি নয়, অবিলম্বে রুহুল আমিন গাজীকে মুক্তি দিন। তানাহলে সাংবাদিক সমাজ জেগে উঠবে। ডিইউজে’র সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, যে দেশে গণতন্ত্র থাকে না, সে দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও থাকে না। আমাদের সংবিধানে বাক স্বাধীনতার কথা উল্লেখ থাকলেও সরকার সেটা মানছে না বরং গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যেখানে সত্য প্রকাশে প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, বর্তমানে সাংবাদিকরা যে নির্মমতার শিকার তা গত ৫০ বছরে এমন নজির নেই। এ রকম নির্যাতন শুধু ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলেই হয়ে থাকে। মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করে ফ্যাসিবাদী শাসন বেশি দিন টিকিয়ে রাখা যাবে না। তিনি সরকারের উদ্দেশ করে বলেন, সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন বন্ধ করুন। অবিলম্বে আটক সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীকে মুক্তি দিন। অন্যত্থায় কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ডিইউজে‘র সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, একটি কল্পিত অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা মিথ্যা মামলায় এক বছর ধরে জেল খাটছেন সাংবাদিক সমাজের পরীক্ষিত নেতা রুহুল আমিন গাজী। তার একটি মাত্র দোষ তিনি অন্যায়ের সাথে আপোস করেন না। আর এ কারণেই মাসের পর মাস তাকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছেন জামিন পাবার অধিকার থেকে। যা মানবাধিকারের সুস্পস্ট লংঘন। তিনি অবিলম্বে রুহুল আমিন গাজীর মুক্তি দাবি করেন। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন-বিআরজেএ’র চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রুকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে’র সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি শাহীন হাসনাত ও বাছির জামাল, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক (গাযী আনোয়ার), দফতর সম্পাদক ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য আবু বকর, ঢাকা সাব-এডিটর কাউন্সিলের নেত্রী লাবিন রহমান, বিআরজেএ’র নেতা আব্দুল জব্বার, আ ফ ম ইউসুফ, শামীম হাসনাইন, রাসেল পাটোয়ারী, মাসুদ হোসেন, এরশাদুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআরজেএ’র মহাসচিব- মুহাম্মদ আবু হানিফ।