পৃথিবীতে বিচরণশীল প্রতিটি মানুষের একটা লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য আছে এবং থাকে, এটিই স্বাভাবিক। তবে তার ধরন ভিন্ন হতে পারে। যেমন- একজন ছাত্রকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তার লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাহলে সে বলবে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইন বিশেষজ্ঞ অথবা একজন আলেম কিংবা শিক্ষক। একজন শিক্ষা সমাপনী ব্যক্তিকে যদি একই প্রশ্ন করা হয় তাহলে সে বলবে ভালো একটা চাকরি অথবা ব্যবসায়। তদ্রুপ প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষ একটা লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে। কেউ রাজনীতিবিদ আবার কেউ জনসেবক হওয়া ইত্যাদি। বেশির ভাগ মানুষের উদ্দেশ্য যখন দুনিয়াবি, তার মাঝে প্রকৃত মুমিন-মুসলমানের জবাব হবে, দুনিয়ার এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে মহান মালিক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে অনন্ত সেই পরকালে মহা প্রলয়ের সন্ধিক্ষণে জান্নাত লাভ করা এবং অবর্ণনীয় মহাকঠিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করাই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য উদ্দেশ্য। তার মানে এই নয় যে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা আইনবিদ হওয়া যাবে না। বরং পেশা হিসেবে আমি আপনি যেটাই গ্রহণ করি তা কেবল হালাল হলেই চলবে। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সততা, ন্যায়-নিষ্ঠতার বিষয়ে আমরা আপস করব না। কারণ আমাদের লক্ষ্য চিরস্থায়ী জান্নাত লাভ এবং চিরস্থায়ী জাহান্নাম থেকে মুক্তি। আখিরাতের দৃষ্টিকোণ থেকে একজন মানুষের জন্য তার মূল উদ্দেশ্য কী নির্ধারণ করা উচিত ছিল? এবং সর্বোচ্চ সফলতা প্রাপ্তি কোথায় নিহিত আছে। তা মহান আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট করেছেন। কারণ, সাধারণত সবার ধ্যান-ধারণা ক্রিয়াকলাপ চিন্তা-ভাবনা সব কিছু অস্থায়ী পৃথিবীর অত্যন্ত স্বল্পকালীন আয়ুর ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়। পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে পরিচালিত জীবনের সংখ্যা অতি নগণ্য। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য আছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, অতঃপর তারা মারে ও মরে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের হক ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কে আছে? সুতরাং তোমরা যে সওদা করেছ সে সওদার জন্য আনন্দিত হও। আর সেটাই তো মহা সাফল্য’ (সূরা তাওবাহ, আয়াত-১১১)।
অন্যত্রে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রকৃত মুমিনরা বলবে আমি, একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরাচ্ছি যিনি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা আনআম, আয়াত-৭৯)। লক্ষ্য যেরূপভাবে আল্লাহমুখী হবে তদ্রুপ তার দুনিয়ার সব কার্যকলাপেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রত্যাশা থাকবে। মুমিনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে পবিত্র কুরআনের পাশাপাশি হাদিসেও অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। যেমন- হজরত আনাস ইবনে মালেক রা: থেকে বর্ণিত- তিনি নবী করিম সা: থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, ‘তিনটি জিনিস তোমাদের যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে ঈমানের স্বাদ লাভ করতে পারবে তা হলো- আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাঁর কাছে অন্য সবার অপেক্ষায় অধিক প্রিয় হবেন, সে কাউকে ভালোবাসবে একমাত্র আল্লাহর জন্যই এবং সে কখনো কুফরির মধ্যে পুনরায় ফিরে যেতে রাজি হবে না, যেমন রাজি হবে না আগুনে নিক্ষিপ্ত হতে’ (বুখারি, বাবু হালাওয়াতিল ঈমানি-১৫)।
মানুষ দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, তারা সমস্যায় জর্জরিত এই ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বহু বছর আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের ছোট্ট একটি সূরা যেখানে আল্লাহ তায়ালা সুন্দর করে বর্ণনা দিয়েছেন- শপথ সময়ের; নিশ্চয় (সব) মানুষ অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত অর্থাৎ ব্যর্থ এবং জাহান্নামবাসী; কিন্তু তারা নয় যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে এবং যারা পরস্পরকে (কুরআন-হাদিস অবলম্বনে) সত্যের উপদেশ দেয় এবং উপদেশ দেয় ধৈর্য ধারণের’ (সব পরিস্থিতিতে)। এই আয়াতের ব্যাখ্যাতে মুমিনের জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সাথে তাদের কী কী গুণাগুণ থাকবে তাও। পরিশেষে, প্রত্যেক মুমিনের জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হবে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াতে ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে পরকালীন চিরস্থায়ী জীবনে কঠিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত হাসিল করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।