স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে গিয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের এখন যে শারীরিক অবস্থা, তার চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত আফসার আহমেদ সিদ্দিকীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বুধবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এ দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া কয়েকদিন ধরে হালকা জ্বর অনুভব করছেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের নানাবিধ শারীরিক সমস্যা রয়েছে। যেগুলো একসঙ্গে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। যা বাংলাদেশে করা যাবে না। এদেশে খালেদা জিয়ার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সম্ভব নয়। মাল্টি চিকিৎসা এখানে নেই। দেশের বাইরে নিতে হবে। সরকার কেন তাকে জামিন দিচ্ছে না। খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামতে হবে। এসময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক জাহানারা সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক সেলিম ভূঁইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কৃষক দল নেতা কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
হাসপাতালে ভর্তি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া: রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন খালেদা জিয়া। এখানে তার শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে। এদিন বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে খালেদা জিয়া বাসা থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে বের হন। বিকাল ৪টার দিকে তিনি হাসপাতালে পৌঁছান। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে চিকিৎসক হাসপাতালে আসেন দলের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডা. আল মামুনসহ অনেকে। এদিকে দুপুর থেকেই এভারকেয়ার হাসপাতালের চারপাশে জড়ো হয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ভিড় সামলাতে হাসপাতালের ভেতর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার সকালে বিএনপি প্রধানের চিকিৎসা কার্যক্রমে যুক্ত একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শারীরিকভাবে সব অসুখই ঘুরে-ফিরে আসছে খালেদা জিয়ার। থেমে থেমে জ্বরও আসছে বেশ কিছু দিন। এছাড়া পুরনো অসুখগুলোও সেরে উঠেনি। এ কারণেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে এভারকেয়ারে এসেছেন খালেদা জিয়া। এর আগে, এ বছরের ২৭ এপ্রিল এভারকেয়ারে ভর্তির পর চিকিৎসা শেষে ১৯ জুন রাতে বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। গত ১৮ আগস্ট মহাখালীর শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেন তিনি। গত ১৯ জুলাই এই হাসপাতালে টিকার প্রথম ডোজ নেন খালেদা জিয়া।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের সাজা (কারাদ-) হয় খালেদা জিয়ার। পরে উচ্চ আদালতে আরও পাঁচ বছর সাজা বাড়ে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে তাকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। গত সেপ্টেম্বরে চতুর্থ দফায় বেগম জিয়ার মুক্তির সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে।