‘শেখ রাসেল স্বর্ণ পদক’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশকে গড়তে চাই। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই। যে দেশে কোনও অন্যায় থাকবে না, অবিচার থাকবে না, মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে; সেটাই আমি চাই। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শেখ রাসেল দিবস-২০২১’ এর উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
জানায়, বাসস জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র এবং ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে শাহাদৎবরণকারী শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্মদিন এবং ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২১’ উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘শেখ রাসেল স্বর্ণ পদকসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেছেন। তিনি গতকাল সোমবার সকালে গণভবন থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষা, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিল্পকলা-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু-এ ৫টি ক্যাটাগরিতে প্রতিটি ১ ভরি করে ১০টি ‘শেখ রাসেল স্বর্ণ পদক’, ১০টি ল্যাপটপ ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এ ছাড়া, শেখ রাসেল অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ১০টি ল্যাপটপ; এবং লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলমেন্ট প্রকল্পের (এলইডিপি) আওতায় প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে হতে সর্বোচ্চ উপার্জনকারীদের মাঝে ৪ হাজারটি ল্যাপটপ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উদ্যোগে সারাদেশে আয়োজিত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতারও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। একইসঙ্গে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং স্টেডিয়াম প্রান্তে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষ্যে রোলার স্কেটিং প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয় এবং ‘শেখ রাসেল শৈশবে ঝড়ে যাওয়া ফুল’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ প্রকাশিত ‘শেখ রাসেল দৃপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ^াস’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক ও উন্মোচন করেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম বক্তৃতা করেন।
শেখ রাসেল জাতিয় শিশু-কিশোর পরিষদের মহাসচিব এবং শিশু বক্তা আফসা জাফর সৃজিতা অনুষ্ঠানে তার অনুভূতি ব্যাক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ পরিবেশিত শেখ রাসেলের দুরন্ত শৈশব ভিত্তিক অডিও ভিজ্যুয়াল পরিবেশনা ‘শেখ রাসেল এক অনন্ত বেদনার কাব্য’ এবং ‘থিম সঙ্গ’ পরিবেশিত হয়।
অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় পর্বে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের উদ্যোগে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও পরিবেশিত হয়।
উল্লেখ্য, শিশু রাসেলের জীবন স¤পর্কে শিশু-কিশোরদের কাছে তুলে ধরতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর তাঁর জন্মদিনকে ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথমবারের মতো পালিত ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২১’ এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে-‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’।
এর আগে সকালে শেখ রাসেল দিবস-২০২১’ উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মারক ডাক টিকেট, উদ্বোধনী খাম এবং সিলমোহর অবমুক্ত করেন।
শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এছাড়া তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ আজ বিকেল ৩টায় ‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করবে এবং সন্ধ্যায় ৬টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘কনসার্ট ফর পিস এন্ড জাস্টিস’ শীর্ষক এক কনসার্টের আয়োজন করবে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে কনসার্টে যোগ দেবেন।
শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।
এছাড়াও ‘শেখ রাসেল দিবস’ উপলক্ষে আগামীকাল ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৩ টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার শত্রু ঘৃণ্য ঘাতকদের নির্মম বুলেট থেকে রক্ষা পাননি শিশু শেখ রাসেল। বঙ্গবন্ধুর সাথে নরপিশাচরা নির্মমভাবে তাকেও হত্যা করেছিল। তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন।