ভারতে বন্যার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের তিস্তা নদীতেও। এতে এরইমধ্যে ভেঙে গেছে তিস্তা ব্যারাজের লালমনিরহাট অংশের একটি বাঁধ। হুমকির মুখে অন্য বাঁধগুলোও। এদিকে ব্যারাজ রক্ষার্থে রেড এলার্ট জারি করে তিস্তার তীরবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত বুধবার দুপুর থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই প্রবাহ আরও কি পরিমাণ বাড়তে পারে তার ধারণা নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এদিকে উজানের ঢলে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেও পানি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় বড়খাতা টু হাতীবান্ধা বাইপাস সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। এতে তার ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে ডুবে গেছে লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী হাজার হাজার একর ফসলি জমি। জেলা পরিষদ সদস্য শকিল হোসেন বলেন, বালু পড়ে তিস্তা ব্যারাজের গেটগুলো বন্ধ হয়ে গেলেও ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ গেট থেকে বালু সরিয়ে নেয়নি। ফলে তিস্তা ফ্লাড বাইপাসে পানির চাপ বেড়ে গিয়ে তা ভেঙে যায়। এতে তিস্তার পানিতে ডুবছে লোকালয়। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, পানির চাপে তিস্তা ফ্লাড বাইপাস ভেঙে গেছে। এতে তিস্তার তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউএনওদের মাধ্যমে বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিবার বন্যার আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বন্যার আগাম পূর্বাভাস জানানো হলেও এবার তা জানানো হয়নি। ফলে বন্যার পানিতে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া’র নির্বাহী প্রকৌশলী আসফুদ্দৌলা বলেন, মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তার পানি বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টায় ওই পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফলে ইতোমধ্যে ব্যারজের ফ্লাড বাইপাসটি পানির চাপে ভেঙে গেছে। তিস্তার পানি ক্রমেই বাড়ছে। আরও কি পরিমাণ পানি আসতে পারে তা ধারণা করা যাচ্ছে না।
পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলে, ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেও পানি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। আমরা তিস্তা অববাহিকায় লাল সংকেত দিয়ে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলেছি।
ভেঙে গেছে তিস্তা ফ্লাড বাইপাস, ভয়াবহ বন্যা: তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা ব্যারাজের লালমনিরহাট অংশের একটি ফ্লাড বাইপাস বাঁধ ভেঙে গেছে। এই এলাকায় পানি বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। হাতীবান্ধা শহরসহ লোকালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। ডুবে গেছে তিস্তা তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার একর ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা পাড়ের মানুষের মাঝে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত বুধবার সকাল ৯টা থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। বুধবার সকালে পানি বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। হাতীবান্ধার বড়খাতা হতে গড্ডিমারী মেডিকেল মোড় হয়ে মেডিকেল মোড় বাইপাস পাকা সড়কটির উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ধসে পড়ছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের লালমনিরহাট অংশের একটি ফ্লাড বাইপাস বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে নিলফামারী জেলার সাথে লালমনিরহাটের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাইপাসটি ভেঙে যাওয়ায় পানি হাতীবান্ধা শহরে ঢুকছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার একর পাকা ধানক্ষেতসহ আলু, ভুট্টা ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে।
স্থানীয়রা বলেন, প্রতিবার বন্যার আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বন্যার আগাম পূর্বাভাস জানানো হলেও এবার তা জানানো হয়নি। ফলে বন্যার পানিতে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিউল আমিন বলেন, হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে ফ্লাড বাইপাস ভেঙে গেছে।