মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

ইকবাল গ্রেফতার তারপরও নানান প্রশ্ন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২১

কুমিল্লা নানুয়া দীঘিপাড়ের মণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় গ্রেফতার ইকবালকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। কক্সবাজারে শনাক্ত হওয়া আসামি গ্রেফতারের পর বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ইকবাল হোসেন নামে যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার নামের আগে ‘ঘরঘুরে’ শব্দজুড়ে দেয়া হয়েছে। কখনো কখনো এমন যাদের ধরা হয়, কখনো বলে পাগল, না হলে বলে ভবঘুরে। এই ভবঘুরে কীভাবে পবিত্র কোরআন শরীফ চিনল? এটি কোনো ভবঘুরের কাজ হতে পারে না। এটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। চক্রান্তকারীরা পেছনে আছে। এদের বের করা রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্য দৃষ্টান্ত বলে আমরা পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। কিন্তু নিকট অতীতের এই ঘটনা আমাদের আত্মপরিচয়কে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে আমরা কি এমন দেশ চেয়েছিলাম? এমন দেশের জন্যই কি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল? একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তেই বাংলাদেশের জন্ম। অথচ ৫০ বছর পরেও একটি সম্প্রদায়ের মানুষ চরম নিরাপত্তহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। তাই অবিলম্বে ইকবালের পেছনে কারা, তাদের খুঁজে বের জরুরি। আর দেশজুড়ে হামলা ছড়িয়ে দেয়ার নেপথ্যের পরিকল্পনাকারী কারা তাদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা দরকার। না হলে বরাবরের মতোই বিচারহীনতার জটে আটকা পড়ে যাবে ঘটনার মূল হোতারাও।’
কুমিল্লার পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া যুবক ইকবাল হোসেন এত দিন কোথায় ছিল এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনএপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এটা তো পরিষ্কার, পত্র-পত্রিকাগুলো দেখেন, দেখলেই বুঝতে পারবেন। এটা সবাই মানে যে সরকারের মদদ ছাড়া কখনো সাম্প্রদায়িক সমস্যা তৈরি হয় না। যারা সরকারে থাকে তারাই করে। গত শুক্রবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে এক আলোচনাসভায় তিনি এ প্রশ্ন তোলেন। শারদীয়া দুর্গাপূজার সময় বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপে হামলার কয়েকটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে, এই যে ইকবালের কথা কিছুক্ষণ আগে একজন বললেন। ইকবাল নামে একজন, বলা যেতে পারে একটা অপ্রকৃতিস্থ এবং মাদকসেবী, তাকে ধরা হয়েছে। এটা (ইকবাল) এত দিন কোথায় ছিল? এই বিশ্বাসটা কে করবে? কারা তাকে সেখানে নিল?’
ফখরুল বলেন, রংপুরের ঘটনায় দেখলাম আমরা- একদিকে ওসি, চেয়ারম্যান সবাই মিলে আলোচনা করছে, একটা আপস করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে বাইরে থেকে এসে লোকজন মাঝিপাড়া জ্বালিয়ে দিয়েছে। দুর্ভাগ্য! তাহলে কি আমরা বলব যে তাদের ছত্রচ্ছায়ায় এই ঘটনা ঘটেছে? বিএনপি মহাসচিব বলেন, কুমিল্লার ঘটনার পর ওবায়দুল কাদের সাহেব কী করলেন? সেই দিন যখনই ঘটনাগুলো ঘটল, প্রথমে ওবায়দুল কাদের সাহেব বললেন, এটা বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা করেছে। কথায় কথায় উনি একটাই কথা বলবেন যে যত দোষ নন্দ ঘোষ। তিনি বলেন, আপনাদের চরম ব্যর্থতা যে সমাজে কোনো মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারেন না। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা, তারা ধর্মবিশ্বাস করেন, তারা তাদের ধর্ম পালন করবেন, মুসলিম ধর্মের মানুষেরা তাদের ধর্ম পালন করবেন, বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবেন, খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবেন- এটাই তো বাংলাদেশ। আপনারা কী করছেন? অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছেন, যা হাজার বছর ধরে চলে আসছে। সা¤প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে শুধু মানুষের দৃষ্টিটা, মানুষের মনোযোগ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার এই বিষয়টাকে সামনে নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, সরকার একেক সময় একেকটা বিভাজন তৈরি করছে। সেই বিভাজনে একেক সময় একেকটা বিষয়কে সামনে নিয়ে আসে। স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি। এখন তারা ধর্মীয় বিভাজনে নেমে পড়েছে, কী করে মানুষের মূল যে সমস্যা, সেই সমস্যা থেকে তাদেরকে বিভ্রান্ত করা যায়।আমাদের সমস্যা হলো- এখন আমাদের জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা ভোট দিতে পারি না, আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা কথা বলতে পারি না, আমাদের অধিকারগুলো নেই, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই জায়গাগুলো থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে এসে একটা সাম্প্রদায়িক সংকট, সাম্প্রদায়িক সমস্যা তৈরি করছে।
কুমিল্লা নানুয়া দীঘিপাড়ের মণ্ডপে ওই দিন কী কারণে কিছু সময়ের জন্য মণ্ডপ এলাকা বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সে বিষয়গুলো তদন্তের আওতায় আনা হলো কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। সংগঠনটি বলেছে, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হনুমান মূর্তির কোলের ওপর রাখা পবিত্র কোরআন শরীফটি সরিয়ে নেওয়ার পর কেন ভিডিও করার সুযোগ দিলেন এবং কেন সে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, তা সবার কাছে বিরাট প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। গত ২২ অক্টোবর রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, দুর্গাপূজার আগে ৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ৪ অক্টোবর ডিএমপি কমিশনার ও ৬ অক্টোবর পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গে আমাদের মতবিনিময় হয়। প্রতিটি সভায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেকে স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে মতামত দিয়েছেন প্রতিটি সভায় নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও এমন ঘটল। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক দোষারোপের কারণে প্রকৃত দোষীরা পার পেয়ে যাচ্ছে যা দেশের আইনশৃঙ্খলা ও পারস্পরিক আস্থার জন্য সুখকর নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, মণ্ডপ, বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ছিল উল্লেখ করে এর কারণ খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন ৪৭ নাগরিক। এসব হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছেন তারা। বিবৃতিতে হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়।
কক্সবাজারে গ্রেফতার হওয়া ইকবালকে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, কক্সবাজারে যাকে গ্রেফতার করা হয় সেই কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন রেখে আসা ইকবাল। গ্রেফতারের কাজটি পরিকল্পনা মাফিক করা হয়েছে। ঘটনার পেছনে কেউ রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও এমন বেশকিছু প্রশ্ন নিয়ে কাজ করছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পূজামণ্ডপ ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় আমরা ক্ষোভ ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা মনে করি যারা এসব ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত, তারা দেশের সব নাগরিকের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠারবিরোধী এবং পক্ষান্তরে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। তাই অবিলম্বে এইসব দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিতের জন্য আমরা সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।
এতে বলা হয়, কুমিল্লায় সংঘটিত ঘটনার পর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরো সতর্ক, সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল। কিন্তু ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আরো সাম্প্রদায়িক হামলা আমরা দেখলাম, যার দায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই নিষ্ক্রিয়তার কারণ কী তা খুঁজে বের করতে হবে। তারা বলেন, অন্যদিকে কিছু জায়গায় জড়ো হওয়া জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিবর্ষণের যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে শক্তিপ্রয়োগ পরিমিত ও আইনানুগ ছিল কি-না তদন্ত করে দেখতে হবে। বিবৃতিদাতারা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, মানবাধিকারকর্মী ড. হামিদা হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমদ, অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির, সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, সভাপতি সালমা আলী, আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন প্রমুখ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com