রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:১৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
মুকসুদপুর পৌরসভার সেবা কার্যক্রম স্থবির, চরম দুর্ভোগে পৌরবাসী দেশের মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শেরপুর প্রেসক্লাবের স্মারকলিপি প্রদান সাভারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অষ্টাদশ জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫ দুর্নীতিমুক্ত পৌরসভা গড়তে সহযোগিতা চাই -জয়নাল আবেদীন আন্দোলনে আহত আলাউদ্দিন পাননি কোনো সহযোগিতা, মাথায় বয়ে বেড়াচ্ছেন গুলি ৩৮ প্রজাতির ৭ হাজার ৮৭০টি পাখির দেখা মিলেছে জামালপুরের মাদারগঞ্জে গ্যাসকূপ খনন কাজ উদ্বোধন দুপচাঁচিয়া শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে এতিমদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ শাহীন স্কুল বগুড়া শাখার আয়োজনে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পিঠা উৎসব

‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে প্রতিমন্ত্রীর স্মৃতিচারণ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১

পুরোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী বন্ধুর দেখা পেয়ে কিশোরকালের দিনের কথা মনে করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্মৃতিচারণ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। শনিবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রংপুর সফরের এক অংশের কিছু লেখা নিজের ফেসবুকে একটি ছবি সম্বলিত পোস্ট করে এ স্মৃতিচারণ করেন তিনি।
ওই পোস্টে প্রতিমন্ত্রী সেই কিশোরকালের বন্ধু ছিতুয়ার কথা লিখে কিশোর কালে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা লেখেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘পতাকাবাহী গাড়ি। পুলিশ প্রটোকল। বাড়তি লোকজনের ভিড়। এসব দেখে কিছুটা হতভম্ব ছিতুয়া। আমাদের সেই বন্ধুত্বের আবেগ আর আমার দুরন্তপনার দিনগুলো তখন অতীতের স্মৃতির ঝাঁপি খুলে জ্বলজ্বলে তারা হয়ে উপস্থিত আমার চোখের সামনে। কিন্তু ছিতুয়া প্রচণ্ড আড়ষ্ট। নিজেকে আড়াল করার কি ব্যর্থ চেষ্টা! আমি বুঝতে পারছিলাম, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে চারপাশের প্রটোকলের আবহ ছিতুয়া আর আমার সম্পর্কের মধ্যে এক অদৃশ্য দেয়াল টেনে দিচ্ছে।
জনারণ্যে ‘এ্যাই ছিতুয়া’ বলে ডাকতেই ফিরে তাকালো সে। পড়ন্ত বয়সেও যেন সেই হারানো যৌবনের চকচকে চোখে মৃদু হাসিতে তাকালো আমার দিকে। দৃষ্টি বিনিময় হতেই বন্ধুকে বুকে টেনে নিয়ে বুক ফুলিয়ে গর্বের সঙ্গে বললাম, এই ছিতুয়াই আমার স্কুলের বন্ধু। ছিতুয়ার তখন ছল ছলে চোখ। আমারও গোপন অশ্রুবিন্দুগুলো তখন স্মৃতির মণিমুক্তা হয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে দুই নয়ন। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচ্ছন্নতাকর্মী (সুইপার) থেকে সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন ছিতুয়া। ছিতুয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে ধারাবাহিক পেশাগত সম্পর্ক ধরে রেখেছে বৌদি গীতা রানী। সেও এখন সুইপার পদে কর্মরত।
তো আসছি ছিতুয়ার প্রসঙ্গে। আমার বাবা মরহুম আক্তারুজ্জামান খান ছিলেন এই অফিসেরই উচ্চ মান সরকারি (ইউডি অ্যাসিস্টেন্ট)। আর ছিতুয়ার মা (আমাদের প্রিয় মাসি মা) চানিয়া রানী ছিলেন সুইপার। তখন ছিলো স্বর্ণালীযুগ। আমরা যে মূল্যবোধে বেড়ে উঠছিলাম, সেখানে জাত-পাতের কোনো বালাই ছিল না। আরো অন্যান্য বন্ধুদের মতো ছিতুয়া ও ছিলো আমার দূরন্ত শৈশব আর কৈশোর অসাধারণ এক বন্ধু। রংপুরের রবার্টসনগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই ছিলো ছিতুয়া। তারপর পড়াশোনায় সে ইস্তফা দিলেও আমাদের বন্ধুত্বে ভাটা পড়েনি কখনো। আহারে জীবন। আমার সোনালী অতীত। সোনালী কৈশোরের কতশত স্মৃতি মাখা এই রংপুর। আজ ছিতুয়া ঝাপসা করে দিচ্ছে আমার চোখদুটো।
ছিতুয়া আর আমার দূরন্তপনায় রীতিমতো অস্থির থাকতো পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলোনি। আমি দুঃসাহসী ‘গাছো’ ছিলাম। যেকোন গাছে কাঠবিড়ালের মতো তরতর উঠে পড়তে আমার আর ছিতুয়ার ছিলো জুড়ি মেলা ভার। তো কলোনির আঙিনায় সারি সারি নারিকেল গাছের নারকেল পরিপক্ব হবার আগেই তা আমাদের কারণে সাবাড় হয়ে যেতো। তেমনি আম কাঁঠালও।
জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে কৈশোরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলো একদিকে যেমন আনন্দের অন্যদিকে অনেক কষ্টের। সেই আনন্দ আর কষ্টের মিশেলে ভিন্ন এক অনুভূতি আজ উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছে আমার বন্ধু ছিতুয়া। সরকারি চাকরি কনটিনিউ করলে বেশ কয়েক বছর আগে আমার নিজেরও অবসর নিতে হতো। আমার বন্ধুদের অনেকেই দেশবরেণ্য চিকিৎসক, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট জেনারেল, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিবসহ আরো কত কি! ছিতুয়া অবশ্যই তাদের তুলনায় কম কিছু নয়।
‘বন্ধু মানে আস্থা, নির্ভরতা। বন্ধু মানে ভালোবাসা, যেখানে থাকে না কোনো স্বার্থ। ’ গাড়ির পতাকা, প্রটোকল, পদ-পদবী, সামাজিক অবস্থান এগুলো সবকিছুই সাময়িক। কিন্তু বন্ধুত্বের বন্ধন চিরদিনের।
ছিতুয়া বন্ধু আমার। তোর জন্য ভালোবাসা। ’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com