প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীতের আগমনে দেশে আবারো করোনাভাইরাস যাতে মাথাচারা দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং মাস্ক ব্যবহারের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে যখনই আবার শিতকাল আসছে পৃথিবীর সবদেশেই কিন্তু আবার করোনাভাইরাস দেখা দিচ্ছে। ইউএসএ, ইংল্যান্ড বা ইউরোপের দেশগুলোতে এর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই বাংলাদেশের সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য আমি অনুরোধ করছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শীতকাল আসলেই একটু ঠান্ডা লাগে, সর্দি, কাশি হয়। আর এটা হলেই এই করোনাভাইরাসটা আমাদের সাইনাসে গিয়ে বাসা বানাতে পারে। কাজেই, সেইদিকে সবাইকে একটু সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে মাস্ক পড়তে হবে এবং খাদ্য তালিকায় ‘ভিটামিন সি’ যাতে একটু বেশি থাকে এবং যাতে ঠান্ডা না লাগে সেদিকে নজর দিতে হবে।’ তিনি এ সময় মৌসুমি ফলমূল, শাকসবজী এবং তরিতরকারি বেশি করে খাবার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী গত ২৮ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে শীত মৌসুমের আগে তাঁর ত্রাণ গুদামের জন্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক (বিএবি)-র দুঃস্থদের জন্য ২৬ লাখ ৪৫ হাজার কম্বল গ্রহণ কালে দেয়া ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ৩৭টি বেসরকারি ব্যাংকের কাছ থেকে এই কম্বল গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। মুখ্য সচিব প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের জন্য ১০ লাখ টাকার চেকও গ্রহণ করেন। বিএবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বিভিন্ন ব্যাংক চেয়ারম্যানদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকা দেয়ার পরে কারো করোনা হলে তার হয়তো ক্ষতির পরিমানটা বেশি হবে না, তবে, তার থেকে ছড়াতে পারে, তাই মাস্কটা ব্যবহার করতেই হবে।
তিনি এ ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, সবাইকে সতর্ক করার বিষয়ে প্রচার-প্রচারণাটা দরকার। একটু সতর্ক হলে এই করোনাভাইরাস আর বাংলাদেশের মানুষের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
তিনি এ সময় ব্যাংক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সমগ্র দেশের জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, করোনাভাইরাসকে আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। টিকা সংগ্রহ করে সারাদেশে টিকদান অব্যাহত রয়েছে এবং আজকেও সারাদেশে ৮০ লাখ টিকাদানের কার্যক্রম চলছে। ছাত্র সমাজ এবং স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার প্রস্তুতি তাঁর সরকারের রয়েছে। কেউ বাদ যাবে না, নীতিমালা অনুযায়ী যারা টিকা পাবার যোগ্য বাংলাদেশের সেই সব মানুষই টিকা পাবে এবং আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় নাগাদ আমরা সকল মানুষকেই টিকা দিতে সক্ষম হব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে বিশ^ব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসলেও তাঁর সরকার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশে কোনকিছু যাতে স্থবির না হয় এবং সচল থাকে। সেদিক থেকে আমি মনে করি বাংলাদেশ যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে, বলেন তিনি।
মানুষের দুঃসময়ে সবসময় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ব্যাংক সব সময় এগিয়ে আসেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁদেরকে এবারেও শীতার্ত জনগণের সহায়তায় এগিয়ে আসায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই বড় কথা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন কাজেই এই দেশ উন্নত সমৃদ্ধ হোক, দারিদ্র মুক্ত হোক এবং তৃণমূলের মানুষটির পর্যন্ত যাতে ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
তিনি বলেন, যত বেশি মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে তত বেশি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। নতুন বাজার সৃষ্টি হবে এবং আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াবো এবং বিশ^ দরবারে আমাদের একটা অবস্থান আমরা করে নেব। কারণ, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি কাজেই সবসময় মাথা উঁচু করেই আমরা চলবো।
সরকার প্রধান বলেন, তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পরেই বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেন, যাতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও আরো শক্তিশালী হয় এবং তারা দেশের মানুষের সেবা করতে পারে এবং দেশের মানুষের আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
তাঁর এই পদক্ষেপ দেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রেখে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বন রক্ষায় ডিজিটাল জরিপের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেশের সব বনাঞ্চলের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবিলম্বে ডিজিটাল জরিপ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তিনি এ নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ বৈঠকে যোগ দেন। মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যরা বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ভূমি মন্ত্রনালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয়ের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে অবিলম্বে সব বনের ডিজিটাল জরিপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।” তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বনাঞ্চলের ভেতরে বর্তমানে বসবাসকারী লোকদের স্থায়ী বসতি স্থাপনের জন্য ডিজিটাল জরিপ শেষ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্থানীয় জনগণকে গাছের মালিকানায় অংশীদার করার মাধ্যমে বনায়নে সম্পৃক্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় লোকজনকে বনভূমিতে বনায়নে নিয়োজিত করতে পারলে তারা বনের ক্ষতি করবে না।
টাঙ্গাইলের মদুবনগড়, শেরপুরের গারো পাহাড়, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সুন্দরবনসহ বিভিন্ন বনাঞ্চলে বসবাসকারী অনেক মানুষ বন সংক্রান্ত অনেক মামলায় জড়িয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন, এমনকি একজন ব্যক্তি ৪০ থেকে ৫০ টি মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন।
মামলাগুলোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জনগণকে স্বস্তি দেয়ার স্বার্থে কোনো যৌক্তিক ভিত্তি না থাকা মামলাগুলো পর্যালোচনা করে অবিলম্বে সেগুলো প্রত্যাহার করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। জনগণ যাতে আর এ ধরণের মামলায় জড়াতে না পারে সে জন্য প্রচারণা চালানোর কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রীসভা নীতিগতভাবে ৪৫,০০০-৪৬,০০০ একর জমির (ঢাকা ও টাঙ্গাইল জেলায়) আটিয়া বন রক্ষার জন্য আটিয়া বন (সংরক্ষণ) আইন-২০২১ এর খসড়া অনুমোদন করেছে। ‘আটিয়া বন (সুরক্ষা) অধ্যাদেশ ১৯৮২’ এর স্থলে প্রস্তাবিত আইনটি প্রতিস্থাপিত হবে’ উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আতিয়া বনকে প্রথম ১৯২০ এর দশকে একটি আইনের মাধ্যমে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী বনের ক্ষতি করা জামিন অযোগ্য অপরাধ। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে আটিয়া বনে তারপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বনে ডিজিটাল জরিপ করার কথা বলেন। এছাড়াও মন্ত্রিসভা নীতিগতভাবে কপিরাইট আইন ২০২১ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে, এতে যে কোন কাজের মেধাস্বত্ব অধিকারের মেয়াদ হবে ষাট বছর। মন্ত্রিসভা অবশ্য ড্রাগস অ্যাক্ট ২০২১ এর খসড়া অনুমোদন করেনি বরং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো পর্যালোচনা করতে বলেছে।
অন্যদিকে, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষার্থীদের ১ নভেম্বর থেকে ঢাকায় ১২টি কেন্দ্রে টিকাদান শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ক্যাম্পেইনের অধীনে সারা দেশে কেন্দ্রসংখ্যা বাড়ানোর জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।