বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

নদ-নদী দখলদারদের উচ্ছেদ-পরবর্তী তদারকি করা হয় না

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১

সম্প্রতি বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী শ্যামপুর, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে উচ্ছেদ অভিযানের পর নতুন করে জায়গা দখলে নিয়েছেন বালি ও লোহা ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে উচ্ছেদ-পরবর্তী তদারকি করা হয় না। উদ্ধার অভিযানের পর সংস্থাটির লোকজন উচ্ছেদস্থলে তেমন আসেন না। তারা বলছেন, যদি সংস্থাটি নিয়মিত নদীর ভূমি তদারক করত, তাহলে বারবার দখল-উচ্ছেদ হতো না। এ অবস্থায় অনলাইন নজরদারির বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রাসহ সংশ্লিষ্টরা। অনলাইন নজরদারির বিষয়টি ভালো উদ্যোগ হলেও এটি কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে তার ওপরই ফলাফল নির্ভর করছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, প্রথমত বিআইডব্লিউটিএর একটি শক্তিশালী ও সার্বক্ষণিক নজরদারি টিম থাকা উচিত। এটি যদি অনলাইন হয়, তবে অবশ্যই তা যথাযথ হতে হবে। দেখা গেল ক্যামেরা লাগাল, কিন্তু কয়েকদিন পর চুরি হয়ে গেল। তখন পুরো টাকাই জলে গেল। কিন্তু ক্যামেরার মাধ্যমে যদি শক্তিশালী নজরদারি করা যায়, তাহলে আমি এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) দখলকৃত নদ-নদীর ভূমি উদ্ধারে জোরালো অভিযান শুরু করে। ওই অভিযানে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। পাশাপাশি ঢাকার বাকি দুই নদী শীতলক্ষ্যা ও বালুর দখল-উচ্ছেদের ব্যাপারেও কঠোর অবস্থান নেয় সংস্থাটি। কিন্তু বছর না ঘুরতেই বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার নদ-নদীর উচ্ছেদকৃত ভূমি আবার দখল হতে শুরু করে। কোথাও কোথাও দখলদাররা আগের চেয়েও শক্ত অবস্থান গেড়ে বসে। এ অবস্থায় দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে ঢাকার এ চার নদ-নদী অনলাইন নজরদারির আওতায় আনার কথা ভাবছে বিআইডব্লিউটিএর কর্তাব্যক্তিরা।
তবে নদী দখল-দূষণমুক্ত রাখতে অনলাইন নজরদারির বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব তোলা হয়েছে। প্রস্তাবে নদীতীরের ভূমিজুড়ে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এসব ক্যামেরা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়িত্বরত লোকও থাকবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর ভূমি অনলাইন নজরদারির আওতায় আনা হবে বলেও ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
সূত্রমতে, ঢাকার চার নদ-নদী অনলাইন নজরাদরির আওতায় আনার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত না হলেও এ ব্যাপারে অনেকেই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। বিশেষ করে বছরে বছরে উচ্ছেদ অভিযানে যে ব্যয় হয়, তার চেয়ে অনলাইন নজরদারি বেশ কার্যকর হবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, এতে একদিকে যেমন ব্যয় কমবে, অন্যদিকে দখলদাররাও নজরদারির আওতায় আসবে।
এর আগে দখলকৃত নদীর ভূমি উদ্ধারে অভিযান পরিচালনার সময় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হয়। বিশেষ করে নদীর ভূমি যেন ফের দখল না হয় এজন্য ১০০ বছর মেয়াদি সীমান্ত খুঁটিও গেড়ে দেয় বিআইডব্লিউটিএ। এতে নদীর ভূমি আর দখল করা সম্ভব হবে না বলে সে সময় ঘোষণা দেয় অভিযান-সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বছর না ঘুরতেই পরিস্থিতি আগের রূপ নিতে শুরু করে। অভিযোগ রয়েছে, উচ্ছেদের পর বিআইডব্লিউটিএর তদারকি থাকে না বলেই দখলদাররা ফের ফিরতে পারে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, নদী দখল রোধে আমাদের নিজস্ব টহল টিম আছে। এছাড়া নৌ পুলিশের সহযোগিতাও আমরা নিই। তবে আমাদের নজরদারি আরো আধুনিকায়ন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। এ ব্যাপারে পরিকল্পনাও নেয়া হচ্ছে। অনলাইন নজরদারির বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টির সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ করে যদি দেখা যায় এতে দখল রোধ করা সম্ভব হবে, তাহলে আমরা এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথে এগোব। এক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্যামেরা চুরি যাওয়ার ভয়। সব দিক বিবেচনা করেই এ ব্যাপারে আমরা উদ্যোগী হব। এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না।
নদ-নদী দখলদারদের উচ্ছেদ-পরবর্তী তদারকি করা হয় নাবাংলাদেশে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নদ-নদী দখলের অভিযোগ থাকলে তাকে সব ধরনের নির্বাচনে অযোগ্য করার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সাথে এমন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ না দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একটি রিট মামলায় হাইকোর্ট ঢাকার উত্তরে তুরাগ নদকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি রায়ে এসব নির্দেশনা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাদেশে অবৈধ দখলদাররা প্রভাবশালী এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ক্ষমতা সীমিত। দূষণ এবং অবৈধ দখলের হাত থেকে নদ-নদী, খাল-বিল বা জলাশয় রক্ষায় বিভিন্ন সময় নানান পদক্ষেপের কথা এসেছে। কিন্তু বাস্তবায়ন কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
এবার আদালত সারাদেশে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করে তা জনসমক্ষে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল এবং জলাশয়ের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরির নির্দেশও এসেছে। নদী নিয়ে রিট মামলার পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলছিলেন, অবৈধ দখলদারদের নির্বাচন করার এবং ব্যাংকের ঋণ পাওয়ার অযোগ্য ঘোষণার বিষয়কে তারা মাইলফলক হিসেবে দেখছেন।
তবে তিনি বলেছেন, “নদী রক্ষা কমিশনের ব্যাপারে ২০১৩ সালে যে আইন করা হয়েছে, তাতে কমিশনের হাতে তেমন কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি। কমিশন শুধু সুপারিশ করা ছাড়া কিছু বাস্তবায়ন করতে পারে না।” এখন আদালত তুরাগ নদকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণার পাশাপাশি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে নদ-নদী, খাল-বিল এবং জলাশয়ের আইনগত অভিভাবক হিসেবে ঘোষণা করেছে। সেজন্য আইন সংশোধনের কথাও বলা হয়েছে। গত কয়েকবছরে ( ২০২০ সাল পর্যন্ত) সারা দেশের নদী দখলদারদের মাত্র ৩৩ শতাংশ উচ্ছেদ করা গেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নিজেই বলেছে, প্রত্যাশিত পর্যায়ে উদ্ধারকাজ হয়নি। নানামুখী চাপে অনেক জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান বেশি দূর এগোয়নি। আবার একই অববাহিকা অঞ্চলের সব নদীতে একসঙ্গে অভিযান না হওয়ায় উচ্ছেদের সুফলও আসেনি। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, দখলমুক্ত করার পর অনেক জায়গা ইতিমধ্যে আবারও অবৈধ দখলে চলে গেছে। সেখানে অস্থায়ী স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
এখন পর্যন্ত দেশের আট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে কম উচ্ছেদ হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। আর সবচেয়ে বেশি ঢাকায়। দেশের প্রায় সব নদ-নদীতেই পড়েছে দখলদারদের হাত। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সারা দেশে ৫৭ হাজার ৩৯০ জন অবৈধ দখলদারকে চিহ্নিত করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। গত বছর নদীর জায়গা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়ে গত বছরের ২৭ আগস্ট সব জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় কমিশন। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে সব জেলায় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, তাঁরা একটি প্রতিবেদন সংসদীয় কমিটিতে দিয়েছেন, যাতে নদী দখলের চিত্র কমিটির নজরে আসে, প্রয়োজনে সংসদে আলোচনা করতে পারেন এবং সরকারের আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন। তিনি বলেন, নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে কমিশনের সুপারিশ আছে। তিনি বলেন, করোনাকালে লকডাউনের কারণে পুরোদমে উচ্ছেদকাজ হয়নি। আবার অনেক ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ বা জেলা প্রশাসনের প্রয়োজনীয় লোকবল–সংকট, অর্থ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব আছে। এসব উত্তরণে করণীয় নিয়ে কমিশন চিন্তাভাবনা করছে। তবে পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা বলছেন, নদীর সীমানা চিহ্নিত না করে উচ্ছেদ অভিযান চালালে তা ফলপ্রসূ হয় না। তাই উচ্ছেদ অভিযান শুরুর আগে দরকার উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমানা চিহ্নিত করা।
চলতি মাসে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা দেশে মোট অবৈধ দখলদারের ৩২ দশমিক ৩৭ শতাংশ উচ্ছেদ করা গেছে। সবচেয়ে বেশি অবৈধ উচ্ছেদ হওয়া ঢাকা বিভাগে মোট ৮ হাজার ৫১০ অবৈধ দখলদারের মধ্যে ৬ হাজার ৯৩১ দখলদারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখানে দখল উচ্ছেদের হার ৮১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। চলতি মাসে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা দেশে মোট অবৈধ দখলদারের ৩২ দশমিক ৩৭ শতাংশ উচ্ছেদ করা গেছে। সবচেয়ে বেশি অবৈধ উচ্ছেদ হওয়া ঢাকা বিভাগে মোট ৮ হাজার ৫১০ অবৈধ দখলদারের মধ্যে ৬ হাজার ৯৩১ দখলদারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখানে দখল উচ্ছেদের হার ৮১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। জেলাভিত্তিক হিসাবেও সবচেয়ে বেশি দখলমুক্ত হয়েছে ঢাকা জেলা ও মহানগরীর চারপাশে। এখানে ৯৫৯ জন অবৈধ দখলদারের ৫ হাজার ৭৯৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সবচেয়ে কম উচ্ছেদ হওয়া চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন নদ-নদীতে ১৮ হাজার ৫৩৭ জন দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৩৫১ জনকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে উচ্ছেদের হার ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, বরিশালে উচ্ছেদ হয়েছে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, সিলেটে ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৩৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ, রংপুরে ৩৭ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং খুলনায় উচ্ছেদের হার ৪৬ দশমিক ৭১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে নদী রক্ষায় উচ্ছেদ ও উদ্ধার, পানি ও পরিবেশদূষণ প্রতিরোধের দায়িত্ব দেওয়া হলেও প্রায়োগিক আইনি ক্ষমতা ও প্রয়োজনীয় জনবল, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় জেলা–উপজেলা প্রশাসন, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ওপরই নির্ভর করতে হয়েছে। কালেক্টর, রাজস্ব কর্মকর্তা, বিআইডব্লিউটিএ বা পাউবোÍযারা নদীর জমি ব্যক্তি গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানকে লিজ, দখল হস্তান্তর করেছে, তাদের দ্বারা উচ্ছেদ বা উদ্ধারকাজ শুরু করানো গেলেও প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। কমিশনের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও অবস্থার প্রত্যাশিত পরিবর্তন বা উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয়নি। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কোনো কোনো ক্ষেত্রে নানামুখী চাপের মোকাবিলা ও সীমাবদ্ধতার কারণে বেশি দূর এগোতে পারেনি।
নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নদ–নদীর তীর ও প্লাবনভূমিতে অবৈধভাবে নির্মিত সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদের বাস্তবায়ন ও আইন মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএকে বারবার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু অনেক জেলার নদ-নদীর ক্ষেত্রে তা করা সম্ভব হয়নি। যেমন বুড়িগঙ্গা ও তুরাগে শুরু হলেও নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ও শীতলক্ষ্যায় এমনকি ময়মনসিংহ ও জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র নদেও উচ্ছেদ করা যায়নি। ফলে একই অববাহিকাঞ্চলে নদ–নদীর প্রবাহ পুনরুদ্ধারে এবং ভাটিপথে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও বন্যার পানি দ্রুততার সঙ্গে নেমে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রত্যাশিত পরিবর্তন আসেনি। বরং জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে, যা জনদুর্ভোগ কমাতে বা ভুক্তভোগীদের কষ্ট লাঘব করতে পারেনি। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে নদী উদ্ধারে সমস্যা ও ধীরগতির কারণ চিহ্নিত করতে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সংসদীয় কমিটি। যেসব জায়গা ইতিমধ্যে দখলমুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কয়েকটি প্যাকেজ টেন্ডার হয়েছে। আরও কিছু প্রক্রিয়াধীন আছে। বিআইডব্লিউটিএর হিসাবে প্রায় ৮০ শতাংশ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়েছে।
উচ্ছেদের পর আবার দখল: এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে রাজধানীর চারপাশে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগকে ঘিরে। সরকারদলীয় দুজন সাংসদের দখলে থাকা জায়গাও এখানে উদ্ধার করা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর নদীর সীমানা চিহ্নিত করে পিলার স্থাপনের কাজ চলছে। তবে তুরাগপাড়ে কিছু জায়গা এখন আবার অবৈধ দখলে চলে গেছে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তুরাগ থানার প্রত্যাশা সেতু থেকে ধউর সেতু পর্যন্ত ২২৫টি স্থাপনা উচ্ছেদসহ ৩ দশমিক ৫ একর জায়গা দখলমুক্ত করা হয়। এর অধিকাংশই আবার বেদখল হয়ে গেছে। এর মধ্যে ধউর এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেলের সামনে ও তার আশপাশের এলাকায় নদের জায়গায় আবারও গড়ে উঠেছে বিশাল ট্রাকস্ট্যান্ড। কিছু কিছু অংশে নদ ভরাটের কাজও চলছে। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছিল জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিছুদিন পর সেখানে আবার দোকানপাট বসে। এরপর চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ও ২৪ আগস্ট আরও দুই দফা অভিযান চালানো হয়। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে আবার দোকানপাট গড়ে উঠেছে।
রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় নদের প্রায় ১০ একর জায়গায় গড়ে উঠেছিল স্লুইসগেট নামে একটি কাঁচাবাজার। বাজারটিতে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০টি দোকান ছিল। গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর বাজারটিতে অভিযানে যায় বিআইডব্লিউটিএ। ২৩ ডিসেম্বর অভিযান চালানো হয় ঢাকার আবদুল্লাহপুরের একটি মাছের আড়তে। সেখানেও নদের জায়গায় গড়ে উঠেছিল ৬০০ থেকে ৭০০ দোকান। পরে দুটো বাজার থেকেই এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এখন সেখানে আবার দোকানপাট গড়ে উঠেছে।
নৌপরিবহনমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যেসব জায়গা ইতিমধ্যে দখলমুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কয়েকটি প্যাকেজ টেন্ডার হয়েছে। আরও কিছু প্রক্রিয়াধীন আছে। বিআইডব্লিউটিএর হিসাবে প্রায় ৮০ শতাংশ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়েছে। করোনার কারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে কিছু দোকানপাট, ট্রাকস্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। সেগুলো অস্থায়ী। নারায়ণগঞ্জে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। দীর্ঘদিন ধরে এ জায়গাগুলো অবৈধ দখলে আছে। এর আগে অন্য সরকার উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়নি। এখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সবাইকে বুঝিয়ে, আলাপ–আলোচনা করে কাজ করতে হচ্ছে। অনেকে আদালতেও যাচ্ছেন। তিনি বলেন, তাঁরা সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছেন, যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হন। নদী দখল করে বিদ্যুৎকেন্দ্র, কারখানা: স¤প্রতি নদী রক্ষা কমিশন কয়েকটি নদী পরিদর্শন করে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদের মিলনস্থলের কাছে স্লুইসগেট বন্ধ করে নির্মাণ করা হচ্ছে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। প্লাবনভূমিসহ নদী ও নদীর জায়গা দখল করে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর তীরে সক্রিয় প্লাবনভূমিতে তৈরি হচ্ছে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র। সেখানে নদীর জায়গায় গড়ে উঠেছে ছয়টি হাটবাজার। জামালপুরেও নদীর জায়গা করে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের ১৫ একর জায়গা দখল করে করা হয়েছে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নদীর জায়গা দখল করে দোকানপাট, হাটবাজার, ইটের ভাটা, বসতবাড়ি থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান করা হয়েছে। ইকোনমিক জোন করার জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ নদীর জায়গা ভরাট করছে। নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে শিপইয়ার্ড ও কয়েকটি সিমেন্ট কারখানা। প্রতিবেদনের তথ্য সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, আগে নদীর সীমানা চিহ্নিত না করে যে উচ্ছেদপ্রক্রিয়া, তা ত্রুটিপূর্ণ। এর মাধ্যমে অনেক অবৈধ দখলদার বৈধতা পান। শুরু থেকেই তাঁরা এ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে আসছেন। তাঁরা চান উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আগে সব নদীর সীমানা চিহ্নিত করা হোক। এরপর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদীর জায়গা সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com