রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন

খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দিতে সরকারের প্রতি বিএনপি’র ‍আহ্বান

শাহজাহান সাজু :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২১

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে নেয়ার আবেদন করা হয়েছে, তাকে অবিলম্বে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হোক। অন্যথায় সব দায় দায়িত্ব এই সরকারকে বহন করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চক্রান্তে আজকে তিনি অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে রয়েছেন। আমরা সবাই জানি একটা মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে সাজা দিয়ে প্রথম দিকে একটি পরিত্যাক্ত কারাগারে রাখা হলো। তখন তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। পরে জনগণের চাপে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো, তারও পর করোনা শুরু হলে তাকে বাসায় যাওয়ার অনুমতি দিল। তিনি আজকে অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় সিসিইউতে আছেন।
তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি তিনি প্রথমে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরে দীর্ঘ চার মাস জীবন মরনের সাথে যুদ্ধ করে বাসায় ফিরলেন। তার কিছু দিন পরেই অসুস্থ হলে তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে যখন তিনি বাসায় ফিরলেন মাত্র ছয় দিনের মাথায় তাকে আবারো হাসপাতালে আসতে হলো।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। আমি আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না। গতকাল রাতে প্রথম তিনি সিসিইউতে তার বেড থেকে চেয়ারে বসেছেন। তিনি অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় আছেন। আমরা জানি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার যে ভয়াবহ চক্রান্ত সেই চক্রান্তে তাকে এখন জীবন থেকে সরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে আজকে এই প্রার্থনা করবো যে আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ করেন। শুধু বিএনপির জন্য নয় দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য তাকে আমাদের খুব প্রয়োজন।
খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া চেয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসুন আমরা তার জন্য দোয়া করি। আজকে তার জন্য দোয়া করতে আমরা একটা খোলা জায়গা পাই না। আমরা সভা সমাবেশ করতে জায়গা পাই না। কারণ এই সরকার জানে যে খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে যদি আমরা বাইরে বের হই তাহলে সমস্ত দেশ উজ্জীবিত হবে এবং অনুপ্রাণিত হবে।
তিনি বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, চিকিৎসকরা বলেছেন, তার অনেক ধরনের অসুখের চিকিৎসা প্রয়োজন। এগুলোর সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য এই দেশে সেরকম কোনো হাসপাতাল নেই। যারা মাল্টিডিসিপ্লিনারি রোগের চিকিৎসা করতে পারেন। এজন্য বার বার তার পরিবার থেকে আবেদন করা হয়েছে। অন্তত মানবতার স্বার্থে তাকে বাইরে চিকিৎসা করার সুযোগ দেয়া হোক। আমরা এ বিষয়ে বার বার কথা বলেছি, কিন্তু তাকে সেই চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আজকে যখন তিনি অত্যন্ত অসুস্থ তখন পত্রিকায় দেখছি তার পরিবার থেকে আবারো আবেদন করা হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি অবিলম্বে তাকে বাইরে চিকিৎসা করতে সুযোগ দেয়া হোক। কারণ এই নেত্রী গণতন্ত্রের নেত্রী, তার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সমস্ত দায়-দায়িত্ব এই সরকারকেই বহন করতে হবে। আমরা বলতে চাই, আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, আপনারা মানবতার স্বার্থে তাকে বিদেশে বিকিৎসার সুযোগ করে দেন। দোয়া মাহফিলে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, ডা: সিরাজউদ্দীন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
বেগম খালেদার বিদেশে চিকিৎসার জন্য আবেদন: বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে আবারও তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। স¤প্রতি খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ আবেদন করেন। দুদিন আগে তা আইন মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোমবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে খালেদা জিয়ার ভাই একটি আবেদন করেছেন। গত পরশু সেটা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেই না। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের পর তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়, সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে এলে তারপর তা বাস্তবায়ন হয়।
এদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসনের বোন বেগম সেলিমা ইসলামও খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করার বিষয়টি জানিয়েছেন।
সেলিমা বলেন, এখানে আধুনিক চিকিৎসার সাপোর্ট বা সুবিধার ঘাটতি আছে বলে চিকিৎসকরা তাদের বলেছেন। তিনি বলেন, তার (খালেদা জিয়ার) শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। বুঝতেই পারছেন যে ২৬ দিন হাসপাতালে থেকে আসলো। আবার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই হাসপাতালে যেতে হলো।
খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, তার হিমোগ্লোবিন অনেক কমে গেছে। তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ, হেঁটে চলতে পারছে না। সেজন্যই আমরা বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করতে চাই। সেলিমা যোগ করেন, এখানে তো ডাক্তাররা সেভাবে চিকিৎসা দিতে পারছেন না। কারণ তাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি বা সুবিধা নেই। বিএনপি চেয়ারপারসনের বোন জানান, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রয়োজন, চিকিৎসকরা এখন একটাই পরামর্শ দিচ্ছেন। সেজন্য তাদের ভাইবোনদের পক্ষ থেকে আবারও সরকারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটাই আমাদের আবেদন সরকারের কাছে যে তাকে (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার জন্য যাওয়ার অনুমতি ওনারা (সরকার) যেন দেয়। কোন দেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চায় পরিবার- এই প্রশ্নে সেলিমা ইসলাম বলেন, সিঙ্গাপুর কাছে হবে এবং সেজন্য সিঙ্গাপুরকে তারা অগ্রাধিকার দেন। তিনি আরও বলেন, যে দেশেই অনুমতি মিলবে, সেখানেই তারা নেবেন।
প্রসঙ্গত, দুটি মামলায় দ-প্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দি ছিলেন। নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দ- স্থগিত রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত শনিবার রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এ মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।
একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদ-ের আদেশ দেন একই আদালত। রায়ে সাত বছরের কারাদ- ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদ-ের আদেশ দেন।
গত বছরের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে দ- স্থগিত করে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে সরকার শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। প্রথম দফা মুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে আসলে গত বছরের ২৫ আগস্ট বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে স্থায়ী মুক্তি চেয়ে আবেদন করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দ্বিতীয় দফায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাসের জন্য তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায়। সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ থেকে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়।
এই মেয়াদও শেষ হয়ে আসলে গত সেপ্টেম্বর মাসে শামীম ইস্কান্দার খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার আবেদন করেন। কিন্তু সরকার সেই অনুমতি দেয়নি। বিদেশে যাওয়া যাবে না এবং বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিতে হবে- আগের মতো এই দুটি শর্তে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে তার দ- স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে দেয় সরকার।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com