সমাজে নারী-পুরুষ উভয়েরই প্রয়োজন ও গুরুত্ব রয়েছে। তবে এই দুইয়ের মধ্যে বৈষম্যও রয়েছে। দেশে নারী নির্যাতন দমন আইন ও অধিকার নিশ্চিতের আইন থাকলেও পুরুষ নির্যাতন দমন বিষয়ে কোনো আইন নেই। অথচ ঢালাওভাবে বলা হয়ে থাকে নারী-পুরুষ সমঅধিকার।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, নারী ও পুরুষের আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়ন এবং উভয়ের লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। সেই সঙ্গে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য, অধিকার, সম্মান এবং আইনের সমতা নিশ্চিতে সরকারের প্রতি দাবি করেন তাদের। গতকাল শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘নারী ও পুরুষের মধ্যে সুষম ও উন্নত সম্পর্ক তৈরিতে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বিশ্ব পুরুষ দিবস উপলক্ষে সেমিনারটির আয়োজন করে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন।
এর আগে সকালে বেলুন উড়িয়ে বিশ্ব পুরুষ দিবসের উদ্বোধন করা হয়। এরপর সাড়ে ১০টার দিকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, এখন সবাই নারী নির্যাতনের বিষয়ে কথা বলে, তাদের অধিকারের কথা বলে। কিন্তু পুরুষ নির্যাতন নিয়ে কেউ কথা বলতে চায় না। আমাদের সমাজে শুধু নারীই নির্যাতনের শিকার হয় তা নয়। পুরুষও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কোনো নারী মিথ্যা মামলা (ধর্ষণ, নির্যাতন) করলে পুলিশ পুরুষকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। কিন্তু এসব নারীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে পুরুষের সব যে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, সেটি রুখতে কোনো আইন নেই। দেশে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলাই করা হচ্ছে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে। এর প্রতিকার করতেই পুরুষ নির্যাতন দমন আইন প্রয়োজন।
সেমিনারে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. লিটন মিয়া বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে আইন অনুযায়ী সবাই সমান। কিন্তু বাস্তবে এর মিল নেই। আমরা কোর্টে অনেক সময় দেখি বিভিন্ন মামলায় পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু তার প্রতিকারের কোনো উপায় নেই। বর্তমানে পুরুষ অধিকার রক্ষা ও নির্যাতন দমন আইন করা প্রয়োজন। এটা সময়ের দাবি। এই আইন তৈরি হলে নারী-পুরুষের মধ্যে থাকা অনেক বৈষম্য দূর হয়ে যাবে।
সেমিনারে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের যুগ্ম আহ্বায়ক এম রহমান বলেন- পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ হচ্ছে। সেখানে কয়জন নারী শ্রমিক কাজ করছে? আমরাও সমান অধিকার চাই। নির্মাণ কাজে সমান নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করুক। কিন্তু সবাই মুখে বলে সমান অধিকার। আর কাজে করে অগ্রাধিকারে। সমাজে সমান অধিকারের নামে গোলামির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম বলেন, পুরুষরা নির্যাতনের শিকার হলে তাদের বিচার পাওয়ার সুযোগ নেই। নারী-পুরুষ উভয়ে সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছেন। কিন্তু মামলা হচ্ছে পুরুষের বিরুদ্ধে। তাকে ধর্ষক বানানো হচ্ছে। যদি নারী-পুরুষের সমঅধিকার হয়ে থাকে, তবে অপরাধের শাস্তিও সমান হওয়া দরকার। যারা সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছেন সেখানে নারী-পুরুষ উভয়ই দোষী। শাস্তি দিতে হলে দুজনকেই দেওয়া হোক। কিন্তু তা না করে শুধু পুরুষকেই দোষারোপ করা হচ্ছে, শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, শারীরিক সম্পর্কের পর বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা দেওয়া হচ্ছে। আর যদি বিয়ে করতে চায়, তবে ২০ লাখ টাকা দেনমোহর দাবি করছে। এরপরও বিয়ে করলে ১৫ দিন পর ওই নারী বলছেন, মিল হচ্ছে না আমি তালাক চাই। সবদিকেই পুরুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এজন্য নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করে পুরুষ অধিকার রক্ষায় আইন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহাম্মেদ, ফাউন্ডেশনের আইন উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাওসার হোসেন, নারী আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান প্রমুখ।