কর্মসূচি ঘোষণা
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আগামী ২২ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমদের সমাবেশ। একইসাথে সারা দেশে মহানগর, জেলা এবং উপজেলাগুলোতে সমাবেশ হবে। আমরা আবারো এই দাবি নিয়ে সামনে আসবো। তারপরও যদি না হয় আবারো কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। আর তা না হলে আজকে থেকে আপনাদের পতনের আন্দোলন শুরু হলো। গতকাল শনিবার রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি ও বিদেশের উন্নত চিকিৎসার দাবিতে গণঅনশনে তিনি কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আজকের এ গণঅনশন থেকে সরকারকে পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতে চাই, বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। আর তা না হলে গণঅনশনের মধ্য দিয়ে আজকে আন্দোলন শুরু হলো, সরকার পতনের।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা আমাদের জীবন-মরনের সমস্যা। আমাদের অধিকারের সমস্যা। ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম সে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার সমস্যা।’ ‘খালেদা জিয়া দেশের মাটির সাথে অবিচ্ছেদ্য। আমাদের মা এবং মাটি বলতে খালেদা জিয়াকে বুঝি। এ নেত্রীকে অবশ্যই আমাদের মুক্ত করতে হবে। তার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা প্রস্তুত আছি,’ বলেন তিনি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আসুন দুই হাত তুলে শপথ গ্রহণ করি, দেশনেত্রীকে তার চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। বিএনপি মাহসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আজকে এত অসুস্থ, তিনি আজকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমি ডাক্তারদের সাথে কথা বলেছি বারবার, বিদেশী ডাক্তারদের সাথে কথা বলেছি, তারা বলেছেন বাংলাদেশে যা চিকিৎসা দেয়া সম্ভব এখানে তারা তা দিচ্ছেন, দিয়েছেন। তার কিছু জটিলতা আছে বিদেশে আরো অ্যাডভান্স সেন্টার ট্রিটমেন্ট না হলে তাকে সুস্থ করা যাবে না। তার পরিবার থেকে আবেদন জানানো হয়েছিল তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার জন্য, তারা সে সুযোগ দেয়নি। ফিরিয়ে দিয়েছে। উপরন্তু পার্লামেন্টে সংসদ নেত্রী এমন ভাষায় কথা বলেছেন, যে ভাষা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এবং মিথ্যাচর করেছেন আইনমন্ত্রী। ৪০১ ধারায় সরকারের সম্পূর্ণ অধিকার আছে। এবং এটা তাদের দায়িত্ব। নির্দেশ দিয়ে বিদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে অনশন কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আহমেদ আযম খান, শামসুজ্জামান দুদু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের আহ্বায়ক হাসান জাফির তুহিন সদস্য সচিব শহীদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুল হক খোকন সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
এছাড়াও মিত্র দলের জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার চৌধুরী বুলবুল প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুইবারের বিরোধী দলের নেত্রী ছিলেন। সে কথা বাদ দিলাম, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে সুস্বাস্থ্য তার মৌলিক অধিকার। আজকে তাকে তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এর জবাব সরকারকে দিতে হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশের উন্নত চিকিৎসার দাবিতে গণঅনশনে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, তার চিকিৎসার সুব্যবস্থ্যা নেই। সরকার মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে তাকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। এটা চলতে পারে না। তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাস আপনারা লক্ষ্য করুন, দুনিয়ার কোনো দেশে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম তা সহজ ছিল না। বাংলাদেশকেও এ কথা মনে রাখতে হবে। আমাদের সে সংগ্রামের ভেতর দিয়ে এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্যের ব্যবস্থ্যা করতে হবে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই ফ্যাসিস্ট সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছে না। শান্তিপূর্ণভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের গণঅনশন কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার উপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যাবে। গতকাল শনিবার নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত গণঅনশনে বক্তব্যকালে এ কথা বলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক।
তিনি বলেন, আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে বন্দি। আজ নভেম্বর মাসের ২০ তারিখ। কাল ২১শে নভেম্বর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবস। এ দিবসের প্রতিষ্ঠালগ্নের মহাপুরুষ, মহানায়ক যারা তাদের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। সেই বীর উত্তম জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া আজকে বন্দি। সশস্ত্র বাহিনী দিবসের পূর্বে আমি আবেদন করলাম এই দিবস অসম্পূর্ণ হবে যদি আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে অশ্রদ্ধা করি। আর অশ্রদ্ধার নমুনা তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা করতে দিবেন কি দিবেন না, এটাই আগামী দিনের রাজনীতিকে বিভাজন করবে। আপনি যদি বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা করতে দেন বাংলাদেশের রাজনীতি এক দিকে যাবে। আর যদি চিকিৎসা করতে না দেন তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি আরেক দিকে যাবে। আর যদি অন্যদিকে যায় আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। পৃথিবীর বুকে আপনার যতো বন্ধুই থাকুক তাদের কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, আপনি যখন শতবার বলেন আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, এটা আমাদের জন্য গর্বের বস্তু। সমানভাবে গর্বের বস্তু, সমানভাবে শ্রদ্ধার বস্তু বেগম খালেদা জিয়া শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী। তিনি মুক্তিযোদ্ধা বীর উত্তমের সহধর্মিণী। যিনি বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তার সহধর্মিণী খালেদা জিয়া। তাহলে আজকে কাকে বন্দি রাখা হয়েছে। কাকে চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে, শহীদদের রক্তের সঙ্গে যার নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেই পরিবারের বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, বাংলার ১৬ কোটি মানুষ চায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিদেশে হোক। বর্তমান রাজনৈতিক সরকার দয়া করে খেয়াল রাখুন আপনারা যতো অমানবিক হবেন তার দশগুণ ফেরত যাবে। আর আপনি যদি মানবিক হন তারও দশগুন ফেরত দেব ইনশাল্লাহ। আসুন আমরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সৌজন্যবোধ এবং মানবিকতা ফেরত আনি।
খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না বিএনপি: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন পেশাজীবি নেতারা। গতকাল শনিবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত গণঅনশনে অংশ নিয়ে এ হুমকি দেন তারা। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সাথে শিষ্টাচার বহির্ভূত যে আচরণ করা হয়েছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নাই।
তিনি বলেন, বিখ্যাত দার্শনিক নিউটনের একটি তত্ত্ব মনে করিয়ে দিতে চাই। প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। আপনারা যেটা করছেন তার প্রতিটা ইঞ্চি ইঞ্চি জবাব দেয়া হবে আপনাদের। আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করা পর্যন্ত রাস্তা ছাড়বো না। বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে আবদুল হাই শিকদার বলেন, ভেবোনা গো মা তোমার ছেলেরা হারিয়ে গিয়েছে পথে। তোমার ছেলেরা হারায়নি। আজকে এই অনশনে বিপুল উপস্থিতি। কালকে সকালে যখন লাখ লাখ মানুষ নেমে আসবে তখন সরকারের কি হবে? অতএব সময় থাকতে বিদায় হন।
ডিইউজের বর্তমান সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, আমরা মনে করি বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে গণতন্ত্রকে বন্দী করা হয়েছে। আমরা মনে করি দেশনেত্রীকে বন্দি করা আজকের মানবতাকে বন্দী করা হয়েছে। আমরা মনে করি খালেদা জিয়াকে বন্দি করে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে সমস্ত দায়দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে।
খালেদার চিকিৎসার জন্য গণভবন ঘেরাও করতে প্রস্তুত ছাত্রদল: বিএনপির হাইকমান্ড থেকে ঘোষণা এলে গণভবন ঘেরাও কর্মসূচির জন্যও ছাত্রদল প্রস্তুত বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল। শ্যামল বলেছেন, ‘এ সরকার লুটেরা সরকার। সরকার আমাদের প্রিয় নেত্রীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যে কোনো কর্মসূচি পালনে আমরা সার্বিকভাবে প্রস্তুত আছি। শুধু ঘোষণার অপেক্ষায়।’ গতকাল শনিবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅনশন কর্মসূচিতে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে আজ রাজধানীসহ সারাদেশে এ গণঅনশন কর্মসূচি করছে বিএনপি। ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, ‘স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বলতে চাই, আপনারা যে কোনো সময় একবার শুধু ঘোষণা দেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্রস্তুত আছে, গণভবন ঘেরাও করবো। দেশনেত্রীর মুক্তি ও দেশ বাঁচানোর এ আন্দোলনে আমরা সফল হবো ইনশাল্লাহ।’