ঢাকায় বর্তমানে দৈনিক পানির চাহিদা ২৫০-২৫৫ কোটি লিটার। এর পুরোটাই সরবরাহ করে ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা)। তবে বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কারণে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানির একটা বড় অংশ অপচয় হয়ে যায়। সম্প্রতি প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানির ৪০-৫০ শতাংশ পানিই অপচয় হয়ে যায়। এ হিসেবে বর্তমানে ঢাকায় প্রতিদিন ১০০-১২৫ কোটি লিটার পানি অপচয় হচ্ছে।
‘ওয়াটার ফর দ্য পুওরÍঢাকা’স ওয়াটার ইউটিলিটিস টার্ন অ্যারাউন্ড চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এডিবির প্রতিবেদনে ঢাকায় পানি অপচয়ের পেছনে চারটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথম কারণে বলা হয়েছে পাইপলাইনের ছিদ্রের কথা। এর মধ্যে শনাক্ত না হওয়া ছিদ্রের কথা যেমন বলা হয়েছে, তেমনি শনাক্ত হওয়ার পরও মেরামত না হওয়া পাইপলাইন ছিদ্রের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় কারণে বলা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ ও অপ্রচলিত মিটার ব্যবস্থা এবং মিটারস্বল্পতার কথা, যার কারণে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পানি অপচয় হচ্ছে। তৃতীয় কারণে বলা হয়েছে ব্যাপক হারে পানি তোলার পাম্প ব্যবহারের কথা। আর চতুর্থ কারণে পানির অবৈধ সংযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এডিবির প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ঢাকার পাঁচ হাজার বস্তিতে বসবাস করা প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ওয়াসার অবৈধ সংযোগের পানি ব্যবহার করছে। অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে ব্যবহার হওয়া বিপুল পরিমাণ পানি অপচয়ের তালিকায় চলে যাচ্ছে। পানি অপচয়ের কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে ওয়াসা। প্রতিদিন ঢাকা ওয়াসা যে পরিমাণ পানি সরবরাহ করে, পানির বিল করা হয় তার অর্ধেক পরিমাণের। এ বিলের আবার ৩৮ শতাংশ অনাদায়ী থেকে যায়। এ হিসেবে ঢাকা ওয়াসা প্রতিদিন যত পানি সরবরাহ করে, বিল পায় তার তিন ভাগের এক ভাগ। ঢাকা ওয়াসার বার্ষিক প্রতিবেদনেও পানি অপচয়ের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণে সরবরাহ করা পানির ৪০-৪৫ শতাংশ অপচয় হচ্ছে। অপচয়ের জন্য এডিবি যেসব কারণ চিহ্নিত করেছে, ওয়াসাও সেগুলোকে বড় কারণ হিসেবে দেখছে। পাশাপাশি পানির অপর্যাপ্ত চাপ এবং নি¤œমানের পানিকেই অপচয়ের জন্য দায়ী করছে সংস্থাটি।
ঢাকায় বর্তমানে প্রতিদিন পানির চাহিদা ২৫০ থেকে ২৫৫ কোটি লিটার। বিপরীতে ঢাকার ওয়াসার প্রতিদিন ২৬০ কোটি লিটারের বেশি পানি সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু সরবরাহ করতে গিয়ে প্রায় অর্ধেক পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নগরবাসীর একটা বড় অংশ পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না।
ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, পাইপলাইনগুলোকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা আর অবৈধ সংযোগগুলো বন্ধ বা বৈধ করে দেয়া হলে ঢাকায় পানির অপচয় অনেকটাই কমে আসবে। এ লক্ষ্যে ঢাকা শহরবাসীকে সার্বক্ষণিক নির্ভরযোগ্য পানি সরবরাহ এবং ঢাকা ওয়াসার সেবার মান ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ‘ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে পানি সরবরাহের একটি উন্নত ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি অবৈধ সংযোগের পরিমাণও কমে আসবে বলে জানিয়েছেন তারা। এর বাইরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার পাইপলাইন জরুরি প্রতিস্থাপন, ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্টসহ একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যেগুলোর কাজ শেষ হলে ঢাকার পানি সরবরাহ নেটওয়ার্কের বিদ্যমান সমস্যাগুলো অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। এডিবি ও ঢাকা ওয়াসার বার্ষিক প্রতিবেদনে সরবরাহ করা পানির ৪০ শতাংশের বেশি অপচয়ের কথা বলা হলেও ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলছেন ভিন্ন কথা। তার দাবি, ঢাকা ওয়াসার পানি অপচয়ের পরিমাণ ৫-৭ শতাংশের বেশি নয়। বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বণিক বার্তাকে বলেন, ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বিশ্বমানের। উন্নত দেশগুলোতেও পানি সরবরাহ করতে গিয়ে ২০-২৫ শতাংশ বা তারও বেশি অপচয় হয়। সেদিক দিয়ে আমরা অনেক ভালো অবস্থানে আছি। আমাদের এখানে পানির অপচয় খুবই সামান্য।