বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
শ্রীমঙ্গলে আগাম জাতের আনারসের বাম্পার ফলন, ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি চাষিরা ধনবাড়ীতে ৬ ওষুধ ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা শেরপুরে কানাডা প্রবাসীর জমি বেদখলের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন কালিয়ায় ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তি মেলা বাকাল মোহাম্মাদিয়া জামে মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান বদলগাছীতে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের বাছাই কার্যক্রম নগরকান্দায় সামাজিক সম্প্রীতি সমাবেশ গরমে স্বস্তি দিতে বাগেরহাটে বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি, স্যালাইন ও শরবত বিতরণ বন্দরে যত্রতত্র পার্কিং,জ্যামে নাকাল জনজীবন, মারাত্মক দুর্ঘটনার আশংকা রায়গঞ্জে চার জয়িতার সাফল্য গাঁথা

দেশি মাছের হুমকি ‘সাকার ফিশ’

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১

পুরো নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। অনেকে সাকার ফিশ নামে চেনে। বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকোসটোমাস। অ্যাকুরিয়ামে চাষযোগ্য বিদেশি প্রজাতির এই ক্ষতিকর মাছটি এখন হর হামেশাই দেখা মিলছে ময়মনসিংহের বিভিন্ন নদ-নদী, হাওর ও জলাশয়ে। সম্প্রতি নদ-নদী, পুকুর ও হাওরে পানি বাড়ার পর এই মাছটি ব্যাপকহারে দেখা যাচ্ছে। এর ব্যাপক বিস্তার ঘটলে দেশের মৎস্য খাত হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকরা। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতির সাকার ফিশ ১৬-১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হলেও মাছটি পানি ছাড়াই প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বাঁচতে পারে। মৎস্য আইন ২০১১ অনুযায়ী বাংলাদেশে দেশীয় প্রজাতির মাছের ক্ষতি সাধন হয় এমন যে কোন বিদেশি মাছ চাষ দ-নীয় অপরাধ।
গবেষকরা বলছেন, দ্রুত বংশবিস্তার ও প্রচুর খাদ্য গ্রহণের কারণে জলাশয়ের অন্যান্য মাছ ও প্রাণীর জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে সাকার ফিশ। ইতোমধ্যে এই মাছের কারণে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে মিয়ানমার ও আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশ। তবে বাংলাদেশে দ্রুত বংশ বিস্তারকারী মাছটি কীভাবে উন্মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে তার সঠিক তথ্য দিতে পারছে না কেউই। তবে দেশের মৎস্য খাতকে ধ্বংস করতে এই মাছটি দেশের প্রত্যন্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে কোনও চক্র জড়িত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু এরই মধ্যে জলাশয়ের মাছ চাষিদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মাছ। সাকার মাছ মূলত বাড়ি বা অফিসে রাখা অ্যাকুরিয়ামের শোভাবর্ধন করতো। অনেকে এই মাছটিকে চেনে অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছের ময়লা খেকো মাছ হিসেবে। কারণ শোভাবর্ধনের পাশাপাশি মাছের বর্জ্য এবং অ্যাকুরিয়ামের অন্যান্য ময়লা খেয়ে ফেলে এই মাছ। অনেকে শুরুর দিকে অ্যাকুরিয়াম ফিশ হিসেবে পালন করলেও পরবর্তীতে মাছটি বড় হয়ে গেলে পুকুর বা ডোবায় ছেড়ে দেন। সেখানে মাছটি নতুন পরিবেশে খাপ খেয়ে বংশ বিস্তার শুরু করে। মাছটি খেতে সুস্বাদু না হওয়ায় সাধারণত কেউ মাছটি খায় না এবং বাজারেও মাছটির তেমন চাহিদা নেই।
দেশের শতকরা ২২ ভাগ মাছ উৎপাদন হয় ময়মনসিংহ জেলায়। কিন্তু কয়েকমাস ধরে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জসহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) জলাশয়গুলোতে এই মাছটি ব্যাপকহারে পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি ময়মনসিংহে অবস্থিত মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফিসারিতেও দেখা গেছে এই ক্ষতিকর মাছ। ময়মনসিংহের অনেকই জানিয়েছেন, আগে সবসময় নদী থেকে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছ পাওয়া গেলেও এবার বেশি করে ‘অপরিচিত’ এসব ভয়ঙ্কর ক্যাট ফিশ উঠছে জালে।
বাকৃবির ফিশারিজ অনুষদের মৎস্য খামারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রফেসর ড. একে শাকুর আহম্মদ বলেন, সাকার ফিশ মূলত অ্যাকুরিয়ামে চাষের জন্য বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। তবে এই মাছটি কীভাবে খালে বিলে এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়ে ছড়িয়েছে এর কোনও তথ্য জানা যায়নি। তবে মাছটি নিধন করা না গেলে দেশি প্রজাতির মাছের উৎপাদনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া ক্যাটফিশের দ্রুত বংশবিস্তারের জন্য অনূকূল। এতে জলাশয়ের দেশীয় মাছগুলো এখন হুমকির মুখে পড়ছে। এটি জলাশয়ের একেবারে নিচের স্তরে থাকে। এই মাছ দেশীয় প্রজাতির মাছের সঙ্গে খাবার এবং বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা করে। এগুলো দ্রুত খাবার গ্রহণ ও বংশবিস্তার করে। তাই দ্রুত মাছটি নিধন করা না গেলে মাছ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, শিগগিরই সাকার ফিশ নিধনের ব্যবস্থা করা না হলে রেণু পোনা থেকে শুরু করে বড় মাছের উৎপাদন অনেকাংশে কমে যেতে পারে। ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার বলেন, জেলার বিভিন্ন এলাকায় খাল-বিল ও জলাশয়ে বিদেশি প্রজাতির সাকার ফিস পাওয়ার খবর শুনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত এই মাছ নিধনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com