মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:০৯ অপরাহ্ন

ছাতিম ফুল: যে ফুলের সুবাসে সুবাসিত হয় হেমন্তের রজনী

শ. ই. সরকার জবলু মৌলভীবাজার :
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২১

বাংলাদেশের হেমন্ত ঋতুর রজনীতে চারিদিক সুবাসিত হয় যে ফুলের সুমিষ্ট সুবাসে, সে ফুলের নাম ছাতিম ফুল। বাংলাদেশের প্রকৃতিতে ছাতিম গাছের বিচরণ প্রায় সর্বত্র। সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক ভাষায় এ গাছটি ছাতনি গাছ এবং এ গাছের ফুল ছাতনি ফুল নামে পরিচিত। ছাতিম গাছ ফলাতে হয়না, প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে। তবে, কেউ কেউ শখ করে ছাতিম গাছ ফলায়। বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক বাড়ীতেই একটা না একটা ছাতিম গাছ আছে। রাস্তাঘাট, বাড়ীর সামনে-পিছনে, স্কুল, নদীরঘাট সর্বত্রই কমবেশী ছাতিম গাছের অবস্থান রয়েছে। দেখতে প্রায় সাদা রঙের কিছু কিছু ছাতিম গাছের গায়ে সাদা বর্ণের গোটা থাকে। গাছটির সবুজ বর্ণের লম্বাটে পাতায় থাকে চিরল-চিরল দাগ। ছাতিম গাছ তুলনামূলক অল্পদিনে পুষ্ট ও বেশ সুউচ্চ হয়। বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে অনেক বাড়ীতে পুরানা সুউচ্চ ছাতিম গাছ দেখা যায়। শহরেও কোথাও কোথাও ছাতিম গাছ দেখা যায়। মৌলভীবাজার সার্কিট হাউসে রয়েছে একাধিক ছাতিম গাছ। এখন চলছে হেমন্তকাল। তাই, সার্কিট হাউসের ছাতিম গাছও ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে। কোর্ট রোড দিয়ে যাতায়াতকালে সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রকৃতিপ্রেমি লোকজনকে। ছাতিম কাঠের ওজন কম থাকায় বেশ ভালো আসবাবপত্র তৈরী করা যায়। তবে, সাধারণত এ গাছ জ্বালানী কাঠ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। ষড়ঋতুর বাংলাদেশের প্রকৃতিতে বাংলা কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এ দুইমাস হেমন্ত ঋতু। হেমন্ত ঋতুর আগমন মাসেই ছাতিম গাছে ফুলের কলি বের হয়। কার্তিক মাসের শেষদিকে ঝোটায় ঝোটায় ফুল ফুটতে শুরু করে এবং অগ্রহায়ণ মাসের শেষদিক পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এসময় ছাতিম গাছের পুরো উপরিভাগ ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। ফুলের নিচে ঢাকা পড়ে যায় গাছটির পাতা। সাদা বর্ণের ছোট ছোট ফুলগুলো দেখতে বেশ সুন্দর। হেমন্তের মৃদুমন্দ বাতাসে বাতাসে ঝড়ে পড়া ফুলে গছের নিচ পরিনত হয় ফুলের গালিচায়। তাই, বৃক্ষপ্রেমিরা হেমন্ত ঋতুকে ছাতিম গাছের যৌবনকাল হিসাবে গন্য করেন। ছাতিম ফুল সুবাস ছড়ায় সন্ধার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। বাতাসে ভেসে বেড়ানো ছাতিম ফুলের সুমিষ্ট সুবাসে সুবাসিত হয়ে যায় চারিদিক। দিনের বেলা ছাতিম ফুলের সুবাস থাকেনা। এসময় ঘরে ঘরে মানুষের মাঝে সর্দ্দির প্রকোপ দেখা দেয়। সম্ভবত এ কারণেই গ্রামাঞ্চলে জনশ্রুতি রয়েছে ছাতিম ফুলের সুবাস গ্রহণ করলে মানুষের সর্দ্দি হয়। এভাবে প্রকৃতিতে শোভা বর্ধন করে ছাতিম গাছ। ছাতিম গাছের যৌবনকালের শেষদিকে আগমন ঘটে নতুন ধানের। এসময় নতুন ধানের সোদা সোদা গন্ধ আর ছাতিম ফুলের মোহময় সুবাস মিলেমিশে একাকার হয়ে নব জাগরণের ঢেউ উঠে। প্রকৃতিতে সৃষ্টি হয় এক ভিন্নমাত্রা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com