হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লহি রাজিউন। সোমবার বেলা ১২টার দিকে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। গতকাল সোমবার নুরুল ইসলাম জিহাদীর ছেলে খালেদ বিন নূর নয়া দিগন্তকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানীও খবরটি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে শনিবার রাত ৯টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর পটিয়া থানাধীন কৈয়গ্রাম মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। ওই মাদরাসায় এক বছর শিক্ষকতার পর বাবুনগর মাদরাসায় আহুত হলে সেখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন। এরপর বাবুনগর মাদরাসায় কয়েক বছর অধ্যাপনার পর ঢাকার আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদরাসায় ১৯৮২ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। এ সময়ে তার বাবার মৃত্যুর পর তিনি নিজ বাড়িতে চলে যান ও পুনরায় বাবুনগর মাদরাসায় যোগদান করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ জুলাই তিনি ঢাকা জেলার অন্তর্গত খিলগাঁও-এ আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম প্রতিষ্ঠা করেন। অদ্যাবধি তিনি এই মাদরাসার মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদিস হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। পাশাপাশি তিনি দারুল উলুম হাটহাজারীর মজলিসে শূরা এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা ও আমেলার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ১৯৭৮ সালে ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে তিনি “ইসলামী আন্দোলন পরিষদ” নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার করেছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় ছিদ্দিক আহমদের সাহচর্যে ছিলেন। কাদিয়ানী বিরোধী আন্দোলন ও খতমে নবুয়ত আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশ’র মহাসচিব হন তিনি। পরে ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব নির্বাচিত হন।
হেফাজতের মহাসচিবের ইন্তেকাল, জামায়াতের শোক: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান। গতকাল সোমবার সংবাদমাধ্যমে দেয়া এক বাণীতে তিনি এ শোক প্রকাশ করেন।
শোকবাণীতে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী আজ (সোমবার) দুপুর সোয়া ১২টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। তিনি বাংলাদেশে ইসলামী তাহজীব-তমুদ্দুন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সদা সক্রিয় ছিলেন। ইসলাম বিরোধী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা বলিষ্ট ভূমিকা পালন করেছেন। মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী ঢাকার খিলগাঁও জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখযানুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম ছিলেন। তিনি হাজারো আলেমের উস্তাদ এবং দেশে-বিদেশে তার অসংখ্য ছাত্র রয়েছে। তার ইন্তেকালে জাতি একজন প্রথিতযশা আলেমে দ্বীনকে হারাল। আমরা তার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং তার শোকাহত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, শুধী-শুভাকাঙ্ক্ষী ও দেশে-বিদেশে অবস্থানরত সকল ছাত্রদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। তিনি বলেন, মহান রাব্বুল আলামিন তার সমস্ত গুনাহ-খাতা মাফ করে দিন। তার নেক আমলসমূহ কবুল করে তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মর্যাদা দান করুন।
শিবিরের শোক: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী রাহিমাহুল্লাহর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রিশিবির।
এক যৌথ শোক বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দিন আইউবী ও সেক্রেটারি জেনারেল রাশেদুল ইসলাম বলেন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী রহিমাহুল্লাহ সোমবার বেলা ১২টার দিকে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিঊন। তার ইন্তেকালে জাতি আরো একজন মহান অভিভাবককে হারালো। তিনি নিজে যেমন দ্বীনি জ্ঞানের সাগর ছিলেন তেমনি বাংলার জমিনে লাখ লাখ আলেম তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন। একই সাথে তিনি ছিলেন দল-মত নির্বিশেষে সবার নিকট শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব। তিনি দেশে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের প্রসার, আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধকরণ ও ইসলামবিরোধী সকল কর্মকা-ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন। তিনি চট্টগ্রামে বাবুনগর ও ঢাকার আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদরাসায় অধ্যাপনা করেন। তিনি দারুল উলুম হাটহাজারীর মজলিসে শূরা এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা ও আমেলার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসলাম, দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার রক্ষায় তিনি ছিলেন আজীবন আপোষহীন। ১৯৭৮ সালে ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে তিনি “ইসলামী আন্দোলন পরিষদ” নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কাদিয়ানী বিরোধী আন্দোলন ও খতমে নবুয়াত আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুয়াত বাংলাদেশ’র মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তার কন্ঠস্বর ছিল অত্যন্ত বলিষ্ঠ। জাতির ক্রান্তিকালে তার মতো প্রবীণ আলেমে দ্বীনের ইন্তেকাল হলো। ইসলাম, দেশ ও জনগণের জন্য তার গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আলেম সমাজ ও জাতি চিরকাল মনে রাখবে ইনশা-আল্লাহ। আমরা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রিয় এ আলেমে দ্বীনকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। আমীন।-প্রেস বিজ্ঞপ্তি