রাজধানীর রামপুরায় বাসচাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থী মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয় নিহত হওয়ার ঘটনায় ওই বাসচালকের সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাঁর নাম চান মিয়া। আজ মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে র্যাব তাঁকে আটক করে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রামপুরায় রাস্তা পার হওয়ার সময় দুটি বাসের প্রতিযোগিতায় চাপা পড়ে নিহত হয় দুর্জয়। সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্জয়ের বাবা রামপুরায় একটি চায়ের দোকান চালান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে দুর্জয় সবার ছোট। তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
দুর্জয় নিহত হওয়ার ঘটনার বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও সড়ক আটকে রামপুরায় বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিএএফ শাহীন কলেজ, ইম্পেরিয়াল কলেজ ও একরামুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা সেখানে মানববন্ধন শুরু করে।
বাসে আগুন, চালক আটক: রাজধানীর রামপুরা অনাবিল পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্র নিহতের পর বিক্ষুব্ধ জনতা আটটি বাসে আগুন দিয়েছে। ঘাতক বাসটির চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে রামপুরা ডিআইটি রোডের সোনালী ব্যাংকের কাছে বাস চাপায় নিহত হওয়া ওই ছাত্রের নাম মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয় (১৭)। সে একরামুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সে পরিবারের সাথে পূর্ব রামপুরা তিতাস রোড এলাকায় থাকতো। তার বাবার নাম আব্দুর রহিম। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্জয় একটি বাস থেকে নামার পর পেছন থেকে আরেকটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা প্রথমে দায়ী বাসটিতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর একে একে আরো সাতটি বাসে আগুন দেন তারা। দুর্ঘটনাস্থল থেকে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো: আ: আহাদ জানান, ঘটনার পর চালক পালিয়ে যাচ্ছিলেন। পুলিশ তাকে আটক করেছে। তিনি বর্তমানে থানায় আছেন। বাসটিও জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দফতরের কন্ট্রোল রুমের অপারেটর জিয়াউর রহমান বলেন, বাসচাপায় ছাত্র নিহতের ঘটনায় অন্তত সাত থেকে আটটি বাসে আগুন দেয়া হয়। এ ঘটনায় ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ও পরে আরো একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ২৪ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তানে দক্ষিণ সিটির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান মারা যায়। সে ওই কলেজের মানবিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। এ ঘটনার ঠিক পরদিন অর্থাৎ ২৫ নভেম্বর ডিএনসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় আহসান কবির খান নামে এক ব্যক্তি মারা যান।
এ দুই ঘটনার পর থেকে সড়কে মৃত্যু নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মুখর রাজধানী। শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জমায়েত হয়ে আন্দোলন করছে। এমন পরিস্থিতিতেই রাজধানীর সড়কে আরও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলো।
রামপুরা ব্রিজ অবরোধ করে বিক্ষোভ শিক্ষার্থীদের: রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী মাঈনুদ্দিন নিহতের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করে তারা। এতে ওই এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে। বিক্ষোভের জেরে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। গত সোমবার রাতে রামপুরায় রাস্তা পার হওয়ার সময় দুটি বাসের প্রতিযোগিতায় চাপা পড়ে নিহত হয় মাঈনুদ্দিন। এ ঘটনার জেরে রাতেই বেশ কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। মাঈনুদ্দিন রামপুরার একরামুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাণিজ্য শাখা থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
জানা যায়, গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত রামপুরায় বাবা চায়ের দোকানে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিল মাঈনুদ্দিন। এ সময় রাস্তা পার হতে গেলে নিহত হয় সে। এরপর পথচারীরা মাঈনদ্দিনের ফোন থেকে পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে জানায়। প্রথমে মঈনুদ্দিনের দুলাভাই ঘটনাস্থলে গিয়ে ছিন্নভিন্ন লাশ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর পরিবারের অন্যান্য লোকজন সেখানে পৌঁছায়। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মাঈনুদ্দিন সবার ছোট। বড় ভাই মনির ছোট একটি চাকরি করেন। মূলত সংসার চলে বাবার টিনের ছোট্ট চায়ের দোকানের আয় থেকেই। বড় ভাই ভালো কিছু না করার কারণে এ সংসারের হাল ধরতে চেয়েছিল সে।
দিকে মাঈনুদ্দিন নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে রামপুরা বাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। মধ্যরাত পর্যন্ত এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে দোষীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় ঘাতক বাসের চালককে আটক করা হয়েছে বলে তাৎক্ষণিক জানায় পুলিশ।