ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট জুড়ে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। শনিবার (০৫ ডিসেম্বর) ভোর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সাথে মৃদু বাতাস অব্যাহত রয়েছে। বিকেল পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি বাগেরহাটে। সময় যত যাচ্ছে আবহাওয়া তত খারাপের দিকে যাচ্ছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে গুমোট আকাশের কারণে উপকুলের মানুষের মাঝে ঝড়ের আতংক বিরাজ করছে। শীত ও বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। ঝড়ের খবরে বঙ্গপসাগর ও গভীর সমুদ্রে থাকা নৌযানগুলো উপকূলে আসতে শুরু করেছে। কেউ কেউ সুন্দরবনের মধ্যে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।তবে মোংলা সমুদ্রবন্দরের সকল কাজ স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মোঃ শাহাদাত হোসেন। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ আঘাত হানলে করনীয় বিষয়ে জরুরী সভা করেছে জেলা প্রশাসন। সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ঘূর্নিঝড় জাওয়াদ সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি আরও বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে শীতের তীব্রতাও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরুরী সভা করে জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ঘূর্নিঝড় জাওয়াদ এর প্রভাব থেকে মোকাবেলায় সর্তক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাগেরহাটের শরনখোলা উপজেলার রায়েন্দা এলাকার ভ্যান চালক মো. শাহজামাল বলেন, বৃষ্টি ও শীতের কারনে সকাল থেকে ভ্যান চালাতে পারেনি। বিকেল হয়ে গেছে এক পয়সাও আয় নাই। রাতে কি নিয়ে বাড়ি যাব। জাওয়াদের কথা শোনার পর থেকে আতংকে আছি, কখন যান কি হয়ে যায়। কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের ওসমান আলী বলেন, তিন চার দিন আগে ঘের ছিচেছি মাছ ধরার জন্য। মাছ ধরা শেষে নতুন করে ঘের প্রস্তুতের কাজ করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে সকাল থেকে বৃষ্টিতে,কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ঝড়ের খবরে বঙ্গোপসাগর থেকে ফেরা জেলে ইউনুস আলী বলেন, ঝড়ের খবর শুনে দ্রুত ট্রলার চালিয়ে সকালে লোকালয়ে চলে এসেছি।অন্যান্য জেলেরাও লোকালয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।কেউ কেউ আগেও এসেছে। ভৈরবনদীর পারে বসবাসকারী রওশনারা বেগম নামের এক নারী বলেন, এমনিতেই আমরা নদীর কাছাকাছি বসাবস করি।বণ্যা আসতেছে শুনে আমরা আতংকিত। আকাশে মেঘ তারপর বৃষ্টি। এই ঝড় বণ্যা থেকে আল্লাহ আমাগো রেহাই দেও’। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, মোংলা বন্দরের সকল কাজ স্বাভাবিক রয়েছে। জাহাজ আসতেছে, যাচ্ছে। পন্য বোঝাই ও খালাস হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘ঘর্ণিঝড়’ জাওয়াদের খবর পাওয়ার পর থেকে আমরা ২৪ ঘন্টা মনিটরিং করছি। তবে ঘূর্নিঝড়টি গতি পরিবর্তণ করে উত্তর দিকে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের খবর অনুযায়ী ঘূর্নিঝড়টি নিম্মচাপে রুপ নিয়েছে। তারপরও আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি।‘জাওয়াদ’ যদি গতি পরিবর্তণ করে এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর যদি সিগনাল বৃদ্ধি করে তখন মোংলা বন্দরের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে।আমরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ খোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, গভীর নিম্নচাপটি মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমন্বয়ে দূর্বল হতে পারে। মোংলা সমুদ্রবন্দরসহ সব সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেষ না দেওয়া পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার ট্রলার ও জেলেদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।