হরেক রকম রঙিন ফুলের সাম্রাজ্য গদখালি। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর মুখে নতুন শঙ্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওমিক্রন, যেন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন যশোরের গদখালির ফুলচাষীরা। হঠাৎই করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে শঙ্কিত তারা। গত দুই বছর লকডাউনের কারণে ফুল বিক্রি করতে না পেরে নিঃস্ব হতে চলেছিলেন চাষীরা। কেউ আবার ফুলের আবাদ ছেড়ে অন্য ফসলের আবাদ শুরু করেছিলেন। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় ঘুরে দাঁড়াতে ঋণ নিয়ে নতুন করে শুরু করেছে ফুলের আবাদ। শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রনকে নিয়ে ভয় ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। ধরনটিকে উদ্বেগজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ। ওমিক্রন ২৪টি দেশে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়ালেও বাংলাদেশে কোয়ারেন্টিন শুরু সাতটি দেশের যাত্রীর জন্য।
গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফুলের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। তবে ফুল চাষীদের কাছে বৃষ্টির চেয়ে বড় আতঙ্ক হচ্ছে ওমিক্রন, যা চিন্তার ভাজ ফেলেছে যশোরে ফুল চাষীদের কপালে। সামনের দিবসগুলোতে ফুল বিক্রি নিয়ে সংশয়ে তারা। ২০১৯ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগি শনাক্ত হয়। এরপর ধীরে ধীরে শনাক্তের হার বাড়তে থাকলে লকডাউনের দিকে যায় দেশ। যার প্রভাবে বন্ধ হয়ে যায় সব ধরণের সামাজিক অনুষ্ঠান। থমকে যায় ফুল সেক্টর। বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিতে হয় ক্ষেতের ফুল। করোনায় পরপর দুই বছর ব্যবসায় ধ্বস নামায় পুঁজি সঙ্কটে পড়েন ফুলচাষীরা। করোনা প্রকোপ কিছুটা কমায় ঋণ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। সামনের দিবসগুলোতে ফুল বিক্রি করে ক্ষতি পোষাতে চান চাষীরা।
যশোর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশের জনপদ গদখালী। গদখালী বাজার থেকে পিচ ঢালা রাস্তার ধরে এগিয়ে গেলেই ডানে-বাঁয়ের গ্রামগুলোর দেখা মিলবে দিগন্ত জোড়া ফুলের ক্ষেত। যেদিকে চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে আছে গদখালীর মাঠগুলো। পথের দুই ধারে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিওলাস, গাঁদা, জারবেরা ফুলের ক্ষেত। বাতাসে ফুলের মিষ্টি সৌরভ, মৌমাছির গুঞ্জন। কতই না তার রঙ! লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের এক বিস্তীর্ণ বিছানা যেন বিছিয়ে রেখেছে। মাঠের পর মাঠজুড়ে ফুলের ক্ষেত। চোখ জুড়ানোর পাশাপাশি জুড়িয়ে যায় হৃদয়ও। ফুলই এখানে ফসল। দেশে উৎপাদিত ফুলের ৭০ ভাগ যোগান হয় এখান থেকে। যেখানে গেলে চোখে পড়বে কৃষকদের ব্যস্ততা। কেউ ফুল কেটে বাজারে নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকেই বান্ডিল করে চালান হয়ে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। পুরুষদের পাশে নারীও কাজ করছে ফুলের ক্ষেতে। কেউ ফুল কাটছে, কেউ নিড়ানি দিচ্ছে। ক্ষেতে-ক্ষেতে রঙ বেরঙের ফুল।
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বৃদ্ধিজীবি দিবস, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস , ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন দেশে ফুল উৎপাদনের প্রধান জোন যশোরের গদখালীর চাষীরা। সময়মতো পর্যাপ্ত ফুল পেতে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এ তিন দিবসে দেশের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন তারা। এবার বিক্রি প্রায় অর্ধ কোটি টাকার আশা করছেন তারা। প্রতিদিন চাষী, পাইকার ব্যবসায়ীদেও হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠছে গদখালীর ফুলের বাজার। পাইকারদের কেনা ফুল সকালথেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে স্তুপ করে সাজানো হচ্ছে, পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে ট্রাক-পিকআপ ভ্যান ভরে ফুল যাচ্ছে ।
ফুলচাষী হাফিজা খাতুন হ্যাপি বলেন, ‘সারাদেশে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে যে ফুল বেচা কেনা হয় তার ৭০ শতাংশই যশোরে উৎপাদিত। তবে করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট নিয়ে সংশয়ের কথাও জানান তিনি। বলেন, কোনো কারণে যদি আবার ফুল বেঁচাকেনায় ভাটা পড়ে তাহলে তাদের পথে বসা ছাড়া গতি থাকবে না।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, গত বৃষ্টিতে ফুলের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। ঠা-ায় ফুল ভাল হয়। তবে ফুর চাষীদের কাছে বৃষ্টির চেয়ে বড় আতঙ্ক হচ্ছে করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রন নিয়ে। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে শঙ্কিত তারা। গত দুই বছর লকডাউনের কারণে ফুল বিক্রি করতে না পেরে নিঃস্ব হতে বসেছিল চাষীরা। কেউ আবার ফুলের আবাদ ছেড়ে অন্য ফসলের আবাদ শুরু করেছিলেন। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় ঘুরে দাঁড়াতে ঋণ নিয়ে নতুন করে শুরু করেছে ফুলের আবাদ। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর মুখে নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন চিন্তার ভাজ ফেলেছে তাদের কপালে। সামনের দিবসগুলোতে ফুল বিক্রি নিয়ে সংশয়ে তারা। তিনি বলেন যদি কোন সমস্যা না হয় তাহালে লাভবান হবেন ফুল চাষীরা, এবার ফুলের উৎপাদন, চাহিদা ও দাম সবই বেশ ভালো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস চলতি বছর ঝিকরগাছার গদখালী এলাকায় সাড়ে ছয় শ’হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হবেন ফুল চাষীরা।