আজ ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস- ২০২১ পালন করা হব। গত পাঁচ বছর ধরে এই দিবসটি পালন করা হলেও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণার ১২ বছর উপলক্ষে এবছর ব্যাপক পরিসরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হাতে নেওয়া হয়েছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্জন, উপকৃত সকল জনগণ’- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার দিবসটি পালন করা হচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগা মন্ত্রণালয় দিবসটিতে ফাইভ-জি যুগের ঘোষণা দিবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, আজ ১২ ডিসেম্বর থেকে ফাইভ-জি যুগে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। পৃথিবীর হাতেগোনা কয়েকটি দেশ ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে তাদের একটি হবে। গত বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) এ তথ্য জনান তিনি।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল বিপ্লবে অর্জিত সফলতার ফলে পৃথিবীর অনেক দেশেরই বাংলাদেশের সঙ্গে তাল মেলানোর সুযোগ নেই। বাংলাদেশ আজ ১২ ডিসেম্বর ফাইভ-জি যুগে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রযুক্তিতে পশ্চাৎপদতা অতিক্রম করে কম্পিউটারে বাংলা ভাষা উদ্ভাবন ও প্রয়োগে নেতৃত্ব দিচ্ছে। পৃথিবীতে ডিজিটাল বিপ্লব বাংলাদেশ থেকেই সূচনা হয়েছে।
ছয় স্পটে ফাইভ-জি রবিবার: রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন অপারেটর সংস্থা টেলিটক রাজধানীর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ধানমন্ডি ৩২, বাংলাদেশ সচিবালয়, সংসদ ভবন এলাকা এবং সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকা ও টুঙ্গিপাড়াÍএই ছয় জায়গা ফাইভ-জি কভারেজের আওতায় আনছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। রবিবার (১২ ডিসেম্বর) ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে এই ৬টি স্পটে পরীক্ষণমূলকভাবে চালু হচ্ছে ফাইভ-জি। শনিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। তিনি জানান, পরবর্তী সময়ে টেলিটক ঢাকা শহরের ২০০টি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এ প্রযুক্তি সেবা চালু করবে। আগামী বছর মার্চে বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ নিলামে দেওয়ার পর বেসরকারি তিনটি মোবাইল অপারেটর এই প্রযুক্তি চালু করবে। ২০২২ সালের পর টেলিটক ও বিটিসিএল’র মাধ্যমে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল বিশেষ করে স্পেশাল ইকোনোমিক জোনগুলোতে এই সেবা চালু করার প্রস্তুতির কাজ চলছে। মোস্তফা জব্বার বলেন, আমরা ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় এই প্রযুক্তির প্রথম পরীক্ষা সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছি। আগামীকাল ১২ ডিসেম্বর (রবিবার) পঞ্চম ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে বাংলাদেশ ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা ভাচুর্য়ালি উপস্থিত থেকে এই ঐতিহাসিক যাত্রার শুভ উদ্বোধন করবেন।
তিনি বলেন, উদ্বোধনের এই মাহেন্দ্রক্ষণটি ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত দূরদৃষ্টি কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করছে। ২০২০ সালে বিশ্বের ৬/৭টি দেশ ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালু করতে সক্ষম হয়। মালয়েশিয়া আগামী মার্চে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ-জি চালু করতে যাচ্ছে। আমাদের জন্য অহংকারের বিষয় হচ্ছে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ এখনও ফাইভ-জি যুগে যেতে পারেনি, আমরা যাচ্ছি। মন্ত্রী জানান, ২০১৮ সালে ঘোষিত আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে বাংলাদেশে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ফাইভ-জি চালু করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটক সীমিত পরিসরে ফাইভ-জি চালু করতে যাচ্ছে।
ফাইভ-জি প্রযুক্তি সেবা কেবল গ্রাহকদের জন্য মোবাইল ব্রডব্যান্ড ও ভয়েস কলের প্রযুক্তি নয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আইওটি, রোবোটিক্স, বিগডাটা, ব্লকচেইন, আইওটি, হিউম্যান টু মেশিন, মেশিন টু মেশিন ইত্যাদি প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ক্রিটিক্যাল মিশন সার্ভিস, স্মার্ট গ্রিড, স্মার্ট সিটি, স্মার্ট হোম, স্মার্ট ফ্যাক্টরি সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। ফাইভ-জি প্রযুক্তির সুবিধার কথা বলতে গিয়ে বলা হয়, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল গ্রাহকরা অধিকতর উন্নত ও গুণগত মানের ভয়েস কল ও ফোরজি থেকে বহুগুণ দ্রুত মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে সক্ষম হবে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকায় বসে প্রত্যন্ত অঞ্চলে রোগীর রোবট সার্জারি করা যাবে। ড্রাইভারবিহীন গাড়ি চালানো যাবে, স্মার্ট ফ্যাক্টরি স্থাপনের মাধ্যমে অটোনোমাস উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা যাবে। সংবাদ সম্মেলন আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন প্রমুখ। পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু করা উপলক্ষে পিআইডি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।