চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেছেন, চিত্ত এবং বিত্তের সমন্বয়ে লায়ন্স সদস্যরা গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রচনা করে চলেছেন। অনেকের বিত্ত আছে, কিন্তু চিত্ত নেই। অথচ লায়ন্স ক্লাবের সদস্যদের বিত্তের পাশাপাশি অনন্য চিত্তও রয়েছে। নগরীর নেভি কনভেনশন হলে লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি৪ এর রজতজয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সব বিত্তবানের চিত্ত থাকলে, সেবা করার মানসিকতা থাকলে সমাজ আরো বাসযোগ্য হতো। বিত্ত আর চিত্তের সমন্বয় ঘটাতে পেরেছে বলেই গত একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীর দেশে দেশে লায়নিজমের পতাকা সমুন্নত রয়েছে। ‘বিত্তবানের বোঝা সৃষ্টিকর্তা বয়’ বলে প্রচলিত একটি কথার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, এই কথার মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, বিত্তবানের বোঝা স্রষ্টা এ কারণে কমিয়ে দেন, যাতে তিনি তার প্রতিবেশীর, আত্মীয়ের, সমাজের কিংবা তার দেশের বিত্তহীনদের বোঝা বইতে পারেন। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোকে সহায়তা করা বিত্তবানদের বিধাতা প্রদত্ত দায়িত্ব। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান এবং দ্বিতীয় ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন এমডিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন লায়ন্স ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর লায়ন আল সাদাত দোভাষ। বিশেষ অতিথি ছিলেন গ্যাট এরিয়া লিডার লায়ন নাজমুল হক, ভাইস এরিয়া লিডার লায়ন ওয়াহিদুর রহমান আজাদ, প্রথম ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন শেখ সামশুদ্দীন আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক জেলা গভর্নরদের মধ্যে লায়ন এম আই খান, লায়ন এম এ মালেক, লায়ন শামসুল হক, লায়ন নাজমুল হক চৌধুরী, লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া, লায়ন রফিক আহমেদ, লায়ন ডা. শ্রীপ্রকাশ বিশ্বাস, লায়ন কবির উদ্দীন ভূঁইয়া, লায়ন এস এম শামসুদ্দীন, লায়ন সিরাজুল হক আনসারী, লায়ন মোস্তাক হোসাইন, লায়ন শাহ আলম বাবুল, লায়ন মনজুর আলম মনজু, লায়ন নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, কেবিনেট সেক্রেটারি লায়ন এসএম আশরাফুল আলম আরজু, কেবিনেট ট্রেজারার লায়ন আবু বক্কর সিদ্দিকী, লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫এ৩ এর গভর্নর লায়ন এস কে কামরুল, আইপিডিজি সালিমা রওশন, সাবেক গভর্নর এমএমএ বশর, সেকেন্ড ভাইস গভর্নর ফারহানা বঙ, ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫এ২ এর প্রথম ভাইস গভর্নর ইঞ্জিনিয়ার আবদুল ওহাব, সেকেন্ড ভিডিজি ডা. মোহাম্মদ বশির উল্ল্যাহ, পিডিজি স্বদেশ রঞ্জন সাহা, আবদুল ওহাব সিকদার ও মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সেক্রেটারি লায়ন আবু মোরশেদ। বিকালে রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানের লিও পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। লিও জেলা ৩১৫ বি৪ এর জেলা সভাপতি লিও আফিফা ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন লিও ইরফান উদ্দিন ও লিও দীপান্নিতা চৌধুরী। পবিত্র কুরআন থেকে তেলওয়াত ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া পর্বে মরহুম লায়ন ও লিও বৃন্দের জন্য দোয়া, ভিডিও কন্টেট শো, ট্যালেন্ট শোসহ গুরুত্বপূর্ণ লিও পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন লিও জেলার ভাইস প্রেসিডেন্ট লিও ইরফান মোস্তফা, জেলা সেক্রেটারি লিও আতিক শাহরিয়ার সাদিফ, জেলা জয়েন্ট সেক্রেটারি লিও জাহিদ, জেলা ট্রেজারার লিও ইসমাঈল বিন আজিজ আলভি, জেলা জয়েন্ট ট্রেজারার লিও ওমর ফারুক। একইপর্বে লায়ন জেলা গভর্ণর লায়ন আল সাদাত দোভাষ এর জন্মদিন উপলক্ষে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করেন লিও নেতৃবৃন্দ। এর আগে সকালে ২৫ টি বেলুন ওড়ানোর মধ্য দিয়ে রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়। পরবর্তীতে মূল পর্বে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। ২০ জন গরিব ও অসহায় মানুষকে দেয়া হয় ১০টি রিকশা ও ১০টি ভ্যান। পরে তিনটি অসহায় কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবারের বিয়ে উপলক্ষে দেড় লাখ টাকা করে প্রদান করা হয়। দিনভর ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশে লায়নিজমের জনক মরহুম এম আর সিদ্দিকীকে স্মরণ করে বলেন, বহু আগে থেকে চট্টগ্রামে লায়নিজমের গোড়াপত্তন হলেও আমাদের ডিস্ট্রিক্টের কার্যক্রম শুরু হয় ২৫ বছর আগে। এর আগে চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেটসহ সারা দেশে একটি ডিস্ট্রিক্টের আওতায় লায়নিজম পরিচালিত হতো। বছরের পর বছর ধরে চট্টগ্রামের লায়ন সদস্যরা নিজের অর্থ খরচ করে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। পৃথিবীতে অন্ধত্ব নিবারণে লায়ন্স ক্লাবগুলোর ভূমিকা কিংবদন্তীতুল্য। চট্টগ্রামেও লায়ন সদস্যরা অন্ধত্ব নিবারণে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতেও নানাভাবে কাজ করে লায়ন্স ক্লাবগুলো। অভাবী মানুষগুলোকে খাদ্য সহায়তা, বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা, করোনাকালে চিকিৎসা, করোনা সাপোর্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠাসহ বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালিত হয় লায়ন্স সদস্যদের মাধ্যমে। এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। সমাজের সব সমস্যা লায়ন সদস্যদের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে যেখানে সমস্যা সেখানেই লায়ন সদস্যরা হাত লাগান, সহায়তার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক নির্বাচিত হওয়ায় বিকেলে সাবেক গভর্নর লায়ন মনজুর আলম মনজুকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। রাতে পরিবেশিত হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।