মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

সারে ভর্তুকি ছাড়িয়ে যেতে পারে ২৫ হাজার কোটি টাকা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১

আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরিয়াসহ সব ধরনের সারের দাম গত বছরের তুলনায় এখন প্রায় দ্বিগুণ। বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও বিপণন ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। মূল্যস্ফীতি ও জনসাধারণের ওপর বিরূপ প্রভাবের দিকটি বিবেচনায় রেখেই সবসময় সারের দাম নির্ধারণ করা হয়। সে কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য সহনশীল রাখতে সারে ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও সারে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয় মনে করছে, আগের নিয়ম বহাল থাকলে এবার ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কেবল সারে এ পরিমাণ ভর্তুকি দিলে বাজেট ব্যবস্থাপনায় ভীষণ চাপে পড়তে হবে সরকারকে। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ হলো, ভর্তুকির পরিমাণ আরো বাড়লে সার্বিকভাবে বাজেট ব্যবস্থাপনা জটিল আকার ধারণ করবে। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার এখনই সারের দাম বাড়াবে না।
সারে ভর্তুকির ওপর অর্থ বিভাগের একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, অন্যান্য সারের পাশাপাশি দেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৬ লাখ টন ইউরিয়া সার আমদানি করা হয়। ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ইউরিয়া সারের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য টনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ মার্কিন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করেছে। সে সময় সার বাবদ ভর্তুকির পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কৃষক পর্যায়ে খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি ১২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়। ২০১৩ সালের শুরুর দিকে ইউরিয়ার আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য স্থিতিশীল হতে শুরু করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সে বছরের আগস্টে কৃষক পর্যায়ে খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি ২০ টাকা থেকে কমিয়ে আবার ১৬ টাকা করা হয়।
এরপর ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য স্থিতিশীল থাকায় কৃষক পর্যায়ে খুচরা মূল্য পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়নি। একই সঙ্গে সার বাবদ ভর্তুকির পরিমাণ সহনীয় মাত্রায় রাখা সম্ভব হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের সময় সার বাবদ ভর্তুকির পরিমাণ প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৯ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু গত জুলাই থেকে অক্টোবরে ইউরিয়ার পাশাপাশি টিএসপি ও এমওপি সারের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ। এ মূল্যবৃদ্ধির কারণে আগের নিয়মে ভর্তুকি দেয়া হলে সব ধরনের সার মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ অর্থবছরে গড়ে ইউরিয়ার আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য টনপ্রতি ৭০০ ডলারের মধ্যে থাকবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় আশা করছে। এতে করে শুধু ইউরিয়া সারের জন্য ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, চলতি বাজেটে সারের ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বরাদ্দ থেকে এরই মধ্যে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এছাড়া যে পরিমাণ ভর্তুকি চাহিদা আসছে এবং বিশ্ববাজারের সব ধরনের সারের ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা নিয়ে অর্থ বিভাগ যে প্রাক্কলন করেছে, তাতে করে ভর্তুকির পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ভর্তুকি না দিলে কৃষকরা খারাপ অবস্থায় পড়বেন। এ বিশাল পরিমাণ ভর্তুকি দিলে সরকারের জন্য বাজেট ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়বে। তবে সারের দাম বাড়ানোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, অর্থ সচিবসহ মন্ত্রীর কাছে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে। এরপর সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই বাস্তবায়ন করা হবে।
জানা গেছে, ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ৬৫ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকার ভর্তুকি সহায়তা দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সার বাবদ ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ৫৮ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি ও ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা সারে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে গত ১৩ বছরে শুধু সারেই প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজেট ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে এক অর্থবছরে বরাদ্দের অতিরিক্ত ১৬ হাজার কোটি টাকা দেয়া সম্ভব নয়। আবার সার্বিকভাবে খাদ্য নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে কৃষকদের দিকটাও দেখতে হবে। তাই এক্ষেত্রে সরকারকে একটা ভারসাম্যমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্ববাজারে সারের দাম বাড়ায় ভর্তুকির চাপ বাড়বে। তবে এক অর্থবছরে শুধু সারে ভর্তুকি বরাদ্দের চেয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা বেশি দেয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই। আবার ভর্তুকি না বাড়িয়ে পুরোটা কৃষকের ওপর চাপিয়ে দেয়াটাও ঠিক হবে না। এজন্য হিসাব করতে হবে বাড়তি সারের দামে কৃষকের উৎপাদন খরচ কতটুকু বাড়বে। সে খরচের একটা অংশ ভর্তুকি, একটা অংশ ধানের দাম বাড়িয়ে ও কিছুটা সারের দামে সমন্বয় করার মাধ্যমে একটি মাঝামাঝি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার ধান ক্রয়ে যে মূল্য নির্ধারণ করবে, সেটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে। তাই এবার অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনামাফিক এ কাজগুলো করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন এ অর্থনীতিবিদ। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দাম কমিয়ে ৮০ টাকার টিএসপি সার ২২, ৭০ টাকার এমওপি সার ১৫ ও ৯০ টাকার ডিএপি সার ১৬ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কমানো হয়েছে ডিএপি সারের দাম। আগে এ সারের কেজিপ্রতি মূল্য ছিল ২৫ টাকা। এখন তা ৩৬ শতাংশ কমিয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৩ সালের পর থেকে কৃষকরা ইউরিয়া সার কিনতে পারছেন ১৬ টাকায়। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে এখন সব ধরনের সারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বণিক বার্তাকে বলেন, অর্থ বিভাগ ঠিকই বলছে, এত ভর্তুকি বাড়লে বাজেট ব্যবস্থাপনা খুবই কঠিন হয়ে যাবে। তবে খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে ভর্তুকি যতই বড়ুক, এখনই সরকার সারের দাম বাড়াবে না। বাজেট থেকেই ভর্তুকি সমন্বয় করা হবে। সরকার আরো কিছুদিন সারের দাম পর্যবেক্ষণ করবে। গুজব ছড়িয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে সার বিক্রি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আগামী বোরো মৌসুমের জন্য দেশে সব ধরনের সারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তার পরও সংকটের গুজব ছড়িয়ে কেউ কেউ দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরে ইউরিয়া সারের ৩ লাখ ১ হাজার ৯০২ টন চাহিদার বিপরীতে মজুদ রয়েছে ৮ লাখ ৩২ হাজার টন। অর্থাৎ পাঁচ লাখ টনেরও বেশি উদ্বৃত্ত আছে। এ মাসে টিএসপির চাহিদা ১ লাখ ১৪ হাজার টন, মজুদ রয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার টন। ডিএপির চাহিদা ২ লাখ ৮৮ হাজার ৬১২ টন, এর বিপরীতে মজুদ ৫ লাখ ৯৬ হাজার টন। এমওপির চাহিদা ১ লাখ ২৯ হাজার ১৮৫ টন, মজুদ রয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার টন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় এখন সব রকমের সারই বেশি পরিমাণে মজুদ রয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com