একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর যে সব নেতা মনোনয়ন পাননি তাদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয় থেকে শনিবার (৮ নভেম্বর) ওই সব নেতাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘অন্তত ২৪ প্রার্থী তাদের মনোনয়ন পাননি। এর মধ্যে ৬-৭ জন তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে রাজি হয়েছেন। বাকিরাও চিঠি পাওয়ার পর আগামীকালের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন বলে আশা করি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা এ বিষয়ে ওই নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিঠিতে লিখেছেন, আপনি অবগত আছেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির জন্য প্রায় চার হাজারের অধিক ব্যক্তি মনোনয়নপ্রাপ্ত দাখিল করেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাদের প্রায় সকলেই ত্যাগ ও অবদান রয়েছে। রাজনীতিক ত্যাগ, দক্ষতা, যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার বিচারে প্রায় প্রত্যেকটি আসনেই ছিল একাধিক যোগ্য প্রার্থী। একাধিক আবেদনকারীর মধ্যে থেকে একজনকে প্রার্থী হিসেবে নির্ধারণ করার কাজটি ছিল অত্যন্ত কঠিন ও দুরুহ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড অত্যান্ত সতর্কতার সাথে প্রতিটি আবেদনপত্র প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত এবং মাঠ পর্যায়ে জরিপের ফলাফল পর্যালোচনা করে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে।
‘আমাদের সংগঠনের মনোনয়ন প্রদানের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া ও সংসদীয় বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে মনোনয়ন দিতে না পারায় আমি আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী ও কল্যাণমুখী রাজনৈতিক দলে পরিণত করার কাছে আপনার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও দেশের কল্যাণে আপনার নিরবিচ্ছিন্ন ভূমিকার জন্য আপনাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশ ও প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি আপনার ভালবাসা-আনুগ্যতা-বিশ্বস্ততা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামাতের হিংস্র থাবা থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে বাংলাদেশের টেকসই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই কারণে আমরা সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে জোট বদ্ধ ভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আপনার কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে আপনার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে মহাজোট কে বিজয়ী করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন। আপনার শ্রম আন্তরিকতা সব কিছুই আমার বিবেচনায় আছে।’
‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের জনপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে আবারোও বাংলাদেশের জনগণের সেবা করার সুযোগ পাবে। সেই বিজয়ে অংশীদার হবেন আপনিও। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবন্ধ থাকে, তাহলে নৌকা মার্কাকে পরাজিত করার সাংগঠনিক শক্তি আর কারো নেই’ বলেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আশা করি, আগামী নির্বাচনে আপনার নির্বাচনী এলাকার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও মহাজোটের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে আপনার সকল সাংগঠনিক দক্ষতা, শক্তি-ও সামর্থ্য আওয়ামী লীগের বিজয়ীকে সুনিশ্চিত করবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ গত এক দশকের অর্জিত উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সংগঠনটির একজন আদর্শবান, ত্যাগী ও বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে সর্বস্তরের নেতাকর্মী সমর্থক এ নিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচার ও প্রচারণা ও সার্বিক কর্মকাণ্ডে আপনার সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্ত ভাবে প্রত্যাশা করছি।’
খবরপত্র/এমআই