ষড়যন্ত্র, অপকৌশল ও অপপ্রচারের রাজনীতি পরিত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঠিক ও সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, সমগ্র জাতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যুগপৎভাবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ‘মুজিববর্ষ’ মহাআড়ম্বরে উদযাপন করেছে। এমন একটি ক্ষণে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে কোনো প্রকার ইতিবাচক রাজনৈতিক কর্মসূচি তুলে না ধরে চিরাচরিতভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাকর।
ওবায়দুল কাদের গতকাল রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি এখন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নযাত্রা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যে বাংলাদেশ এক সময় বৈদেশিক ঋণ ছাড়া কোনো প্রকল্প গ্রহণ করতে পারতো না, সেই বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে নিজেদের সক্ষমতার জানান দিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ডিজিপিতে প্রথম স্থান অধিকারের অনন্য মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ব সভায় বাংলাদেশ যখন প্রশংসা ও সমীহ অর্জন করছে তখন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির প্রতিভূ বিএনপি নেতৃবৃন্দ নেতিবাচক মন্তব্য করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মাইলফলক স্পর্শকারী বাংলাদেশের অসংখ্য প্রাপ্তি বিএনপি নেতাদের চোখে পড়ে না। বাংলাদেশের অগ্রগতিতে জাতিদ্রোহী-দেশদ্রোহীদের যেমন গাত্রদাহ হয় ঠিক তেমনি দলটির নেতাদেরও সহ্য হয় না। রাজনৈতিক হীনমন্যতার কারণে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অর্জিত সাফল্যে বিচলিত হয়ে পড়ে দলটি। দেশের সাফল্যকে তারা নিজেদের পরাজয় মনে করে। এমনকি সত্যকে স্বীকার করার সাহস পর্যন্ত রাখে না।
তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাধীনতার ৫০ বছরে কোনো প্রাপ্তি খুঁজে পাননি! মির্জা ফখরুলের এই না পাওয়ার মর্মবেদনার উৎসমূল সম্পর্কে আমরা উপলব্ধি করতে পারি। দেশবাসী জানে, স্বাধীনতাবিরোধী যে অপশক্তি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে এদেশের মানুষের উপর গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাট চালিয়েছিল এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও তাদের স্বপ্নের পাকিস্তান পুনরুদ্ধারের চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। সেই পরাজিত অপশক্তি ও তাদের উত্তরাধিকারীদের ষড়যন্ত্রের হিসাব আজ অসার শূন্যতায় পর্যবসিত হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার জিয়া-মোশতাকের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালিত করার যে গভীর পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির উত্তরাধিকার এবং একাত্তরের ঘাতক-যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি ও তাদের নেতা মির্জা ফখরুল ইসলামের এই হতাশা ও মর্মবেদনাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ বিকাশের প্রধান অন্তরায়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়ি দাপিয়ে বিএনপি নেতারা সিলেট গমন করলেন। অথচ প্রশস্ত এই মহাসড়কের দুপাশের উর্বর সবুজ প্রান্তর এবং বদলে যাওয়া উন্নত জনপদ তাদের চোখে পড়ে না। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, সাবমেরিন, এলএনজি টার্মিনাল, চার ও আট লাইনের অত্যাধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে, নিত্য নতুন মহাসড়ক ও সেতু, নতুন নতুন রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন, উড়াল সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ, উপবৃত্তি ও শিক্ষাবৃত্তি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় দারিদ্র বিমোচন, গৃহহীনদের জন্য বিনামূল্যে জমি ও গৃহ প্রদান, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিনামূল্যে করোনা টিকা প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টিসহ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মাইলফলক স্পর্শকারী বাংলাদেশের অসংখ্য প্রাপ্তি বিএনপি নেতাদের চোখে পড়ে না।
তিনি বলেন, বিএনপি নামক যে দলটি মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অপরাজনীতিতে লিপ্ত, যারা ত্রিশ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে তাদের কাছ থেকে ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে কোনো প্রাপ্তি খুঁজে পাইনি’ এ ধরনের মন্তব্যই স্বাভাবিক।