দেশি হাঁস পালন করে চরফ্যাশনের প্রায় ২শতাধীক বেকার উদ্যোক্তা এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। নিজ বাড়ির আঙ্গিনা, পতিত জায়গা কিংবা মাছের ঘের অথবা পুকুর জলাশয়ে বাণিজ্যিকভাবে এ হাঁস পালন করছেন বেকার যুবক ও দরীদ্র নারীরা। হাঁসের এসব খামার গড়ে ওঠায় উপজেলার অনেক বেকার ছেলে মেয়ে এখন দেশি হাঁসের খামারে ঝুঁকছেন এবং করছেন বিনিয়োগ। বিভিন্ন এনজিও, মাল্টিপারপাস বা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বেকার যুবক ও দরীদ্র নারীরা গড়ে তুলেছে প্রায় ২শতাধীক হাঁসের খামার। তবে প্রশিক্ষণে পরামর্শ বা কারিগরী সহযোগীতা ও ভালো চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় উপজেলা প্রাণী সম্পদ দফতরের বিরুদ্ধে একাধীক উদ্যোক্তা অভিযোগ করেন। উপজেলার আবদুল্লাহপুর,এওয়াজপুর, আমিনাবাদ, মাদ্রাজ, হাজারীগঞ্জ, জাহানপুর, নজরুল নগরসহ চরকলমী এবং কুকরি-মুকরী ইউনিয়নে ছোট-বড় এ দেশি হাঁসের খামারগুলো গড়ে উঠেছে। শীতে অধীক হারে হাঁসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হাটবাজারে এ হাঁস ও ডিম বিক্রী করে চড়া দাম পাচ্ছেন খামারীরা। মাদ্রাজ ইউনিয়নের খামারী মোজম্মেল হক বলেন, আমি দীর্ঘ ৫বছর বিদেশে শ্রমীক হিসেবে কাজ করেছি। বিদেশি কর্মস্থলে পরিশ্রম করে যে টাকা পাইনি তা দুই বছরেই হাঁস পালন করে কামিয়েছি। আমাদের দেশের বেকার ছেলে মেয়েদের মধ্যে অনেকেই চাকুরী না পেয়ে হতাসাগ্রস্থ হচ্ছে। আবার কেউ কেউ মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে। আমি বলতে চাই তাঁরা যেন পারিবারিক ব্যবসা বা চাষাবাদের পাশাপাশি হাঁস,মুরগী পালন অথবা মাছের চাষ করে। তিনি আরও বলেন,আমি প্রথমে পৌনে দুই একর জমিতে পুকর খনন করে মাছ চাষের পাশাপাশি ৫শতাধীক হাঁস পালন করি। মুনাফা ভালো হওয়ায় অল্প সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবারও বিনিয়োগ করি। এখন আমার খামারে মাছের পাশাপাশি প্রায় ১৫শ হাঁস রয়েছে। বাজারে ডিমের পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে পাইকারদের কাছে হাঁস বিক্রয় করে অধীক মুনাফা পাচ্ছি। আরেক খামারী তরুন উদ্যোক্তা সাবিনা ইসলাম বলেন, আমি একটি মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি) পাশ করেছি। আমার বাবা একজন কৃষক। বাড়িতে বেকার থাকা অবস্থায় আমার এক আত্মীয়ের পরামর্শে আমাদের ঘরে থাকা ১০টি হাঁস পালন করি। পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিবেশিদের কাছ থেকে প্রায় ৫০টি হাসের বাচ্ছা কিনে আমি তা পালন করি। এখন বাড়ির উঠোনে মা ও ছোট ভাইয়ের সহযোগীতায় জালের বেড়া তৈরী করে প্রায় ৫শতাধীক হাঁস পালন করছি। প্রতিদিন ২শতাধীক ডিম বাজারে বিক্রয় করে আমদের সংসারে সহযোগীতা করছি। চর কলমী ইউনিয়নের প্রবাশি সামসুদ্দিন হাওলাদার বলেন, দেশে একসময় স-মিলে গাছ কাটার কাজ করেছি। অনেক কষ্ট করে দুইবার ওমানে গিয়ে ফেরত আসি। আমার বেকারত্বেও মধ্যেও ছেলে মেয়েকে লেখা পড়া করিয়েছি। ছেলেটা এখন কলেজে পড়ছে। তাকে বাড়ির পুকুরে মাচা তৈরী করে হাঁস পালনের ঘর তৈরী করে দিয়েছি। ছেলে ও তাঁর মায়ের সহায়তায় আমাদের খামারে এখন এক হাজার হাঁস রয়েছে। হাঁস ও ডিম বিক্রয় করে অনেক টাকা জমিয়েছি। তাকে প্রথমে হাঁসের ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন জটিলতায় পড়তে হয় বলেও জানান তিনি। জাহানপুর ইউনিয়নের জামাল মুন্সি বলেন, আমার খামারে ২হাজার হাঁস রয়েছে। প্রতিদিন খালে বিলে হাঁস ছেড়ে দেই। কম পরিচর্যায় শামুক ও গুল্ম লতাপাতা ছাড়াও পুকুর জলাশয়ের প্রাকৃতিক খাবার খায় হাঁসগুলো। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ দফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের তালিকা অনুযায়ী চরফ্যাশনে ১৬০টি হাসের খামার রয়েছে। বেকার যুবক ও দরীদ্র নারীদের হাঁস পালনে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ করণে পরামর্শ ও মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা,ভ্যাকসীন দেয়া হচ্ছে এবং খামারী সাবিনা ইসলাম বলেন শীতের মৌসুমে অত্র এলাকায় হাসঁপাটি চলে। তাহাতে হাসেঁর ভাল দাম পাওয়া যায়।