মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের আমানত: বেসরকারি খাতেরই অবদান বেশি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান চার ব্যাংকের মোট আমানত ছিল ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা। এ আমানতের ২ লাখ ১২ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকাই ছিল বেসরকারি। আর সরকারি আমানত ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার ১০২ কোটি টাকা। সে হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকে সরকারি আমানতের অংশ ৪৫ শতাংশে নেমে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরেই দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের আমানতের প্রধান উৎস ছিল সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের আমানতের ওপর নির্ভর করেই এতদিন কার্যক্রম পরিচালনা করে এসেছে ব্যাংকগুলো। তবে করোনাকালে ব্যাংক চারটির আমানতের প্রধান উৎস বদলে গিয়েছে। সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের মোট আমানতে এখন বেসরকারি খাতেরই অবদান বেশি। গত অক্টোবরের শেষে ব্যাংক চারটিতে মোট আমানতের ৫৫ শতাংশই ছিল বেসরকারি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় দেশের বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থার ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহকরা এখন আমানতের সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককেই বেশি নিরাপদ মনে করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যাংকগুলোয় এখন বেসরকারি আমানত বাড়ছে। আবার আমানতের দিক থেকে এসব ব্যাংকের একে অন্যকে ছাড়ানোর প্রতিযোগিতাও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। করোনাকালে বেসরকারি অনেক ব্যাংকের চেয়ে বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি দেশের ব্যাংক খাতের গড় আমানত প্রবৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। অক্টোবর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের আমানত ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। এ আমানতের ৬৩ দশমিক ৪৮ শতাংশই ছিল বেসরকারি খাতের, যার পরিমাণ ছিল ৮২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বৃহত্তম ব্যাংকটিতে সরকারি আমানতের পরিমাণ ৪৭ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। করোনা শুরুর আগে ২০১৯ সালের শেষে সোনালী ব্যাংকের মোট আমানত ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।
বর্তমানে ব্যাংকটির আমানত ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে বলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান জানিয়েছেন। সে হিসেবে করোনাকালের দুই বছরে সোনালী ব্যাংকের আমানত বেড়েছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে ব্যাংকটিতে সরকারি আমানতের তুলনায় বেসরকারি আমানত বেশি এসেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সেবার মান বাড়ায় বেসরকারি খাতের আমানত বাড়ছে বলে মনে করেন মো. আতাউর রহমান প্রধান। সোনালী ব্যাংকের এ শীর্ষ নির্বাহী বলেন, দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো প্রযুক্তির দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরের চেষ্টায় সোনালীসহ অন্য সরকারি ব্যাংকগুলোর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হয়েছে। বেসরকারি খাতের বড় করপোরেটগুলোও এখন সোনালী ব্যাংকে সেবা নিতে আসছে। সাধারণ মানুষও আগের তুলনায় অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে আমাদের ব্যাংকে লেনদেন করতে পারছেন। আগামীতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সেবার মান ও পরিধি আরো বেশি সমৃদ্ধ হবে মনে করছেন তিনি।
রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের দ্বিতীয় বৃহৎ ব্যাংক হলো জনতা। অক্টোবরে দেশের চতুর্থ ব্যাংক হিসেবে ১ লাখ কোটি টাকা আমানতের ব্যাংক হয়ে উঠেছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে ওই মাসের শেষে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ সামান্য কমে দাঁড়ায় ৯৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকায়। এ আমানতের প্রায় ৫২ শতাংশই ছিল বেসরকারি খাতের, যার পরিমাণ ৫১ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির হাতে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার আমানত আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, গত কয়েক বছরে জনতা ব্যাংককে আধুনিক ব্যাংক হিসেবে রূপান্তরের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। মানুষ ব্যাংকে এসে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেবা পাচ্ছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে জনতা ব্যাংকের জনপ্রিয়তা আগের তুলনায় বেড়েছে। দেশের বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো জনতা ব্যাংকের গ্রাহক হচ্ছে। এ কারণে সরকারি আমানতের তুলনায় বেসরকারি আমানতের প্রবৃদ্ধি বেশি। জনতা ব্যাংকের শাখা দেশের প্রত্যন্ত অ লেও বিস্তৃত। ওই শাখাগুলোয় আগের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ আমানত জমা রাখছে।
আমানতের দিক থেকে জনতা ব্যাংককে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল অগ্রণী ব্যাংক। এজন্য ব্যাংকটি থেকে রেমিট্যান্সে সরকার ঘোষিত ২ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি অতিরিক্ত আরো ১ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হয়। দেশের বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাড়তি সুদে আমানত সংগ্রহ করে ব্যাংকটি। একই সঙ্গে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ছেড়ে দেয়া আমানতও বাড়তি সুদে সংগ্রহ করতে থাকে ব্যাংকটি। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের জুনেই ১ লাখ কোটি টাকা আমানতের ক্লাবে ঢুকে যায় অগ্রণী ব্যাংক। অক্টোবর শেষে ব্যাংকটির হাতে মোট আমানত ছিল ১ লাখ ৭৯ কোটি টাকা। এ আমানতের ৫৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ ছিল বেসরকারি খাতের।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকে সরকারির তুলনায় বেসরকারি আমানত বেশি হলেও রূপালী ব্যাংকের পরিস্থিতি ভিন্ন। অক্টোবর শেষে ব্যাংকটির হাতে থাকা ৫৬ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা আমানতের মধ্যে মাত্র ৩৭ শতাংশ ছিল বেসরকারি। রূপালী ব্যাংকের আমানতের ৬৩ শতাংশই সরকারি খাতের।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস-উল-ইসলাম ও রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ্ আল্ মাসুদ বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে বেসরকারি আমানতের পরিমাণ সরকারি আমানতকে ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২০ সালের অক্টোবরে দেশের ব্যাংক খাতে মোট তলবি ও মেয়াদি আমানত ছিল ১২ লাখ ৫১ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা। চলতি বছরের অক্টোবরে মোট আমানতের পরিমাণ ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সে হিসেবে এক বছরে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকার। আমানতের প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১১ শতাংশ।
এ বিষয়ে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা বলেন, গত কয়েক বছরে রূপালী ব্যাংকে বেসরকারি আমানত ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। তবে করোনাকালে ঋণ-আমানত অনুপাত (এডি রেশিও) কমাতে উচ্চসুদের আমানত ছেড়ে দেয়া হয়েছে, যার উল্লেখযোগ্য অংশই ছিল বেসরকারি। এ কারণে রূপালী ব্যাংকে সরকারি আমানত বেশি দেখাচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com