শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১২:৩৭ অপরাহ্ন

মালদ্বীপে সঙ্গে ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’য় পিটিএর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

বাসস:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহের সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সংযোগের উন্নয়নে ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেছেন। এখানে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় সংলাপ, মালদ্বীপ সরকারের কাছে ১৩টি সামরিক যান হস্তান্তর এবং বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করার পরে তিনি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সংযোগ উন্নয়নের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট সলিহের সাথে বিশদ আলোচনা করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংলাপের সময় তারা দুই দেশের মধ্যে বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, যুব ও ক্রীড়া, মৎস্য ও কৃষি খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট সলিহের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনাকালে শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) এবং পারস্পরিক বিনিয়োগ সুবিধার জন্য একটি দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর পুনরায় জোর দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, আমরা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে এখনো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি।’
আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি একথা জানাতে পেরে আনন্দিত যে আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয়ে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি। আমরা আমাদের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তগুলোতে এ পর্যন্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি এবং ফলাফল সন্তোষজনক পেয়েছি।’ তিনি বলেন, তারা বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতা, একে অপরের প্রার্থীদের সমর্থন এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী দুদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি আধুনিক, সমৃদ্ধ ও উন্নত অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হওয়ার মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণে ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ার অপেক্ষায় রয়েছে এমন পরিপ্রেক্ষিতে তারা আমাদের দু’দেশের জনগণের সুবিধার জন্য মালদ্বীপের সাথে বাংলাদেশের অভিন্নতার ক্ষেত্রসমূহে অংশীদারিত্বে আগ্রহী।
বাংলাদেশের বর্ধমান উৎপাদন ক্ষমতার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে মালদ্বীপে অনেক মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহের প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত সন্তুষ্টির বিষয় যে বাংলাদেশ থেকে স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের নিয়োগের জন্য মালদ্বীপের প্রস্তাব বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘আমরা মালদ্বীপের ছাত্রদের জন্য বিশেষায়িত ¯œাতকোত্তর মেডিকেল কোর্সের সুযোগ তৈরি করবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলার ফ্লাইট শুরুর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও ঢাকা-মালে’র মধ্যে ফ্লাইট চালু করার কথা ভাবছে। আমরা আশা করি, সরাসরি ফ্লাইটের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে যোগাযোগ এবং পর্যটন সহযোগিতার আদান-প্রদান বৃদ্ধি পাবে। আমরা একটি সরাসরি শিপিং লাইন স্থাপনের সম্ভাবনাও পর্যালোচনা করেছি।’
তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের নিজেদের জনগণের কল্যাণ আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার, সেহেতু কনস্যুলার এবং কমিউনিটির সমস্যাগুলো আমাদের আলোচনায় বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা অনথিভুক্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়মিতকরণের বিষয়েও আলোচনা করেছেন, যাদের উভয় দেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতি উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার মালদ্বীপের নাগরিকদের জন্য আগমনের পর ভিসা ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে এলেও মালদ্বীপে এটি তার প্রথম দ্বিপক্ষীয়ক সফর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সাল বাংলাদেশ-মালদ্বীপ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য একটি যুগান্তকারী বছর।
প্রধানমন্ত্রী চলতি বছরের মার্চ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে দুটি মেগা ইভেন্ট উদযাপনে প্রেসিডেন্ট সলিহের উপস্থিত থাকার কথাও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
বাংলাদেশ-মালদ্বীপ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে ৩টি চুক্তি সই: বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দ্বৈত কর পরিহার, বন্দি বিনিময়, এবং যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ’র মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে উভয় নেতার উপস্থিতিতে সকালে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
দ্বৈত কর পরিহার চুক্তিসহ বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা ও চিকিৎসা বিজ্ঞান (নবায়ন) সমঝোতা স্মারক এবং উভয় দেশের যুব ও ক্রীড়া উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে মালদ্বীপকে ১৩টি সামরিক যান উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী মালেতে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে পৌঁছালে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেন। এ সময় শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার প্রদান ও গান স্যালুট দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী উভয় দেশের ‘লাইন অব প্রেজেন্টেশন’ ও পরিদর্শন করেন। শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে রক্ষিত দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন এবং সেখানে ফটো সেশনে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী গত বুধবার বিকেলে (২২ ডিসেম্বর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি বিশেষ ফ্লাইটে প্রথমবারের মতো ছয় দিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে মালদ্বীপের রাজধানী মালে পৌঁছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে মালদ্বীপে লাল গালিচা সংবর্ধনা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহের আমন্ত্রণে প্রথম ছয়দিনব্যাপী দ্বিপক্ষীয় সফরে গত বুধবার মালদ্বীপে পৌঁছলে তাঁকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. ইহসানুল করিম বাসসকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইট স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধানমন্ত্রীকে বিমান বন্দরে মালদ্বীপের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অভ্যর্থনা জানান। তাঁকে এ সময় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পরে একটি আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে তাঁকে তাঁর অবস্থানস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়।
গতকাল ২৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ। এ সময় বাংলাদেশের সরকার প্রধানকে গার্ড অব অনার ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা প্রদান করা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রয়েছেন।
এর আগে গত বুধবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করে। শেখ হাসিনার মালদ্বীপ সফরকালে ২৩ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বন্দী বিনিময় এবং দ্বৈত কর পরিহারসহ দু’টি চুক্তি ও দু’টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে।
প্রস্তাবিত চুক্তিগুলো হচ্ছে- দ্বৈত কর পরিহার, বন্দী বিনিময়, এবং দু’টি সমঝোতা স্মারকসহ চারটি চুক্তি সই হবে। সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা ও চিকিৎসা বিজ্ঞান (নবায়ন) এবং দু’দেশের যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রের উন্নয়নে সহযোগিতা। এছাড়া, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ চুক্তি নবায়ন করা হবে। সফরকালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ দু’টির মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশ মালদ্বীপকে ১৩টি সামরিক যান উপহার দেবে। আগামী ২৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বি-পক্ষীয় আলোচনা করবেন। বৈঠক শেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে দু’দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। পরে দু’নেতা গণমাধ্যমের সামনে যৌথ বিবৃতি দিবেন।
সফরকালে মালের হোটেল জিনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসিম, পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ নাশিদ এবং সে দেশের প্রধান বিচারপতি উজ আহমেদ মুতাসিম আদনান সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। শেখ হাসিনা ২৩ ডিসেম্বর বিকেলে মালদ্বীপের পার্লামেন্টে ভাষণ দেন।
সন্ধায় মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ও সে দেশের ফাস্ট লেডি আয়োজিত রাষ্ট্রীয় ভোজ সভায় যোগ দিবেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা আজ ২৪ ডিসেম্বর মালেতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া সংবর্ধনায় ভার্চুয়ালি যোগ দিবেন। প্রধানমন্ত্রী ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকা পৌঁছবেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com