আর মাত্র একদিন পরই ২০২২ সাল। প্রকৃতির নিয়মে আরও একটি বছর কেটে গেল। ২০২১ সালেও মহামারি করোনাভাইরাসের তা-বে অনেকেই হারিয়েছেন পরিবারের সদস্যকে। আবার অনেকেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, অনেকের আবার ঘরও ভেঙেছে। ভালো ও খারাপ দুটো বিষয়কে সামনে রেখেই জীবনে এগিয়ে যেতে হয়। নতুন সবকিছুর মতোই ২০২১ সালে ফ্যাশন দুনিয়ায় যেমন পরিবর্তন এসেছে, ঠিক তেমনই পরিবর্তন দেখা গেছে মানুষের জীবনধারণেও। যদিও করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়েই ২০২১ সাল শুরু হয়েছিল, তবে দিন গড়াতেই সব স্বাভাবিক হয়েছে। মহামারিকালের সব থেমে থাকাকে বিদায় জানিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার তীব্র তাড়না থেকেই নতুন অনেক কিছু যুক্ত হয়েছে আমাদের জীবনধারণে। সেই তাড়না দেশের ফ্যাশনের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। আন্তর্জাতিকভাবে ফ্যাশন দুনিয়ার জন্য ২০২১ সাল ছিল স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার বছর। আর সেই ছন্দে শামিল হয়েছে বাংলাদেশও। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক ২০২১ সালের ফ্যাশন ও জীবনধারণ কেমন ছিল-
পুরোনো ফ্যাশন ট্রেন্ড: সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফ্যাশনেও পরিবর্তন আসে। ঠিক তেমনই ২০২১ সালেও ফ্যাশন দুনিয়ায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে পুরোনো ফ্যাশন ট্রেন্ড নতুনভাবে চালু হয়েছে এ বছর। ৭০ ও ৮০ এর দশকের ফ্যাশন নতুনভাবে ফিরে এসেছে একালে। ২০২১ সালের শুরু থেকেই টাইট জিন্সের চাহিদা থাকলেও বছরের মাঝামাঝিতে তার ধরন অনেকটাই বদলেছে। অর্থাৎ বেল বটম ও অনেক ঢিলেঢালা জিন্স প্যান্টের চল শুরু হয়েছে সেকালের মতো। ‘ওভারসাইজড’ ফ্যাশনের এ যুগে এখন চলছে ঢিলেঢালা জিন্সের জয়জয়কার। ঢিলেঢালা ডেনিম প্যান্টের নানা আকার ফ্যাশন দুনিয়ায় বেশ সাড়া ফেলে। আর বছর শেষে এসে বলাই যায়, আঁটসাঁটো জিন্স এখন মৃতপ্রায় ফ্যাশন। ব্যাগি, স্ট্রেট কাট, বুটকাট লেগ, ফ্লেয়ার জিন্স বেশ চলছে এখন। তারকাদেরও প্রায়ই দেখা যায় ঢিলেঢালা এসব জিন্সে। পাশাপাশি অ্যানিমেল প্রিন্টের পোশাকেরও কদর বেড়েছে অতীতের তুলনায়। চিতাবাঘ, জেব্রা এমনকি বাঘের মতো প্রিন্টগুলো বেশ নজর কাড়ছে সবার। ২০০০ সালের হাল্টার নেক ২০২১ সালে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ফিরে এসেছে। হাল্টার নেক ব্লাউজ এখন বেশ জনপ্রিয়। ২০২১ সালে ছেলেদের ফ্যাশনেও বেশ পরিবর্তন এসেছে। যদিও আরামদায়ক পোশাকের প্রধান্যই ছিল বেশি। গরমে গ্যাবার্ডিন প্যান্ট বেশি চলেছে। জিন্সের প্যান্টের ছেঁড়াফাটা নকশা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অফিসের লুকে সুতি ফুল হাতা শার্টের কদর ছিল। শীতের পোশাকে জ্যাকেটের পাশাপাশি রঙিন সোয়েটার চলেছে বেশি। ঈদ, পূজা বা বিয়ের মতো বিশেষ আয়োজনে ছেলেরা পরেছেন কটি আর পাঞ্জাবি। তবে পাঞ্জাবিতে ভারী কোনো কাজ ছিল না। যতটা সাধারণ রাখা যায়, সেদিকেই ছিল ঝোঁক। চুলের স্টাইলেও এসেছে পরিবর্তন। একাধিক লেয়ার করে চুল ছাটতে দেখা গেছে ছেলেদের। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বছরের একটা বড় সময় ধরে অনেকে চুল বড় করেছেন। কে পপ, টিকটকের মতো সামাজিক মাধ্যমের প্রভাবে তাদের নানা রঙে চুল রাঙাতে দেখা গেছে। নারীরাও চুল নিয়ে ছিলেন বেশ যতœবান। বড় চুলের চেয়ে ছোট ও মাঝারি চুল এবং কালার হেয়ারে আসক্তি বেড়েছে নারীদের।
অন্যদিকে পুরুষদের চামড়ার জুতার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিল বিভিন্ন রকম কৃত্রিম উপকরণের তৈরি জুতা। ওজনে হালকা আর নকশার বৈচিত্র্যের কারণে এসব জুতার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। নারীদের জুতার ফ্যাশনেও এসেছে বৈচিত্র্য। বর্তমানে ফ্ল্যাট জুতার চেয়ে হাই হিল ও স্নিকার্সের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে নারীদের।
ফ্যাশনে মাস্কের সংযোজন: বিগত ২ বছর ধরেই ফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে মাস্ক। ২০২০ সালে মহামারি করোনাভাইরাসের পর থেকে এখনো মাস্কের কদর বেড়েই চলেছে। বর্তমানে ফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে বিচিত্র সব মাস্ক। নানা নকশা ও স্বকীয়তা ফুটে উঠছে মাস্কে। রং-বেরঙের বিভিন্ন মাস্কের গুণগত মান ও দামেও আছে পার্থক্য। সস্তায় মাস্ক কিনে ব্যবহার করলেই হবে না, সেটি কতটুকু আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে তা-ও জানতে হবে। এখন অনেকের কাছে মাস্কই হয়ে উঠেছে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। শুধু মডেলরাই নন, মাস্কের সঙ্গে ফ্যাশনকে মিলিয়ে দিয়েছেন বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও। অনেকে এখন ওয়েডিং ড্রেসসহ যে কোনো পোশাকের সঙ্গেই মাস্ক ব্যবহার করছেন। মাস্ক এখন হয়ে উঠেছে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং ফ্যাশনেবল জিনিসে। নানা রঙের, নানা বিচিত্র কারুকাজ করে বানানো হয়েছে মাস্কগুলো। সিল্ক, কটন, ভেলভেট নানা ফেব্রিকে বানানো হয়েছে এগুলো। ক্রেতারও পোশাকের সঙ্গে মানানসই মাস্ক বেছে নিচ্ছেন। বড়-ছোট সবার জন্যই রয়েছে ফ্যাশনেবল মাস্ক। জমকালো জামা-কাপড়ের সঙ্গে মানানসই সিল্কের মাস্ক একদিকে যেমন নতুনত্বের স্বাদ দেবে, পাশাপাশি দেবে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষাও।
বর্তমানে রাস্তায়, ফুটপাতে, বিভিন্ন অনলাইন শপে মাস্ক বিক্রি হচ্ছে। ফার্মেসিতেও মিলছে নানা ধরনের মাস্ক। রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসিতে ডিসপোজিবল নন ওভেন ফেব্রিক মাস্কের দাম ২৫ টাকা। কটন মাস্কের দাম ১১০-১২০ টাকা। অন্যদিকে স্পঞ্জ অ্যান্টি ডাস্ট মাস্ক ৫০ টাকা, এন-৯৫ (৮২১০) মাস্ক ২৫০ টাকা, এন-৯৫ (৮১১০এস) ১৮০ টাকা, পিএম-২.৫ মাউথ মাস্ক ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ফ্যাশনে লং কটি: ফ্যাশন সচেতন নারীদের কাছে কটির জনপ্রিয়তা ২০২১ সালে এসে বেড়েছে। প্রতিদিনের অফিস লুক থেকে শুরু করে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে আড্ডাই হোক কিংবা কেনাকাটার উদ্দেশ্যে যাওয়া হোক শপিংমলে, সব কিছুর সঙ্গেই দারুণ মানিয়ে যায় একটি কটি। প্রায় সব ঋতুতেই ডিজাইনাররা হাল ফ্যাশনের অংশ করে তুলছেন কটিকে। কটিরও রয়েছে আবার নানা ধরন। কটির ডিজাইন সাধারণত ট্র্যাডিশনাল, ওয়েস্টার্ন ও কনটেম্পরারি ধাচের পাওয়া যায়। বর্তমানে লং কটি নারীদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। কটির কাটছাঁটেও আছে নানা ঢং। কোনোটার সামনে কাটা, কোনোটার ডিজাইন আবার মাছের আকৃতির অর্থাৎ ফিশকাট, রয়েছে স্লিম ফিট ও ব্যান গলা দিয়ে কামিজ কাটের কটিও। তবে লম্বার পরিমাপের দিক দিয়ে সাধারণত ৩ ধরনের কটিই চোখে পড়ে সব মিলিয়ে। লং, শর্ট ও মাঝারি সেমি লং কটি। কটির নিচের দিকের ডিজাইনের বৈচিত্র্যই সাধারণত চোখে পড়ার মতো। কোনোটা একেবারে গোল ঘের দেওয়া, বর্ডারে রয়েছে লেস কিংবা জরির কাজ, কোনোটা আবার তিনকোণা ছাঁট। কটির ফেব্রিক হিসেবে সাধারণত কাতান, জর্জেট, সিল্ক, সামু সিল্ক, জর্জেটের ওপর ফ্লোরাল প্রিন্ট, স্কিন প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট, টাই-ডাই, চুনরি, মসলিন, জামদানি ইত্যাদি বেশি ব্যবহৃত হয়। কাতান কাপড়ের কটি বেশ গর্জিয়াস লুক এনে দিতে পারে।
পোশাকে হাঁতে আঁকা ছবি: পোশাকে হাতের কাজ বলতে একটা সময় শুধু সুঁই-সুতার নকশাকেই বোঝানো হতো। তবে এখন শুধু সুতার কাজ নয় বরং রং দিয়ে হাতে আঁকা ফুল, পাখি বা বাহারি নকশার পোশাকের জনপ্রিয়তা কম নয়। রং আর তুলির স্পর্শে বর্ণিল হয়ে ওঠে পরনের পোশাক। সুতার কাজ, চুমকি বসানো, অ্যাপ্লিক ইত্যাদির মতোই হ্যান্ড পেইন্টও এক ধরনের হাতের কাজ। শিল্পীর ভালোবাসা, ধৈর্য এবং তার পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে একটি পোশাকে ফুটে ওঠে তার কল্পনাগুলো। এখন অনেকেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হ্যান্ড পেইন্টের তৈরি পোশাক নিয়ে কাজ করছেন। তাছাড়া অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও হ্যান্ড পেইন্টের পোশাক তৈরিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। হাতে আঁকা নকশার ক্ষেত্রে শাড়িতে মূল আকর্ষণ থাকে আঁচলে। আর কামিজ ও কুর্তার ক্ষেত্রে সামনের অংশ। কামিজ ও ব্লাউজের ক্ষেত্রে শুধু হাতায় পেইন্ট করা হয় অনেক সময়। একেক জন শিল্পীর কাজের ধরন এবং তাদের পছন্দগুলোও ভিন্ন। তাই একেক জনের কাজে তাদের যার যার বিশেষত্ব ফুটে ওঠে। বর্তমানে হ্যান্ড পেইন্টেড কাপল ড্রেসের জনপ্রিয়তা অনেক। এক্ষেত্রে নারীর জন্য শাড়ি ও পুরুষের পাঞ্জাবি বা ফতুয়ায় একই রং ও ডিজাইন আঁকা হয়।
মডেস্ট ফ্যাশনে আকৃষ্ট নারীরা: ২০২১ সালে মডেস্ট ফ্যাশন নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর। শালীনভাবে ফ্যাশন সম্মত পোশাক পরার বিষয়টি মুসলিম তরুণীদের মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয়। তবে শালীন পোশাকের বিষয়টি এখন আর নির্দিষ্ট কোনো ধর্মে বা বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমানে শালীন পোশাক বা মডেস্ট ফ্যাশনে আকৃষ্ট হচ্ছেন নারীরা। শুধু এদেশেই নয় বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশের নারীরাও আজকাল গায়ে জড়িয়ে নিচ্ছেন লম্বা গাউন বা কুর্তি, সঙ্গে মাথায় রং-বেরঙের হিজাব বা স্কার্ফ। নতুন ধারা হিসেবে বিশ্বে চালু হয়েছে মডেস্ট ফ্যাশন ট্রেন্ড। এখন পুরো পৃথিবীতে ফ্যাশন জগতে যে ধরনের পরিবর্তন এসেছে, তাতে কেবল শীতকাল নয়, বছরজুড়েই মানুষ একটু বড়সড় ঢিলা আর আরামদায়ক জামাকাপড় পড়তে পছন্দ করেন। এরকম পোশাকে শরীরের অতিরিক্ত মেদও ঢেকে রাখা যায় বলে অনেক নারীই ঢিলেঢালা পোশাকে আত্মবিশ্বাস ও আরাম পান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো ব্রিটেনেও এখন মডেস্ট ফ্যাশন ট্রেন্ড এতই আলোচিত যে, সেখানে একটি মডেল এজেন্সি আছে, যারা শালীন ফ্যাশনের কাপড় পরেন এমন মডেলদের নিয়ে কাজ করছে।
উমামা মডেলস নামের প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শাম্মি হামৌদা মনে করেন, মডেস্ট ফ্যাশন মেইনস্ট্রিম ফ্যাশন হিসেবে বিশ্ব দখল করবে। ১৯৫০ এর দশকে ব্রিটেনে এটাই ছিল স্বাভাবিক, শালীনভাবেই পোশাক পরতেন নারীরা। সবার জামার ঝুল ও হাতা ছিল লম্বা। দেশেও বর্তমানে কামিজ-কুর্তির পাশাপাশি লং গাউনের কদর বেড়েছে। একই সঙ্গে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে হিজাব পরা নারীর সংখ্যাও বেড়েছে। ধর্মীয় বোধ হোক কিংবা ফ্যাশন, ঢিলেঢালা পোশাকের সঙ্গে মাথায় হিজাব বা স্কার্ফ নতুন এক ট্রেন্ড চালু করেছে। যা মডেস্ট ফ্যাশন হিসেবেই পরিচিতি লাভ করছে বিশ্বজুড়ে।
সিকুইন পোশাক, ব্যাগ, জুতার রাজত্ব: মানুষ একটি বিষাদময় সময় পার করে মনোযোগ দেবে পার্টির দিকে। আর সে জন্য তারা সব ম্যাড়মেড়ে পোশাককে পেছনে ফেলে তুলে নিয়েছে সিকুইন বা চুমকির কাজ। আগামী বছরেও এমন ধারার পোশাকের রেশ থাকবে বলে মত ফ্যাশনবিদদের। সিকুইনকে বলা হয় ‘রিভেঞ্জ ড্রেসিং’। আর পার্টি, আড্ডা, মজা-এসবের জন্য মানুষ হাত বাড়াবে ওয়ার্ডরোবের সবচেয়ে ঝলমলে পোশাকের দিকে। বর্তমানে স্কার্ট, লেহেঙ্গা, শাড়ি, কামিজ, কুর্তি এমনকি সিকুইনের মাস্কের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। ফ্যাশনে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে ঝলমলে সিকুইন পোশাক। নায়ক-নায়িকা থেকে শুরু করে বড় এমনকি ছোটদের পোশাকেও সিকুইনের বিভিন্ন নকশা এখন বাজারে গেলেই দেখা মেলে। চলতি বছরের মতোই ২০২২ সালেও বিভিন্ন পার্টি-উৎসব সবখানে যেতেই সিকুইনের পোশাক বেছে নেবেন সবাই। এগুলো দামও সাধ্যের মধ্যেই পাওয়া চায়। যে যার সাধ্য অনুযায়ী পছন্দের সিকুইন পোশাকটি কিনতে পারবেন। শুধু সিকুইনের পোশাকই নয় এর হাতব্যাগও ফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে। পার্টি লুকের জন্য পারফেক্ট এ ব্যাগগুলো। যে কোনো আকারের সিকুইন ব্যাগই ভিন্ন সৌন্দর্য আনে। তবে খুব বেশি বড় না নিয়ে মাঝারি আকারের কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ মানানসই হবে।
পোশাকে সিকুইন থাকলে জুতা থেকেই বা কেন বাদ যাবে! সিকুইনের অনেক ধরনের জুতা বাজারে পাওয়া যায়। তবে হাই হিল আর কোলাপুরি চপ্পলে সিকুইন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।
ফ্যাশনে চোকার গয়না ও স্টেটমেন্ট জুয়েলারি: ফরাসি বিপ্লবের সময় প্রথমবারের মতো চোকারের দেখা পাওয়া যায় বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে। ইতিহাস আমাদের জানায়, ফরাসি সমাজের উঁচু শ্রেণির নারীরা ‘ব্ল্যাড রেড’ বা রক্তের মতো লাল রঙের, গলায় আঁকড়ে থাকা এক ধরনের গয়না পরতেন। দেখতে আধুনিক যুগের চোকারের মতো এ গয়নাগুলো তারা গিলোটিনে প্রাণ হারানো শহীদদের স্মরণে পরে থাকতেন। তবে কোনো কোনো গয়না বিশেষজ্ঞ এ বর্ণনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। অ্যান বোলেইনের মতে, রানি এলিজাবেথের (প্রথম) মেয়ের একটি পোর্টেটে তার গলায় একটি কেতাদুরস্ত চোকার পরে থাকতে দেখা গেছে। ভিক্টোরিয়া যুগে চোকারের জনপ্রিয়তা ফিরে আসে। এরপর আসে ফ্যাশন সচেতন ওয়েলসের রাজকন্যা আলেকজান্দ্রার যুগ। তবে ইতিহাসবিদরা বলেন, ফ্যাশন নয় বরং সুনির্দিষ্ট একটি কারণে আলেকজান্দ্রা সে গয়নাটি পরতেন।
তাদের মতে, শৈশবে তার একটি অস্ত্রোপচার হয়েছিল, যেখান থেকে একটি ক্ষতস্থান তৈরি হয়। সেই ক্ষত ঢাকার জন্যই নাকি তিনি গয়নাটি পরতেন। চোকার পরার ধারাটি ১৮শ শতাব্দী পেরিয়ে ১৯ শতকেও পৌঁছে যায়। ৪০ ও ৫০ এর দশকের শেষের দিকে চোকারের পুনরাগমন ঘটে সম্পূর্ণ নতুনভাবে। এবার সেটি পোষা কুকুরের ‘কলারের’ আকার ধারণ করে! এ সময়ে চোকার তৈরির উপকরণ হিসেবে লেইস, রিবন, মুক্তা, এমনকি হিরাও ব্যবহৃত হতে শুরু করে। কিছুদিনের জন্য ফ্যাশনটি হারিয়ে গেলেও ৯০ এর দশকের শেষের দিকে আবারও চোকার আলোচনায় আসে। যেহেতু ২০২০-২১ এ এসে আবারও ৯০ এর দশকের বিখ্যাত ধারাগুলো ফিরে আসছে, এ বছরও চারপাশে চোকারের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। সে হিসেবে চোকারের ইতিহাস ৬০০-৭০০ বছরের পুরোনো। বর্তমানে চোকার খুবই চমকপ্রদ একটি গয়না, যাতে একই সঙ্গে উপকরণ, রং ও বিভিন্ন প্রকাশভঙ্গীর সমন্বয় ঘটেছে। এ চোকারগুলো সাধারণ নেকলেসের সঙ্গে পরা হচ্ছে। এমনকি কেউ কেউ প্রথাগত বড় আকারের গয়নার সঙ্গেও চোকার পরছেন। বর্তমানে স্টেটমেন্ট জুয়েলারিরও কদর বেড়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোয় ভারী, মোটা, জটিল ডিজাইনের গয়নার কদর ইদানীং বেশ বেড়েছে। জিন্সের সঙ্গে সঙ্গে মোটা কাফ, ব্রেসলেট, আংটি আবার স্কার্ট-টপসের সঙ্গে দামি পুঁতি ও পাথরের মালা আজকাল ইনফ্লুয়েন্সার ও মেকআপ আর্টিস্টদের বেশ পছন্দের। এ ছাড়াও ফেসটিভ লুকের জন্য আফগান মাথাপাট্টি সবচেয়ে জমকালো। সিলভার বা অন্য মেটালের ওপর বর্ণিল পাথর ও নানা রঙের পুঁতির কাজ, বাহারি ডিজাইন, হালকা মেকওভারেও আড়ম্বরপূর্ণ দেখায়। তা ছাড়া ফিউশন স্টাইলে নিজেকে সাজাতে চাইলে এ জুয়েলারিগুলো সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে; কেননা ক্যাজুয়াল থেকে বোহো বা ফরমাল থেকে বোরক স্টাইলে বেশ মানানসই।
মেকআপ ট্রেন্ড:মেকআপ হোক বা ফ্যাশন, কিছু পুরোনো ট্রেন্ড ফিরে আসে, আর কিছু স্রোতের টানে ভেসে যায়। এ বছরটাও তার ব্যতিক্রম নয়। ফিরে এসেছে মেকআপের কিছু পুরোনো ধরন। মেকআপকে আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। যতই বছর ঘুরুক, কিছু কিছু ট্রেন্ড কখনো পুরোনো হওয়ার নয়! তাই সুন্দর, মসৃণ ত্বকের চাহিদা ২০২১ সালেও ছিল সুপারহিট! স্বাভাবিকভাবেই মুখের মেকআপের ক্ষেত্রে প্রাধান্য ছিল মিনিমাল ও ন্যাচারাল মেকআপ। ফুল কাভারেজ ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি অনেকেই বেছে নেন বিবি অথবা সিসি ক্রিম। নিয়মিত ব্যবহার বেড়েছে প্রাইমার, ফেস সিরাম, নাইট ক্রিমের। ঝলমলে মেকআপের চেয়ে ন্যাচারল নো মেকআপ মেকআপ লুকের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
২০২১ সালে চোখের সাজে বেশ পরিবর্তন এসেছে। স্মোকি ও কালারফুল আই মেকআপের চাহিদা বেড়েছে। একই সঙ্গে উইংড আইলাইনার ও আইল্যাশ ব্যবহার করে চোখের সাজ ফুটিয়ে তুলছেন সব নারীই। লিপস্টিকের ক্ষেত্রে নতুন সংযোজন বেড়েছে ন্যুড কালারের। যদিও গাঢ় রঙের লিপস্টিকের চলও আছে আগের মতোই। মেকআপের ক্ষেত্রে ব্লাশন ও হাইলাইটারের কদর বেড়েছে বিগত বছরগুলোর তুলনায়। পাশাপাশি আইব্রো সুন্দরভাবে সেট করতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আইব্রো পমেড, সোপ, জেল, মাশকারা কিংবা শ্যাডোর চল বেড়েছে।
ঘড়ির বদলে ফ্যাশনে স্মার্টওয়াচ:বর্তমানে সবার কাছেই আছে মোবাইল ফোন। যা ঘড়ি ব্যবহারের আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে ঘড়ি। এসেছে স্মার্টওয়াচ। শুধু সময় দেখা নয়, অনেক ধরনের সুবিধা দিচ্ছে স্মার্টওয়াচ। প্রযুক্তি ও ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে অনেকের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে ঘড়ি। কয়েক বছর ধরেই জনপ্রিয়তা বেড়েছে স্মার্টওয়াচের। স্মার্টওয়াচ ব্যবহারকারীর হাঁটার গতি, হার্ট রেট, তাপমাত্রাসহ তথ্য সংগ্রহও করে। এটি হৃৎস্পন্দনে সব সময় নজর রাখে। এটি আপনাকে জানিয়ে দেবে, কত ক্যালোরি খরচ করলেন। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য থাকলে ওয়াচের সাহায্যে ক্যালোরির ঘাটতি পূরণে খাবারের পরিকল্পনাও করা যায়। পোশাকের মতো বর্তমানে নারী-পুরুষরা বাহারি সব স্মার্টওয়াচ বেছে নিচ্ছেন। ঘড়ির ডিজাইনে আনা হয়েছে ভিন্নতা। ঘড়ির ডায়ালগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন কোনগুলো ছেলেদের এবং কোন ঘড়ি মেয়েদের। এসব স্মার্টওয়াচ ক্যাজুয়াল বা কর্পোরেট দুই লুকেই ব্যবহার করতে পারবেন। এগুলো দেখতে নৈপুণ্যপূর্ণ, রুচিসম্মত, হালকা ও মজবুত। স্মার্টওয়াচটির ডিসপ্লে নিজের মতো করে পরিবর্তনের সুবিধাও রয়েছে। বিভিন্ন স্টাইল ও কালারের জন্য ঘড়িগুলো হবে বৈচিত্র্যময়। আপনার পোশাকের সঙ্গে রঙের মিল রেখে পরিবর্তন করতে পারবেন বেল্ট এবং ডায়াল। ব্র্যান্ডের স্মার্টওয়াচগুলোর মধ্যে বাজার ঘুরে পাবেন হুয়াওয়ে, অ্যাপল, স্যামসাং এবং শাওমি। এ ছাড়া ননব্র্যান্ডের অনেক অনেক স্মার্ট ওয়াচ এবং ব্যান্ড। এ ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের ওয়াচগুলোর ব্যবহার করাই উত্তম হবে। এসব ওয়াচ পাবেন ২,০০০-৫০,০০০ হাজার টাকায়। এ ছাড়াও ননব্র্যান্ডের ওয়াচ মিলবে ৩০০-১০০০ হাজার টাকায়।
অনলাইন কেনাকাটায় আস্থা বেড়েছে:করোনা আসার পর থেকেই অনলাইন কেনাকাটা বেড়েছে। যা এখনো চলমান। পোশাক, গয়নার মতো ফ্যাশনপণ্য ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার করতেও অনেকে অনলাইনের ওপর ভরসা বাড়িয়েছেন। বেড়েছে অনলাইন দোকানপাটের সংখ্যাও। ই-ক্যাবের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ই-কমার্সের বাজারের আকার এখন ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। ভোক্তারাও অনলাইনে কেনাকাটায় আস্থা বাড়িয়েছেন করোনাকালে। এখন যে কোনো পণ্য-সামগ্রীই মেলে ই-কমার্স বা এফ-কমার্সে। মহামারিকালে ফ্যাশন আর খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে অনলাইন ব্যবসা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ‘কাস্টমাইজড’ করে পোশাক বানানোর প্রবণতাও বেড়েছে। বেড়েছে একটু বড় ব্যাগ, টোট ব্যাগ ব্যবহারকারীর সংখ্যা। পোশাক, ব্যাগ, জুয়েলারি, প্রসাধনী, জুতা সবই মেলে অনলাইনে।
ঘরে বসেই রেস্টুরেন্টের খাবার খাওয়া:ঘরে বসেই খাবারের অর্ডার দেওয়ার প্রবণতা বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে বেশি দেখা গেছে। করোনার শুরু থেকেই লকডাউন কিংবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানে জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এরপর থেকেই ফুড হোম ডেলিভারির চাহিদা বেড়েছে। যা এখনো চলমান। লকডাউন না থাকলেও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ঘরে বসেই খাবারের অর্ডার দেওয়ার প্রবণতা এখনো বিরাজমান। এক্ষেত্রে ভাজাপোড়া ও মুখোরোচক খাবারই বেশি খান সবাই। সম্প্রতি ভারতীয় ফুড ডেলিভারি সংস্থা সুইগির তথ্যমতে, ওই দেশে ২০২১ সালে প্রতি এক মিনিটে ১১৫ জন মানুষ বিরিয়ানির অর্ডার করেছেন। অন্যদিকে, সময়ের সঙ্গে জনপ্রিয়তার পারদ বেড়েই চলেছে কফি কালচারের। ঢাকা শহর এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা কফি হাউজগুলো তার প্রমাণ দেয়।
জনপ্রিয় হয়েছে ডায়েট ট্রেন্ড: স্বাস্থ্য সচেতনরা ২০২১ সালে বিভিন্ন ডায়েট অনুসরণ করেছেন। কেউ ওজন কমাতে আবার কেউ সুস্বাস্থ্যের কারণে। সে হিসেবে বেশ কয়েকটি ডায়েট পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, যেমন- > ২০২১ সালে কেটো ডায়েটের জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুণ। এই ডায়েটের ক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে ভালো চর্বিজাতীয় খাবার খেতে হয়। ভালো চর্বিজাতীয় খাবার শরীরকে কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে চর্বি পোড়াতে উৎসাহিত করে। ফলে ওজন হ্রাস করে। কেটো ডায়েট অনুসারীরা সাধারণত প্রোটিন ও চর্বি খান। এক্ষেত্রে শর্করা ও কার্বোহাইড্রেট এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রোটিন শরীরের জন্য ভালো ও এটি পেশি তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। এ ডায়েট অনুসরণ করে কয়েক মাসের মধ্যেই শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো সম্ভব। তবে দীর্ঘদিন এই ডায়েট অনুসরণ না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। > আরেকটি হলো, ইমিউন সিস্টেম সাপোর্ট ডায়েট। বিগত ২ বছর ধরে এ ডায়েটের প্রতি অনেকে ঝুঁকেছেন। বিশেষ করে যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল তাদের জন্য কার্যকরী এ ডায়েট পদ্ধতি। এক্ষেত্রে ফল, সবজি ও বিভিন্ন খাদ্যশস্য সুপারিশ করা হয়। > প্যালিও ডায়েটটি নতুন নয়, তবে এটি ২০২০ সাল থেকে এখনো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্যালিও ডায়েট প্রাকৃতিক খাবার যেমন- তাজা ফল-মূল, শাক-সবজি, মাছ, মাংস, ডিম, বাদাম ইত্যাদি খাওয়ার ওপর জোর দেয়। অন্যদিকে আধুনিক প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলো বর্জন করার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে শস্য, দুগ্ধজাত খাবার, লবণ, প্রক্রিয়াজাত ফ্যাট ও চিনিজাতীয় খাবার এড়িয়ে যেতে হয়। > বর্তমানে ইন্টারমিটিং ফাস্টিং ওজন কমানোর ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকরী ও বিজ্ঞানসম্মত এক ডায়েট পদ্ধতি। এক্ষেত্রে খুব দ্রুত ওজন কমানো যায়। এই ডায়েট অনুসরণকারীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে বাকি ৮ ঘণ্টা খাওয়ার অনুমতি পায়। এক্ষেত্রে রাতের খাবার যদি সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে খেয়ে নেন, তাহলে পরের দিন দুপুর ১টার দিকে উপবাস ভাঙতে পারবেন। > ড্যাশ ডায়েট হৃদরোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী। এ ডায়েট অনুসরণ করলে উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ হয়। ড্যাশ ডায়েট হলো উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের খাদ্যতালিকাগত পদ্ধতি। ২০২১ সালে হৃদরোগীদের মধ্যে এ ডায়েটের জনপ্রিয়তা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেড়েছে।
জনপ্রিয় ৫ ব্যায়াম: করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই মানুষের মাঝে সুস্থ থাকার প্রবণতা বেড়েছে। এ কারণে শরীরচর্চার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে কমবেশি সবার। ভালো খাওয়া ও নিয়মিত ব্যায়াম হলো সুস্বাস্থ্যের মূলমন্ত্র। রোগমুক্ত জীবনধারণ করতে শরীরচর্চার বিকল্প নেই। এসব কারণেই ২০২১ সালে শরীরচর্চার প্রতি ছোট-বড় সবারই আগ্রহ বেড়েছে বিগত কয়েক বছরের তুলনায়। স্বাস্থ্যকর জীবনধারার জন্য যে যেভাবে পারছেন অর্থাৎ ঘরে, বাইরে কিংবা জিমে নিয়মিত শরীরচর্চা করছেন অনেকেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক ২০২১ সালের বর্ষসেরা ৫ ব্যায়াম সম্পর্কে- > ২০২১ সালে হার্ট অ্যাটাকের কারণে অসংখ্য তরুণের মৃত্যু হয়েছে। যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর কারণ হিসেবে অনেক বিশেষজ্ঞই বলেছেন, ২০২০ সালে লাগাতার লকডাউন ও জিম-পার্ক বন্ধ থাকায় অনেকেই ঘর থেকে বের হননি। আর ঘরে থাকা মানেই বেশি খাওয়া-দাওয়া। এর ফলে অনেকের ওজন বেড়েছে। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন রোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ২০২১ সালের আউটসাইড ওয়ার্কআউট বা বহিরাঙ্গনে ব্যায়ামের প্রবণতা বেড়েছে অনেকের মধ্যে। > নিজেকে সক্রিয়, ফিট ও চলার একটি দুর্দান্ত উপায় হলো দৌড়ানো। বর্তমানে অনেকেই নিজেকে সুস্থ রাখতে বেছে নিয়েছেন দৌড়। এটি কেবল একটি বায়বীয় ব্যায়ামেরই দুর্দান্ত ফর্ম নয় বরং শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন ও স্ট্যামিনা বাড়াতে সাহায্য করে। এমনকি দৌড় হলো কার্ডিও-ভাসকুলার ওয়ার্কআউটের একটি দুর্দান্ত রূপ। হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতেও বিরাট ভূমিকা রাখে দৌড়। > দৈনিক অন্তত ৪৫ মিনিট দ্রুতগতিতে হাঁটা সুস্বাস্থ্যের অন্যতম এক উপায়। দৌড়ের চেয়ে অনেক ভালো হলো হাঁটা। এক্ষেত্রে দ্রুত হাঁটতে হবে। ওজন কমানো থেকে শুরু করে শরীর সুস্থ রাখতে হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। দ্রুত হাঁটলে হার্ট রেট ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দে ভারসাম্য বজায় রাখে। ২০২১ সালে সবার মধ্যেই হাঁটার প্রবণতা বেড়েছে। > প্রকৃতির ট্রেইল বরাবর বা দীর্ঘ, ঘুরানো রাস্তায় দীর্ঘ হাঁটা হাইকিং নামে পরিচিত। ২০২১ সালে শারীরিক কার্যকলাপ হিসেবে হাইকিং জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে গেলে সহজেই হাইকিং করা যায়। একদিকে ভ্রমণও যেমন হয় অন্যদিকে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হাইকিংয়ের মাধ্যমে। এমনকি শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যও মেলে এর মাধ্যমে। > করোনাকালে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের প্রতি মানুষ বেশি ঝুঁকেছেন। ফুসফুস ভালো রাখতে এ ব্যায়ামের বিকল্প নেই। ফুসফুসকে আরও গতিশীল ও এর কর্যকারিতা বাড়াতে পারে ব্রিদিং এক্সারসাইজ। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামগুলোর মধ্যে ২০২১ সালে জনপ্রিয়তা পেয়েছে বেলি ব্রিদিং ও অলটারনেট নস্ট্রিল ব্রিদিং। বেলি ব্রিংদিং একটি চমৎকার ব্যায়াম যা ফুসফুসের ক্ষমতা আরও বাড়ায়। এ ধরনের শ্বাস-প্রশ্বাস ডায়াফ্রামিক পেশীকে শক্তিশালী করে। এক্ষেত্রে নাক দিয়ে পেট ভর্তি করে শ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ আটকে রেখে এরপর মুখ দিয়ে বের করে দিতে হয়ে।
অন্যদিকে অলটারনেট নস্ট্রিল ব্রিদিং শরীরের কার্ডিও ভাস্কুলার ফাংশন উন্নত করে ও হৃদস্পন্দন কমায়। এটি শ্বাস প্রশ্বাসের দুর্দান্ত এক ব্যায়াম, যা ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের উন্নতিতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে ডান হাতের বৃদ্ধাঙুলি দিয়ে এটি নাক ফুঁটো চেপে ধরুন আর অন্যটি দিয়ে শ্বাস নিন। এরপর কিছুক্ষণ শ্বাস ধরে রেখে চাপ দিয়ে ধরে রাখা নাক দিয়ে বাতাস বের করে দিন। একইভাবে এক নাক দিয়ে শ্বাস নিন অন্যটি দিয়ে ছাড়ুন। ৫ মিনিট পর্যন্ত চক্রটি একাধিকবার পুনরাবৃত্তি করুন। এরপর বাম নাকের ছিদ্র দিয়ে শ্বাস ছেড়ে এই ব্যায়াম শেষ করুন।
মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যতœ: ২০২১ সালে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সবার মনোযোগ ও যতœ বেড়েছে। বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়ার মতো ঘটনা চোখে পড়েছে। কয়েকজন মনোবিদের সঙ্গে কথা বলে সেটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয় এমন প্রতিষ্ঠানও জানিয়েছে, অন্য বছরের তুলনায় এবার ব্যক্তিগতভাবে অনেকে কাউন্সেলরের শরণাপন্ন হয়েছেন।
পরিবার, কর্মক্ষেত্র, সমাজ ও ব্যক্তিগত চাপে থাকা মানুষ তাদের মনের কথা খুলে বলেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও মনোবিদদের কাছে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান মনের বন্ধুর তথ্যমতে, ইউএনডিপি-মনের বন্ধুর যৌথ উদ্যোগে গত পাঁচ মাসে ১১ হাজার ৬৯০টি ফোনকল এসেছে মানসিক সেবা সংক্রান্ত। এর মধ্যে ৭৩.০৪ শতাংশ সেবাই নিয়েছেন তরুণরা। এ ছাড়াও নারীদের সেবা নেওয়ার পরিমাণ ছিল ৬২.৯ শতাংশ। মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে অনেকেই এখন ইয়োগা, ধ্যান বা মেডিটেশন করছেন নিয়ম করে।
বিয়ের ধারায় পরিবর্তন: ২০২১ সালেও ছিল বিধিনিষেধ। তাই বলে থেমে ছিল না বিয়ের আয়োজন। ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে সেরেছেন অনেকে। পরিবার, কাছের বন্ধু ও নিকটাত্মীয়দের নিয়ে এসব আয়োজন সেরেছেন সবাই। স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করায় বিয়ের খরচও কমেছে। ঘরোয়া আয়োজনের কারণে খাবার, সাজসজ্জার বাড়তি খরচ কমেছে। কনেদের অপেক্ষাকৃত কম দামের শাড়ি, পারিবারিক গয়না পরতে দেখা গেছে। সোনার গয়নার বদলে সিলভার ও গোল্ড প্লেটেড গয়নার চল ছিল বেশি। অনেক আয়োজনই হয়েছে ছোট্ট কোনো রেস্তোরাঁয়, কেউ বাড়ির ছাদে বা ঘরের ভেতরেই সেরে ফেলেছেন বিয়ের অনুষ্ঠান।
তবে বিয়ের সাজে এসেছে ভিন্নতা। শাড়ির তুলনায় লেহেঙ্গা, এমনকি গাউনও হিসেবে বিয়ের পোশাক আছে ট্রেন্ডে। বিয়ের আগ থেকে ঘটাভাবে পালন করা হচ্ছে ব্যাচেলর পার্টি, ব্রাইডাল শাওয়ার, মেহেদি নাইটস, সংগীত ইত্যাদি অনুষ্ঠান। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য মাস ধরে চলে গান ও নাচের মহড়া। এমনকি ২০২১ সালে প্রি ওয়েডিং ফটোশুট ও পোস্ট ওয়েডিং ফটোশুটের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। জনপ্রিয় হচ্ছে ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ও। বিয়ের পাশাপাশি বিবাহবিচ্ছেদও বেড়েছে ২০২১ সালে। বছরের মাঝামাঝিতে গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২১ সালে বিবাহবিচ্ছেদ বেড়েছে ১৭ শতাংশ। শহর ও গ্রাম সব জায়গাতেই বিচ্ছেদ বেড়েছে। তবে গ্রামের তুলনায় শহরে বিচ্ছেদের হার বেশি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, নারীরাই বেশি বিচ্ছেদের আবেদন করেছেন। এই হার ৭৫ ভাগ। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, নারীরা শিক্ষিত ও কর্মজীবী হচ্ছেন। তাই পরিবারের বৈষম্য, সহিংসতা ও অবহেলা সহ্য করে দিন কাটিয়ে দেওয়ার চেয়ে বিচ্ছেদকেই শ্রেয় মনে করছেন।