শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন

প্রত্যাশা, অভিযোগ বনাম দায়িত্বপরায়ণতা

আবিদা আমাতুল্লাহ:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০২২

প্রত্যাশা ও অভিযোগ দুটি পরস্পর সম্পূরক শব্দ। মানুষ হিসেবে স্বভাবতই আমরা কেবল অন্যের কাছে আশা করি। প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির মিল না হলেই আমরা অভিযোগ করি, আক্ষেপ করি। না পাওয়ার আক্ষেপ আমাদের স্বার্থপর, হতাশ ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলে। কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায় আমাদের চাওয়া পাওয়াগুলো কেবল আল্লাহকেই বলতে। রাসূলুল্লাহ সা: ইবনে আব্বাস রা:কে বলেছিলেন, ‘তুমি চাইলে আল্লাহর কাছেই চাইবে’ (তিরমিজি-২৫১৬)।
অর্থাৎ যখনই আমাদের কোনো কিছুর প্রয়োজন হয়, তা যতই তুচ্ছ হোক না কেন, তখন যার কাছে চাইব- তিনি যেন আল্লাহই হন। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির এই অসম সমীকরণ মেলাতে গিয়ে আমরা ভুলেই যাই আমাদেরও অন্যদের ওপর কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য আছে। আমাদের ওপরও অন্যদের হক আছে। আমরা দিনে যতবার না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ করি তার এক ভাগও কি নিজেকে স্মরণ করিয়ে দেই নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে? ইসলাম আমাদের দায়িত্বগুলো নিয়ে সচেতন করে বারবার। যার জন্য আমাদের জবাবদিহি করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। শাসনকর্তা যিনি জনগণের রক্ষক, তিনি স্বীয় অধীনস্থ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। আর প্রত্যেক পুরুষ স্বীয় পরিবারের সদস্যদের রক্ষক এবং তিনি নিজের অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। আর প্রত্যেক নারী তার স্বীয় স্বামীর পরিবারের লোক ও তার সন্তানদের ওপর দায়িত্বশীল’ (বুখারি ও মুসলিম)।
আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে সচেতন হই, তাহলে দিন শেষে দেখা যাবে, আমরা এক ভিন্ন মানুষে পরিণত হয়েছি। যে অনেক বেশি প্রশান্ত। যে কি না তার চাওয়া-পাওয়াগুলো কেবল আল্লাহর সমীপেই নিবেদন করে। যে দিতেই বেশি ভালোবাসে, কি পেল না বা কি দেয়া হয়নি এ নিয়ে ভাবার তার সময় কোথায়। নিজের জবাবদিহিতার ভয়ে সে থাকে সদা তটস্থ। কেননা, ‘যে সৎকর্ম করে সে নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং কেউ খারাপ কাজ করলে তার প্রতিফল সেই ভোগ করবে’ (সূরা হামিম আস-সিজদা-৪৬)।
হয়তো এমন হতে পারে কারো আচরণে আমরা অসন্তুষ্ট। অথবা কেউ আমাদের হক ঠিকমতো আদায় করছে না। তাহলে আমরা কী করব? অভিযোগের ঝুলি দিন দিন বাড়াতেই থাকব? না। তাকে তার জবাবদিহিতা ও দায়িত্ব সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেবো। পালন করা না করার দায়দায়িত্ব তার নিজের ওপর বর্তাবে। আমাদের ফোকাস থাকবে অন্যের হক ঠিকমতো আদায় করছি কি না তার ওপর। আমরা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্বগুলো পালনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো অনিচ্ছা থাকলেও। সাথে সাথে আল্লাহকে বলবো, আল্লাহ! আপনার সন্তুষ্টির জন্যই এই অপ্রাপ্তির কষ্ট ভুলে যাওয়া, এই ত্যাগ। এই যে হাসিমুখে অসন্তোষ হজম করছি তাও কেবল আপনারই জন্য এবং আপনার কাছেই এর উত্তম প্রতিদান আশা করি। এভাবে নিয়ত পরিশুদ্ধ করে নিলে না পাওয়াগুলোর জন্য আর কোনো কষ্ট থাকবে না।
একইভাবে, প্রত্যাশার ক্ষেত্রে আমরা নিজের নফসকে এটা স্মরণ করিয়ে দেবো যে, যা পেয়েছি তা আমার তকদিরে ছিল। যা পাইনি তা আমার জন্য বরাদ্দ নেই। যা কিছু চাই তা যদি হালাল কিছু হয়, তা আল্লাহ যখন আমার জন্য কল্যাণকর মনে করেন ঠিক তখনই পাবো। তার এক মুহূর্ত আগেও না এবং পরেও না। কেননা, আমাদের কিছু দেয়ার ক্ষমতা শুধু আস-সামাদ তথা স্বয়ং সম্পূর্ণ আল্লাহরই আছে।
তাই আমরা আল্লাহর কাছেই আমাদের প্রয়োজনগুলো বলবো। নশ্বর এই দুনিয়ার পাওয়া না পাওয়াগুলো নিয়ে অভিযোগ করবো না। পরিপূর্ণতার জায়গা তো দুনিয়া নয়। অবিনশ্বর, একান্ত মনের মতো সব কিছুই তো আল্লাহ তায়ালা আমাদের জান্নাতে দেয়ার ওয়াদা করেছেন। আমরা আমাদের ওপর অর্পিত কর্তব্যগুলোকে ফোকাস করবো। আর আমাদের প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসের উপযুক্ত বিনিময় নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমাদের দেবেন, ‘তারা (জান্নাতিরা) সেখানে কখনো কোনো দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হবে না’ (সূরা হিজর-৪৮)।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com