শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২১ অপরাহ্ন

বস্তিবাসীদের শরীরে অ্যান্টিবডি বেশি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২২

অন্য এলাকায় বসবাসরত মানুষের চেয়ে বস্তিতে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার (৩ জানুয়ারি) আইসিডিডিআর,বি-এর গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় অ্যাডভোকেসি সহায়তায় ছিল হেলথ ওয়াচ বাংলাদেশ।
২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বস্তি ও বস্তিসংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে ঢাকার ৪টি বস্তি এলাকা (কড়াইল, মিরপুর, ধলপুর ও এরশাদ নগর) এবং চট্টগ্রামের দুটি (শহীদ লেন এবং আকবর শাহ কাটা পাহাড়) বস্তি জরিপের জন্য বেচে নেওয়া হয়। একই সময়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম এই দুই শহরের বস্তি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় চালানো হয় এই জরিপ। দৈবচয়নের ভিত্তিতে জরিপের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। অর্থাৎ বাড়ি এবং মানুষ বাছাই সব ক্ষেত্রে এই দৈবচয়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেসব মানুষদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, তাদের বয়স ছিল ১০ বছর কিংবা তার বেশি। জরিপ চালানোর জন্য একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। যার মধ্যে প্রশ্ন ছিল, অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি গত ছয়মাসে করোনার সংক্রমণ এড়াতে কোন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা? উক্ত ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান (বয়স, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্মসহ অন্যান্য)। ব্যক্তির দীর্ঘমেয়াদী কোন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা আছে কিনা? করোনার কোন উপসর্গ দেখা দিয়েছে কিনা? বাসায় কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে কিনা? শরীর চর্চা বা কায়িক পরিশ্রম করে কিনা? সবশেষ প্রশ্ন ছিল, বিসিজি টিকা নেওয়া হয়েছে কিনা? এসব প্রশ্ন করা ছাড়াও জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তির উচ্চতা, ওজন এবং রক্তচাপ পরিমাপের পাশাপাশি রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কোভিড-১৯ ভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস, হিউম্যান করোনাভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস বি, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, ডেঙ্গু ভাইরাস, চিকনগুনিয়া ভাইরাসের অ্যান্টিবডি এই ব্যক্তিদের শরীরে আছে কিনা, তাও পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া রক্তে ভিটামিন ডি ও জিংকের মাত্রাও পরীক্ষা করা হয়।
গবেষণার ফলাফল: # সামগ্রিকভাবে অন্য এলাকার (৬২.২%) তুলনায় বস্তিতে বাস করা বেশি সংখ্যক মানুষের (৭১.০%) শরীরে কোভিড-১৯ এর অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। # আবার চট্টগ্রামের (৫৪.২%) তুলনায় ঢাকার (৭২.৯%) বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছে। # নি¤œ আয়ের মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বেশি ছিল # জরিপে অংশ নেওয়া ৩৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে চলমান অথবা পূর্ববর্তী ৬ মাসের মধ্যে করোনার মতো উপসর্গ ছিল। এদের মধ্যে জ্বর, শুষ্ক কাশি, গলা ব্যথা অথবা একই সঙ্গে করোনার তিনটি উপসর্গই উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে উপসর্গহীন মানুষের তুলনায় কোভিড-১৯ এর অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বেশি ছিল। # শারীরিক গঠনের তুলনায় ওজন বেশি এমন মানুষের শরীরে বেশি অ্যান্টিবডির উপস্থিত ছিলো। # যারা নিয়মিত হাত ধুয়ে থাকেন, মুখে কিংবা নাকে হাত দেন না, বিসিজি টিকা নিয়েছেন এবং মধ্যমানের কায়িক পরিশ্রম করেন এমন ব্যক্তিদের সার্স কভ-২-তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম ছিল। # যারা এর আগে রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস অথবা হিউম্যান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তারা কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কম ঝুঁকিতে ছিল। # অন্যদিকে যারা ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন, তারা কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন। # যারা করোনায় আক্রান্ত হননি, তাদের তুলনায় যারা এতে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের রক্তে জিংকের
মাত্রা যথাযথ পরিমাণে ছিল। # জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের শরীরে ভিটামিন ডি- এর অভাব উল্লেখযোগ্য হারে লক্ষ করা গেছে। তবে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি অ্যান্টিবডির ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলেনি। অর্থাৎ, অ্যান্টিবডি রয়েছে এমন মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি বেশি বা কম এমনটা লক্ষ করা যায়নি।
ফলাফলের ভিত্তিতে সুপারিশ: # সংক্রমণের মাত্রা বুঝতে অ্যান্টিবডি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। # মহামারি সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে। # বস্তিবাসী কারো মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দিল কিনা, তা জানার জন্য পদক্ষেপ বাড়াতে হবে। # করোনার উপসর্গ নিয়ে পক্ষপাতমূলক তথ্য সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। # বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। # দেশে গ্রাম ও শহর অঞ্চল লক্ষ্য করে আরও জরিপ, কঠোর নজরদারি চালাতে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com