শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৪:০৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বিশ্বমানের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে : রাষ্ট্রপতি রাসূল (সা.)-এর সীরাত থেকে শিক্ষা নিয়ে দৃঢ় শপথবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে—ড. রেজাউল করিম চৌদ্দগ্রামে বাস খাদে পড়ে নিহত ৫, আহত ১৫ চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ কোরবানির পশু বেশি আছে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী রাজনীতিবিদেরা অর্থনীতিবিদদের হুকুমের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখতে চান: ফরাসউদ্দিন নতজানু বলেই জনগণের স্বার্থে যে স্ট্যান্ড নেয়া দরকার সেটিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার মালয়েশিয়ার হুমকি : হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক হামাসের অভিযানে ১২ ইসরাইলি সেনা নিহত আটকে গেলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থ ছাড় গাজানীতির প্রতিবাদে বাইডেন প্রশাসনের ইহুদি কর্মকর্তার লিলির পদত্যাগ

বাংলাদেশে মুদ্রার নীতিগুলো নিয়ে এডিবির পর্যবেক্ষণ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২২

অতীতের কয়েকটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে এডিবি বলছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোয় মুদ্রানীতির সঞ্চালন ব্যবস্থা তুলনামূলক দুর্বল। তবে বাংলাদেশে মুদ্রার সঞ্চালনে গৃহীত নীতিগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না তা পরিষ্কার নয়। এর একটি কারণ হতে পারে দেশে প্রচলিত ব্যাংকিং পদ্ধতিগুলোর ভিন্নতা। উদাহরণস্বরূপ, রিজার্ভ মুদ্রায় পরিবর্তন এলে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যালান্সশিটে পর্যাপ্ত মাত্রায় প্রভাব নাও ফেলতে পারে। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ প্রবণতায় রেপো রেটে পরিবর্তনের তেমন কোনো প্রভাব নাও দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে হয়তো দেশের ব্যাংক খাতের উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে থাকা ইসলামিক ব্যাংকিং পদ্ধতিটাই পার্থক্য তৈরি করে দিচ্ছে। এছাড়া তুলনামূলক ক্ষুদ্রায়তনের আর্থিক বাজার ও অনুন্নত অ্যাসেট মার্কেটের কারণেও হতে পারে। অর্থনীতিতে আর্থিক বাজারের আয়তন বড় না হলে বা অ্যাসেট মার্কেটের মান ভালো না হলে মুদ্রানীতির সঠিকভাবে কাজ করাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
দেশের মুদ্রা ব্যবস্থায় মুদ্রানীতির উপাদানগুলোর প্রভাব জাতীয় সঞ্চয়পত্রের চেয়েও কম বলে মত দিয়েছে এডিবি। সংস্থাটির বক্তব্য অনুযায়ী, মুদ্রা ব্যবস্থায় মুদ্রানীতির উপাদানগুলোর উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। আবার অর্থনীতিতে সরকারি সঞ্চয়পত্র এমনভাবে প্রভাব ফেলছে, যাতে মনে হতে পারে এটি মুদ্রানীতিরই একটি উপাদান। মুদ্রা ব্যবস্থায় সঞ্চয়পত্রকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের বড় ভূমিকা রয়েছে। সরকারের ঋণ গ্রহণে সঞ্চয়পত্রের ব্যবহার মুদ্রা সঞ্চালন নীতির কার্যকারিতাকে দুর্বল করে ফেলছে। অন্যদিকে এমটু ও মূল্যস্ফীতির ওপর সঞ্চয়পত্রের তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব আছে। গত কয়েক বছরে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে বড় অংকের অর্থ সংগ্রহ করেছে সরকার। বিষয়টি আর্থিক নীতি ও ঋণ ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তুলেছে বলে অভিযোগও উঠেছে। এ বিষয়ে এডিবি মনে করছে, শুধু রাজস্ব নীতি নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার প্রভাবিত করার ক্ষমতাকে সীমিত করে আনে সঞ্চয়পত্রের ব্যাপক ব্যবহার। এজন্য সঞ্চয়পত্র ইস্যু করার ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
দেশের ঋণ বাজারকে আরো শক্তিশালী করে তোলার জন্য বন্ড মার্কেটকে আরো সক্রিয় করে তোলার পরামর্শ দিয়ে সংস্থাটি বলছে, ভালোভাবে সক্রিয় হলে বন্ড মার্কেট দেশের পেনশন ব্যবস্থার উন্নয়নেও সহায়ক হবে। এছাড়া পেনশন তহবিলের মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণের প্রয়োজন পড়ে, যা ঋণ বাজারের বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মুদ্রানীতির বাজারভিত্তিক উপাদানকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিক সুদহারকেন্দ্রিক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে মুদ্রা সঞ্চালন নীতির উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব বলে মনে করছে এডিবি। সংস্থাটির ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির বর্তমান চর্চা মূলত অর্থ সরবরাহকেন্দ্রিক। সুদহারকেন্দ্রিক মুদ্রানীতির দিকে এগিয়ে যেতে হলে বাজারে বিদ্যমান তারল্যের ওপর নজরদারি ও এর সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলোর সম্পর্কে পূর্বাভাস তৈরি এবং কার্যকর মুদ্রাবাজার গড়ে তোলা জরুরি। এর পাশাপাশি উন্নত পুঁজিবাজার গড়ে তোলা গেলে তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারবে।
চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বাজারে সবকিছু হয় না বলে মন্তব্য করেছেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুদ্রাবাজার থেকে শুরু করে পণ্যবাজার পর্যন্ত কিছু ম্যাকানিজম কাজ করে। সরকার সবকিছু এখানে উন্মুক্ত করে দেয় না। বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশের মতো বাজারে এটির দরকারও আছে। ইউরোপের শক্তিশালী কোনো দেশের মুদ্রানীতি দিয়ে বাংলাদেশের মুদ্রানীতির তুলনা করলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব হবে না।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রাগুলো বাস্তবতার নিরিখে পুনর্বিবেচনা করা হয় না। এ কারণে মুদ্রানীতির অনেক লক্ষ্যমাত্রাই বছর শেষে অধরা থেকে যায়। অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির মাত্রা ৪০ শতাংশ ব্যাংক খাতের আওতায় এসেছে। এ কারণে নীতি সুদহারের বড় কোনো প্রভাব সামগ্রিক অর্থনীতিতে পড়ে না। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে নীতি সুদহার কমানোর কোনো প্রভাব নেই বললেই চলে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, উন্মুক্ত অর্থনীতির এ যুগে পণ্যের মূল্য বাজার ব্যবস্থাই ঠিক করে। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের ব্যাংক খাতের ঋণ ও আমানতের সুদহার যথাক্রমে ৯-৬ শতাংশে বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ব্যাংক খাতের ওপর মুদ্রানীতির উপকরণগুলোর কোনো প্রভাব অবশিষ্ট থাকার কথা নয়। ব্যাংকগুলোর সামর্থ্য ও বাজার পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে মুদ্রানীতির লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
জাতীয় বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। আর প্রবৃদ্ধির সে লক্ষ্যকে সহজতর ও ত্বরান্বিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম প্রধান অস্ত্র হলো মুদ্রানীতি। রেপো, রিভার্স রেপোসহ মুদ্রানীতির প্রধান উপকরণগুলোর সার্থক প্রয়োগের মাধ্যমে মুদ্রাবাজারের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও দেশের মুদ্রাবাজার বা ব্যাংক খাতে মুদ্রানীতির উপকরণগুলো ক্রমেই গুরুত্ব হারাচ্ছে বলে মনে করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতির টুলস বা উপাদানগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ হলো, বাংলাদেশে মুদ্রার সঞ্চালনে গৃহীত নীতিগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না। এখানে অর্থনীতিতে মুদ্রানীতির উপাদানগুলোর (যেমন সঞ্চিত মুদ্রা এবং নীতি সুদহার) বাস্তবিক প্রভাব তাত্ত্বিক বর্ণনা থেকে অনেকটাই ভিন্ন।
এ বক্তব্যের সপক্ষে উদাহরণ দিতে গিয়ে এশীয় ঋণদাতা সংস্থাটি বলছে, দেশে রিজার্ভ মুদ্রা বৃদ্ধি বা রেপো রেট (নীতি সুদহার) হ্রাস করা হলেও এম২ (অর্থ সরবরাহ) বৃদ্ধি পাচ্ছে না। মুদ্রাস্ফীতিতেও এর প্রত্যক্ষ প্রভাব নেই। বিষয়টি মুদ্রাতত্ত্বে বর্ণিত মুদ্রার প্রবাহ সহজীকরণ পদক্ষেপের প্রভাবের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এডিবির ভাষ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার কমালেও দেশের মূল্যস্ফীতি বাড়ছে না। আবার ব্যাপক মুদ্রার (এম২) বড় পরিবর্তন এলেও সেটি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যালান্সশিটে পরিবর্তন ঘটাতে পারছে না। আবার সরকারের সঞ্চয়পত্র মুদ্রানীতির উপকরণ না হলেও অর্থনীতিতে এর কার্যকর প্রভাব দৃশ্যমান।
‘মনিটারি পলিসি ট্রান্সমিশন ম্যাকানিজম অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সা¤প্রতিক প্রতিবেদনে এডিবির এ পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। তবে এ পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. হাবিবুর রহমান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইউনিটের দায়িত্বে থাকা এ গবেষক বলেন, এডিবি ভুল তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। সংস্থাটি থেকে গবেষণাপত্রটির জন্য আমাদের কাছে মতামত চেয়েছিল। তখন আমি তাদের পর্যবেক্ষণের ভুলত্রুটিগুলো তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বক্তব্য জানিয়েছিলাম। দেশের মুদ্রাবাজারের জন্য আমাদের ঘোষিত মুদ্রানীতি যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। আমরা যখন বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে চেয়েছি, তখন বাজারে তারল্যের প্রবাহ বেড়েছে। আবার যখন তারল্য প্রবাহ কমাতে চেয়েছি, তখন মুদ্রাবাজারে তারল্য কমেছে। কার্যকর মুদ্রানীতি না হলে এমনটি সম্ভব হতো না।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com