বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
রোনালদোর মতো কোকাকোলার বোতল সরিয়ে দিলেন সিকান্দার রাজা শ্রমিকদের অবিলম্বে অধিকার-ভিত্তিক ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার দেয়ার সুপারিশ সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর ইন্তেকাল এক কলসি পানির জন্য ১ ঘণ্টা অপেক্ষা হলুদ থেকে সবুজ: অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জার্সি উন্মোচন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশের পাশে আছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন, দেখে দুদক বললো ‘নিম্নমানের কাজ’ সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এক যুগ পর জগুনা বিবিকে ফিরে পেলেন পরিবার ফোন ১০০ শতাংশ চার্জ করা ভালো নাকি খারাপ? জামালপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মে দিবস পালিত

নিরাপদ সড়কে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২২

দেশে প্রথমবারের মতো নিরাপদ সড়ক করিডোর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ‘নিরাপদ করিডোর’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে জাতীয় মহাসড়ক এন-৪-এর গাজীপুর-টাঙ্গাইল ও এন-৬-এর নাটোর-নবাবগঞ্জ অংশকে। নিরাপদ সড়কে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা। কোনো যানবাহন ট্রাফিক আইন ভাঙলেই ধরে ফেলবে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সেখান থেকে বার্তা পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে টহল কিংবা ট্রাফিক পুলিশ। দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত পৌঁছে যাবে অ্যাম্বুলেন্স। বিনামূল্যে পৌঁছে দেবে নিকটবর্তী হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য থাকবে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী ও ট্রমা সেন্টার। সড়ক দুটি নিরাপদ রাখতে সার্বক্ষণিক কাজ করবে একাধিক সরকারি-বেসরকারি সংস্থা। বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ রোড সেফটি প্রজেক্ট’-এর মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে নিরাপদ করিডোর হিসেবে গড়ে তোলা হবে এ দুই মহাসড়ক। পর্যায়ক্রমে নিরাপদ করে এ পদক্ষেপ দেশের অন্য গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কেও গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, উদ্যোগটির মাধ্যমে একদিকে যেমন সড়কে দুর্ঘটনা কমবে, তেমনি বাড়বে যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা।
সওজ ছাড়াও নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলার কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত হবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পুলিশ। এসব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও (এনজিও)।
পরীক্ষামূলক এ প্রকল্প দেশের সড়ক নিরাপত্তার উন্নয়নে কতটা ভূমিকা রাখবে, জানতে চাইলে সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) মনির হোসেন পাঠান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ হলো ট্রাফিক আইন-কানুন সম্পর্কে সড়ক ব্যবহারকারীদের অসচেতনতা এবং আইন না মানার প্রবণতা। সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলোতে আমরা বিষয়টিকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা সড়ক ব্যবহারকারীদের একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চাই। এ কাজটি সফলভাবে করতে সক্ষম হলে তা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রাথমিকভাবে জাতীয় মহাসড়ক এন-৪-এর গাজীপুর-টাঙ্গাইল অংশের ৭০ কিলোমিটার ও এন-৬-এর নাটোর-নবাবগঞ্জ অংশের ৭০ কিলোমিটারে বাস্তবায়িত হবে এ প্রকল্প। গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে। আর নাটোর-নবাবগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলে দিনে প্রায় ১০ হাজার। দুটি মহাসড়কই দুর্ঘটনাপ্রবণ। এর মধ্যে গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের হার প্রতি কিলোমিটারে দশমিক ২৪। আর নাটোর-নবাবগঞ্জে মহাসড়কে প্রতি কিলোমিটারে দশমিক শূন্য ৮।
সওজের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে সড়ক নিরাপত্তায় কাজ করবে। এর মধ্যে সওজ বিদ্যমান মহাসড়ক দুটির প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ করবে। পর্যাপ্ত সাইন-সিগন্যাল স্থাপন, পার্কিং ও যানবাহন মেরামতের জায়গা নির্ধারণসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবে সংস্থাটি।
মহাসড়ক দুটির শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ। এজন্য একটি স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। সড়কের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চিহ্নিত, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরবরাহ করা হবে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম। পাশাপাশি মহাসড়ক দুটি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে যানবাহন চলাচলসহ মহাসড়ক দুটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এসব কাজে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে বিআরটিএ। পাশাপাশি পরিবহন চালক, যাত্রী, পথচারীসহ সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করবে সংস্থা দুটি।
দুর্ঘটনায় হতাহতদের চিকিৎসার জন্য সার্বক্ষণিক লাইফ সাপোর্ট সুবিধা সংবলিত অ্যাম্বুলেন্স প্রাপ্তির জন্য কাজ করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ অ্যাম্বুলেন্সটি প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। আহত যাত্রীকে বিনামূল্যে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে পৌঁছে দেবে এ অ্যাম্বুলেন্স। বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা ছাড়াও দুর্ঘটনাস্থলেই আহত যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য থাকবে একটি বিশেষ ইউনিট। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজটি করবে। এসব কাজের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইন অনুসরণ করে মহাসড়ক দুটিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি, সরঞ্জাম সরবরাহ এবং ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়োজিত রাখা হবে।
যদিও প্রকল্পটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সওজের একজন প্রকৌশলী নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলার কাজটিকে চ্যালেঞ্জিং বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলার কাজটি করার ক্ষেত্রে আমরা সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়ছি সবগুলো সংস্থাকে এক ছাতার মধ্যে আনতে। একটি সংস্থা কাজ করতে রাজি হলে আরেকটি বেঁকে বসছে। সমন্বয় কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নিরাপদ মহাসড়ক গড়ে তোলার এ প্রকল্পটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকার কথা জানিয়েছেন সওজের প্রকৌশলীরা। তারা বলছেন, মহাসড়ক দুটিকে নিরাপদ করে গড়ে তুলতে কী কী ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ, সরঞ্জাম সরবরাহ এবং মানবসম্পদ নিয়োজিত করা হবে, তা বিস্তারিতভাবে ঠিক করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির সময়। বর্তমানে এ কাজগুলো চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সওজের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেন, টেকসই ও নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় নিরাপদ সড়ক করিডোর গড়ে তোলার কাজটি দেশের দুটি মহাসড়কে পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্য সব গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের এমন নিরাপদ করিডোর গড়ে তোলা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে গাজীপুর-টাঙ্গাইল ও নাটোর-নবাবগঞ্জ মহাসড়ককে নিরাপদ করিডোর হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওতে আইটিএসের মতো উন্নত ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com