দু’একদিনের মধ্যে কঠোর বিধিনিষেধ আসছে
দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সব ধরনের সমাবেশ বন্ধের সুপারিশ করেছে জাতীয় পরামর্শক কমিটি। সংক্রমণ ঠেকাতে কারিগরি কমিটির প্রস্তাবনা অনুযায়ী দু-একদিনের মধ্যেই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল শনিবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে মানিকগঞ্জের গড়পাড়ায় শুভ্র সেন্টারে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। মন্ত্রী আরও বলেন, দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আগের চেয়ে ৪০০ গুণ বেশি। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি। আক্রান্তের হার অতিরিক্ত বাড়লে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালগুলো পুনরায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ডেল্টার মতো ওমিক্রনও মোকাবিলা করা হবে। তবে রোগী ধারণক্ষমতার বেশি হলেই সমস্যা হবে। সেই সমস্যা এড়াতে সবাইকে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। চলমান ইউপি নির্বাচনসহ শপিংমলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার বিষয়টি উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নিয়ম না মানলে দেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হবে।
সব ধরনের সমাবেশ বন্ধের সুপারিশ জাতীয় পরামর্শক কমিটির: করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এ অবস্থায় কমিটির পক্ষ থেকে সব ধরনের সমাবেশ বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লার সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতসহ সারাবিশ্বে কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। আমাদের দেশেও ঊর্ধ্বমুখী। কমিটির ৫০তম সভায় সংক্রমণ আবারও বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। জাতীয় কমিটি সেসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছে। প্রয়োজনে কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিশ্চিতের জন্য আইনি ব্যবস্থা যেমন- মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পরামর্শও দিয়েছে কমিটি। শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা, হাত পরিষ্কার রাখা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে বলে সুপারিশ করে কমিটি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে পুনরায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সব সামাজিক (বিয়ের অনুষ্ঠান, মেলা, ইত্যাদি), ধর্মীয় (ওয়াজ মাহফিল) ও রাজনৈতিক সমাবেশ এ সময় বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছে জাতীয় কমিটি।
সংক্রমণ বেড়ে গেলে তা মোকাবিলায় হাসপাতালের প্রস্তুতি নিতে হবে বলেও জানানো হয়। বিশেষ করে সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ শয্যা, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দেয় কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সভা/কর্মশালার ব্যবস্থা অনলাইনে করা প্রয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণ ও নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীসহ সকলকে দ্রুত টিকার আওতায় আনতে হবে। সকল পয়েন্ট অব এন্ট্রিতে স্ক্রিনিং, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন আরও জোরদার করার সুপারিশও করা হয়।
বুস্টার ডোজ নিয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার মানুষ: দেশে গত মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে করোনা প্রতিরোধে টিকার বুস্টার ডোজের কার্যক্রম। এখন পর্যন্ত তিন লাখ ২৬ হাজার ৯৭১ জন মানুষ বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ সারাদেশে ৫৪ হাজার ৮৬২ জনকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতর এ তথ্য জানিয়েছে।
গত ১৯ ডিসেম্বর দেশে পরীক্ষামূলক বুস্টার ডোজ কার্যক্রম শুরু হয়। সেখানে প্রথমে ডোজ নেন দেশে প্রথম করোনার টিকা গ্রহণকারী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা ডি কস্টা। স্বাস্থ্য অধিদফতর বুস্টার ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও মডার্নার টিকা বেছে নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো তথ্য বলছে, ঢাকা মহানগরীতে ১৮ হাজার ৯৮৯ জনসহ ঢাকা বিভাগে ২৮ হাজার ৫৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে তিন হাজার ৭৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে সাত হাজার ২১১ জন, রাজশাহী বিভাগে ছয় হাজার ৩৭৫ জন, রংপুর বিভাগে পাঁচ হাজার ৯৫৬ জন, খুলনা বিভাগে ৯ হাজার ৬০৫ জন, বরিশাল বিভাগে এক হাজার ৯২৭ জন এবং সিলেট বিভাগে দুই হাজার ৭১৯ জন বুস্টার ডোজ নিয়েছেন।