সানিয়া মির্জাকে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া কিছু নেই! নিজের গুণে বিশ্বব্যাপী আলোচিত তিনি। সানিয়া মির্জা একজন পেশাদার ভারতীয় টেনিস খেলোয়াড়। তিনি ২০০৩-২০১৩ সাল পর্যন্ত এক দশক ধরে ভারতীয় টেনিস অঙ্গনে এক নম্বর অবস্থান করা সর্বোচ্চ রেকর্ডধারী ভারতীয় খেলোয়াড়। ২০১৮ সালে সানিয়া পুত্র সন্তানের মা হন। গর্ভধারণের সময় স্বাভাবিকভাবেই ওজন বেড়ে গিয়েছিলো এই খেলোয়াড়ের। বরাবরই তার ফিটনেস সবাইকে মুগ্ধ করে। তবে গর্ভধারণের কারণে বেড়ে যাওয়া ওজন পরবর্তীতে কমানো ততটা সহজ বিষয় নয়। তবে সানিয়া মির্জা তার শরীরের অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়েছেন তাও আবার স্বাস্থ্যকর উপায়ে।
তার ওজন হয়ে গিয়েছিলো ৮৯ কেজি। তবে বর্তমানে তিনি ফিরে এসেছেন ৬৩ কেজিতে। শরীরের অতিরিক্ত ২৬ কেজি ওজন কমিয়ে তিনি শিরোনামে আসেন। তার এই ফিটনেস অন্যান্য মায়েদের জন্যও অনুকরণীয়। সন্তান জন্মের পর একজন নতুন মা সব সময় সন্তানের দেখভালে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ওই সময় নিজের জন্য সময় বের করে শরীরের যতœ নেওয়া সহজ হয় না। তবে সানিয়ার মতো বদ্ধপরিকর হলে সবই সম্ভব। তিনি একাধারে সন্তান, সংসার, টেনিস খেলা সবই সামলাচ্ছেন নিজ হাতে।
সানিয়ার ওজন কমানো দেখে অনেকেই তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। নিজের প্রতি যতœবান হওয়া ও ব্যাপক শৃঙ্খলা অনুসরণ করে, ৩৫ বছর বয়সী এই খেলোয়ার মাত্র ৪ মাসের মধ্যেই ৮৯ থেকে ৬৩ কেজিতে চলে আসেন। এ বিষয়ে সানিয়া তার ইনস্টাগ্রামে লিখেন,‘৮৯ বনাম ৬৩ কেজি। আমার এই লক্ষ্য অর্জন করতে, সুস্থ ও ফিট হয়ে ফিরে আসতে ৪ মাস সময় লেগেছে।’
অনেকেই ওজন কমাতে না পেরে হাল ছেড়ে দেন। এ বিষয়ে সানিয়া জানান, কয়েকটি মাস দীর্ঘ পথের মতো হয়েছে। ফিটনেস ফিরে পেতে সর্বোচ্চ স্তরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে। তাই হাল ছেড়ে না দিয়ে নিজেকে বিশ্বাস করুন ও স্বপ্ন পূরণ করুন। অন্য কেউ পারলে আপনি কেন পারবেন না, তা নিজেকে বোঝান।’ জানেন কি, গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই সানিয়া নিয়মিত যোগব্যায়াম করতেন। সন্তান জন্ম দেওয়ার মাত্র ১৫ দিন পর থেকেই শারীরিক কার্যকলাপ শুরু করেন সানিয়া। মা হওয়া মানেই শারীরিক ফিটনেস হারানো এই ভুল ধারণা বদলে দিয়েছেন নিজে ওজন কমিয়ে।
সানিয়া মির্জার ডায়েট চার্ট কেমন? সানিয়া মির্জা খেলছেন কি না তার উপর নির্ভর করে ডায়েট পরিবর্তন করেন। খেলার সময় তার আরও শক্তির প্রয়োজন হয়, তাই খাবারে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট রাখেন।
একটি ম্যাচের আগে, তিনি কার্বোহাইড্রেটের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে মসৃণ পাস্তা খান। টেনিসের জন্য কার্বোহাইড্রেট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ম্যাচ চলাকালীন দৌড়ানোর জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। আর টুর্নামেন্ট না থাকলে আবার কার্বোহাইড্রেট খাওয়া কমিয়ে আনেন। তখন প্রোটিন ও ভিটামিনের উপর বেশি মনোযোগ দেন। তিনি সব সময় ক্যালোরির উপর নজর রাখেন। এটি তার প্রোটিন কোটাও পূরণ করে। চ্যাম্পিয়ন যখন তার খাবার হালকা রাখতে চান তখন ডাল ও ভাত খান।
তিনি বেশিরভাগ সময়ই স্বাস্থ্যকর খাবার খান। তবে কখনো সখনো এক টুকরো কেক বা বিরিয়ানিও খান। এই অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়াতে পরের দিন ২০-৩০ মিনিট অতিরিক্ত ওয়ার্কআউট করেন। তার ফিটনেস মন্ত্র হল জাঙ্ক ফুড এড়ানো ও যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক রাখা। সানিয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তার ওয়ার্কআউট রুটিন খেলার মৌসুমের নির্ভর করে। যখন তিনি অফসিজনে থাকেন, তখন ৪-৪.৫ ঘণ্টা শরীরচর্চা করেন। তার ফিটনেস প্রশিক্ষক বারবার অনুশীলনের একটি নতুন সেট প্রবর্তন করেন।
তিনি একটু ওয়ার্ম-আপ দিয়ে তার প্রশিক্ষণ শুরু করেন। যা অনেকগুলো মূল ব্যায়ামের মিশ্রণ, তারপরে ২০-২৫ মিনিটের দৌড়, শক্তি ও গতির প্রশিক্ষণ নেন। কখনো কখনো তিনি দীর্ঘ লাফ কিংবা ওজন উত্তোলন করেন।
একবার এক প্রেস ইভেন্টে সানিয়া বলেছিলেন,তার বয়স যখন ১২ বছর, তখন থেকেই তিনি দিনে ৬ ঘণ্টা অনুশীলন করতেন, যা এখন ৪-৪.৫ ঘণ্টায় নেমে এসেছে। তিনি নিয়মিত কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে সানিয়া এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। ২০১০ সালের এপ্রিলে তিনি পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে বিয়ে করেন। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া/ক্রিডন