করোনা আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন মাস আগে ইন্তেবাল করেছেন বিএনপি সরকারের এক সময়ের প্রতাপশালী নেতা হারিছ চৌধুরী ( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। করোনা আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন মাস আগে তিনি মারা যান। গত ১১ জানুয়ারি মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর জানান তার চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আশিক চৌধুরী। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন হারিছ চৌধুরী। সে সময়ের প্রভাবশালী এই নেতা বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০১৮ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর।
আশিক চৌধুরী ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন’। নিজের ছবির সঙ্গে হারিছ চৌধুরীর একটি ছবি যুক্ত করে তিনি এই স্ট্যাটাস দেন। এরপর স্ট্যাটাসের নিচে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ‘ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন’ লিখে কমেন্ট করতে থাকেন। অনেকে হারিছ চৌধুরীকে নিয়ে আফসোসও প্রকাশ করেন। আশিক চৌধুরী নিউজবাংলাকে জানান, হারিছ চৌধুরী গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝি লন্ডনে করোনায় আক্রান্ত হন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাসায় ফেরেন। কয়েকদিন পর তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভও আসে। করোনার ধকল সাময়িকভাবে কাটিয়ে উঠলেও তার ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান হারিছ চৌধুরী। হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ তার মেয়ে মুন্নু চৌধুরী ফোনে দেশে জানিয়েছেন বলে জানান আশিক চৌধুরী।
জানা গেছে, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে হারিছ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে থাকতেন। তার ছেলে জনি চৌধুরী পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার। আর মেয়ে মুন্নু চৌধুরী ব্যারিস্টার। আগে থেকেই হারিছ চৌধুরী ব্ল্যাড ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। ২০০২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে একবার রক্ত পরিবর্তন করে আসেন। দেশ থেকে পালানোর পর তিনি যুক্তরাজ্যে আরেকবার রক্ত পরিবর্তন করেন বলে জানা গেছে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আক্রান্ত হওয়ার আগে হারিছ চৌধুরী করোনার দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় এবং পুরো ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে পড়ে। ফলে করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও তিনি ফুসফুস জটিলতায় ভুগছিলেন।
জানা যায়, ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির সপ্তাহখানেক পর স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগরে বেড়াতে আসেন হারিছ চৌধুরী। ওই রাতেই যৌথবাহিনী তার বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে তাকে পায়নি। এরপর কয়েক দিন সিলেটের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকেন।
বিএনপি সরকারের দাপুটে এই নীতিনির্ধারক ২০০৭ সালের ২৯ জানুয়ারি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যান । এরপর তিনি ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে নানার বাড়িতে ওঠেন। সেখান থেকে পাকিস্তান হয়ে ইরানে তার ভাই আবদুল মুকিত চৌধুরীর কাছে পৌঁছান এমন খবরও চাউর হয়। ইরানে কয়েক বছর থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে পরিবারের কাছে যান। সেখান থেকে ভারতে যাতায়াত করতেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল করতেন বলে একাধিক সূত্র বিভিন্ন সময় নিশ্চিত করেছে।
প্রসঙ্গত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার ৭ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়। এছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায়ও হারিছ চৌধুরী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তার পরিবারের দাবি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো করেছে।