নিত্যপণ্যের বাজারে সব জিনিসের দাম চড়া। নতুন করে বেড়েছে মসুর ডাল, ডিম, পেঁয়াজ ও জিরা মসলার দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মসুর ডালের দাম। গত সপ্তাহে বড় দানার মসুর ডালের দাম ছিল কেজিতে ৯০ টাকার মতো। এ সপ্তাহে একই ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ছোট দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি ও দেশি দুই ধরনের ডালের দামই বেড়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে তুলনায় বড় দানার মসুর ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ শতাংশের মতো। এদিকে কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম। কিছু দিন আগে ৩০ টাকায় নেমে আসা পেঁয়াজ আবার ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়তি। এখন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ডিমের প্রতি হালিতে দুই টাকা করে বেড়েছে। তবে বেশ খানিকটা কমেছে মুরগি ও আদার দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে রাজধানীর বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা এবং পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এতে দুই সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২৫ টাকা এবং আর সোনালি মুরগি ৮০ টাকা পর্যন্ত কমলো।
শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর কাওরান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি গেলো একসপ্তাহে কমেছে সোনালি ও লাল লেয়ার মুরগি দাম। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা। গত সপ্তাহে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া লাল লেয়ার মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা।
এদিকে মুরগির দাম কমলেও ভরা মৌসুমেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। এমনকি সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজির দাম বাড়ার ঘটনা ঘটেছে। সব থেকে বেশি বেড়েছে শশার দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে শশার দাম বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ফুলকপি ও শিম। গোপিবাগ বাজারে ব্যবসায়ীরা শশার কেজি বিক্রি করছেন ৬০ থেকে ৮০ টাকা। গত সপ্তাহে এই শশার কেজি ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। অর্থাৎ একসপ্তাহে শশার দাম বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে। শশার পাশাপাশি গত একসপ্তাহে বেড়েছে ফুলকপির দাম। গত সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস বিক্রি হওয়া ফুলকপির দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। গত সপ্তাহের মতো পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, শালগমের (ওল কপি) কেজি ৪০ টাকা। বরবটির কেজি ৭০ টাকা। মাছবাজারে দেখা যায়, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোল মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে। এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ছোট ইলিশ মাছের কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
মুরগি ও সবজির দাম কমছেই না: গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৭৫ টাকা দরে, এক সপ্তাহ আগেও যার দাম ছিলো ১৮০-১৮৫ টাকা। আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৬০ টাকা দরে, গত সপ্তাহে যার দাম ছিলো ২৬০-২৮০ টাকা। মুরগির দাম কমায় ক্রেতারা স্বস্তি পেলেও শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুমেও সবজির দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বাজারে। কিছু সবজিরে দাম আগের মতোই থাকলেও উল্টো বেড়ে গেছে শশাসহ কয়েকটি সবজির দাম।
গত সপ্তাহের ২০-৩০ টাকা দরের শশা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০-৮০ টাকা দরে, গেলো সপ্তাহের চেয়ে যা প্রায় তিনগুণ। শীতকালীন সবজি ফুল কপির দামও বেড়েছে আগের চেয়ে। ২০-৩০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে পিস প্রতি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০- ৬০ টাকা। শশার এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিক্রেতারা শশার সরবরাহ হঠাৎ করেই কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন। শশা, ফুলকপির সাথে শিমের বাজারও চড়া এই সপ্তাহে। প্রায় ২০ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা দরে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির মতো সব ধরনের চালের মূল্য বেড়ে গেছে সপ্তাহের ব্যবধান। সব ধরনের চালই কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে আগের সপ্তাহের চেয়ে ২-৩ টাকা বেশি দরে। বাজারে অপরিবর্তিত আছে গাজর, বরবটি, টমেটোসহ কিছু সবজির দাম। বরবটির কেজি গেলো সপ্তাহের মতোই ৬০-৭০ টাকা, টমেটো বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০-৫০ টাকা করে। শীতের পালংশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১৫-২৫ টাকা করে। এদিকে মাছের বাজার আগের মতোই স্থিতিশীল আছে বলে জানান বিক্রেতারা। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১১০০-১২০০ টাকায়, রুই মাছের কেজি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। চিংড়ির দামও আগের মতোই ৫৫০-৬৫০ টাকা।