নওগাঁর ঠাঁঠা বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে খ্যাত সাপাহার উপজেলার কৃষি খাতে অনেকটাই সম্ভাবনাময় বল সুন্দরী বরই চাষ। ইতোমধ্যে সারাদেশে এই উপজেলা আমের রাজধানী হিসেবে বিশেষ ভাবে পরিচিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার আশায় বরই চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে ইতিমধ্যে নানান জাতের বরই সংগ্রহ ও বাজারজাত করণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বরই। শুরুতেই বাজারদর ভালো থাকার ফলে সন্তোষ প্রকাশ করছেন বরই চাষীরা। স্বল্পমেয়াদে অধিক ফলন ও লাভবান হবার ফলে বরইচাষে আগ্রহের সীমা নেই এলাকার চাষীদের। উপজেলা সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতাউর রহমান সেলিম জানান, চলতি বছরে এই উপজেলায় মোট ২৫ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বরই। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাত গুলো হলো-কাশ্মীরি, বলসুন্দরী, বাহুকুল, আপেলকুল। তবে বেশিরভাগ চাষীরা বলসুন্দরী ও আপেলকুল চাষ করছেন। এই মৌসুমে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রতি হেক্টর জমিতে ৬/৮ মেট্রিকটন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বলসুন্দরী জাতের বরই এর বাজার চাহিদা বেশ ভালো। খেতে সুস্বাদু হবার ফলে বেশিরভাগ চাষীরা বলসুন্দরী জাতের বরই চাষ করছেন।কাশ্মীরি জাতের বরই নির্ধারিত সময়ের পরে ফলন হয়। যার জন্য এই জাতের বরইও চাষ করছেন অনেকেই। তিনি আরো বলেন , আম চাষ ব্যাপক লাভজনক। কিন্তু আম গাছ রোপনের পর প্রায় দু বছর পর আম পাওয়া সম্ভব। বরই চাষে তেমন বেশি সময় লাগেনা। স্বল্প সময়ে পাওয়া উৎপাদন সম্ভব হওয়ায় এটি একটি লাভজনক চাষ বটে। যার ফলে কৃষকেরা বর্তমানে বরই চাষে ব্যাপক ভাবে ঝুঁকে পড়েছেন। বরই চাষী সিরাজুল ইসলাম জানান, গত বছরে তিনি বরই চাষ শুরু করেন। আবহাওয়া ও মাটির গুণগত মান ভালো হবার ফলে বরইয়ের উৎপাদন অনেক ভালো। হারভেষ্টিংয়ের পরে পাইকারেরা জমিতে এসে বরই নিয়ে যাচ্ছেন। চলতি বছরে বাজারে বলসুন্দরী জাতের বরই প্রতিমন বিক্রয় হচ্ছে ২২ থেকে ২৪ শ’ টাকা। এরকম বাজার স্থিতিশীল থাকলে বরই চাষে অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব। বরই চাষী ইমরান হোসেন জানান, তিনি একজন ফল চাষী। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বরইবাগান দেখে এসে বরইয়ের বাগান করার প্রতি উদ্বুদ্ধ হন। যার ফলস্বরূপ বিভিন্ন এলাকায় তিনি ৬০ বিঘা বরইয়ের বাগান করেছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় বরই অধিক লাভজনক চাষ বলেও জানান তিনি। বরই বাগানে তেমন কোন পরিচর্যা করতে হয়না। প্রথমে গাছ লাগানো এবং জমি তৈরীর পর কীটনাশ ও যৎসামান্য পরিচর্যা ছাড়া কঠিন কোন পরিচর্যা করতে হয়না বলছেন বাগান পরিচর্যাকারীরা। ঠাঁঠাঁ বরেন্দ্রখ্যাত এ অঞ্চল বরই চাষে কৃষিখাতে একটি নতুন সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন এলাকার অভিজ্ঞমহল।