অপরূপ সৌন্দর্যের লীলভূমি বান্দরবান জেলা। এ জেলায় রয়েছে পর্যটকদের জন্য নয়ন ও প্রাণজুড়ানো সব দর্শনীয় স্থান। এবার এ জেলায় যুক্ত হয়েছে নতুন আরেকটি পর্যটনকেন্দ্র ‘তমা তুঙ্গী’। আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার এক মাস না পেরোতেই তমা তুঙ্গীতে এখন পর্যটকের সরব উপস্থিতি। প্রাণচঞ্চলতায় ভরে উঠেছে এ মনোরোম এলাকা।
দুটি ভাগে বিভক্ত করে গড়ে তোলা এ পর্যটনকেন্দ্রর চারপাশেই সবুজ পাহাড়ের সমারোহ। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো তমা তুঙ্গী পাহাড় থেকে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কেওক্রাডং পর্বতশৃঙ্গ আর সা¤প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় পর্যটন সড়ক ডিম পাহাড় দেখার সুযোগ। ছবি তোলার জন্য আকর্ষণীয়ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে তমা তুঙ্গীকে। তাই নতুন হলেও প্রতিদিন সেখানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, চারপাশেই সবুজ পাহাড়ের সমারোহ। ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট-১ ও ও ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট-২ নামে পাশাপাশি দুটি স্থান রয়েছে তমা তুঙ্গীতে। এর মধ্যে ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট-১ থেকে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং এবং ডিম পাহাড় দেখা যায়।
দিক নির্ণয়ের জন্য সেখানে তিনটি ভিউ পয়েন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যটকেরা সেখানে গেলেই এ তিন স্থান দেখার সুযোগ পান। বসার জন্য তৈরি করা হয়েছে কয়েকটি বেঞ্চ। পর্যটকেরা বসে চারদিকের দৃশ্য দেখতে পান। রয়েছে ছোট্ট একটি পানির ফোয়ারা। ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে বিশাল জায়গা।
ট্যুরিস্ট ভিউ পয়েন্ট-২-এ রয়েছে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার ব্যবস্থা। বিশাল একটি বৃক্ষ ছায়া দিয়ে রাখছে পুরো পর্যটন এলাকাকে। পর্যটকরা সেখানে বেড়াতে গেলে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে অন্য রকম আনন্দ উপভোগ করেন। সেখানে গেলে মনে হয়, ছবি তোলার জন্য আকর্ষণীয়ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে তমা তুঙ্গীকে। তাই নতুন হলেও দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম বা দেশের যেকোনো স্থান থেকে সড়কপথে বান্দরবান গিয়ে সেখান থেকে থানচি উপজেলায় যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। জেলা সদর থেকে বাস, জিপ, মাইক্রো অথবা মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে থানচির তমাতুঙ্গী যাওয়া যায়। সদর থেকে সড়কপথে তিন ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে থানচি সদরে গিয়ে সেখান থেকে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিটের পথ গেলেই তমা তুঙ্গী পর্যটন স্পট।
সূত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের (ইসিবি) উদ্যোগে থানচি উপজেলা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে তমা তুঙ্গী নামে পর্যটনকেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। থানচি-রিমাকরী-মদক-লিকরি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করার সময় তমা তুঙ্গী পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলে সেনাবাহিনীর ইসিবি ব্রিগেড।
২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর পর্যটনকেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ৩৪ ইসিবির ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মনজুরুল ইসলাম এর উদ্বোধন করেন। তবে উদ্বোধনের আগে থেকেই তমা তুঙ্গীর নাম ছড়িয়ে পড়ে পর্যটকদের কাছে। থানচি ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকরা তমা তুঙ্গীতে ছুটে যান নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে।
থানচি সদরের বাসিন্দা থুইনুচিং মারমা, শিউলী তঞ্চঙ্গ্যা, রূপালী ত্রিপুরা, ফিলিপ ত্রিপুরা, জুয়ের ম্রোসহ আরও কয়েকজন বলেন, যাতায়াতের সুবিধা থাকায় পর্যটকরা সহজেই তমা তুঙ্গীতে যেতে পারেন। এতে যাতায়াত খরচ খুবই কম। বিকেলের আড্ডার জন্যও উপযুক্ত স্থান এটি। তাই পর্যটকদের কাছে তমা তুঙ্গী পছন্দের স্থান হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
ঢাকা থেকে তমা তুঙ্গীতে বেড়াতে আসা পর্যটক নাসিব ইকবাল জানান, জেলা সদর থেকে অনেক দূরে হলেও যাতায়াতের সুবিধা থাকায় অনায়াসেই জিপ, মাইক্রো বা বাসে চেপে কিংবা মোটরসাইকেলে চড়ে তমা তুঙ্গী যাওয়া যায়, এমন প্রশস্ত রাস্তা বান্দরবানের আর কোনো পর্যটন কেন্দ্রে দেখা যায় না।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতাউল গণি ওসমানী বলেন, বান্দরবানের যে কয়েকটি উপজেলা রয়েছে, তার মধ্যে থানচি পর্যটনে অপূর্ব। কেননা এখানে সবকিছুই রয়েছে। পর্যটকদের বেড়ানো আর উপভোগের জন্য এ উপজেলার পথে-প্রান্তরে রয়েছে মেঘ, পাহাড়, নদী আর ঝরনাসহ অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র। তিনি আরও বলেন, তমা তুঙ্গী চালু হওয়ায় এই উপজেলায় আগের চেয়ে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে পর্যটকরা যাতে নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন, তার জন্য উপজেলা প্রশাসন সার্বিক তদারকি অব্যাহত রেখেছে।