মেঘনাতে মৌসুম ছাড়া জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে-ঝাঁকে ইলিশ। এবছর বর্ষা মৌসুমে ইলিশের আকাল ছিলো। জেলে ও মৎস্য অফিস সুত্রে জানা যায়, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস ইলিশের ভরা মৌসূম। এই সময়ে ইলিশে মেঘনা নদী জূড়ে থাকে। কিন্তু সেই বর্ষা মৌসুমে ইলিশের দেখা মেলে নাই জেলেদের জালে। যার কারণে জেলে এবং আড়ৎদারেরা লোকসান গুনতে হয়েছে। বর্ষা মৌসুম পরে সাধারণত ইলিশ মাছ মেঘনায় দেখা মেলেনা, কিন্তু এই অসময়ে ভোলার মেঘনা নদী ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে-ঝাঁকে রুপালী ইলিশ সহ সামুদ্রিক মাছ। ছোট বড় এসব ইলিশ বেপারীরা চালান করছেন ঢাকা, চাঁদপুর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন মোকাম ও আড়ৎদে। এছাড়া স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রচুর ইলিশের দেখা মিলছে। সাধারণত এ সময়ে বাজারে তেমন ইলিশ থাকেনা। তবে এবছর ছোট-বড় ইলিশের ছড়াছড়ি দেখে অবাক ক্রেতারা। বাজার চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক, দামও ক্রেতাদের নাগালে। পৌষ-মাঘ মাসে অসময়ে ভোলার মেঘনায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। এখানকার জেলে, আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীরা ইলিশকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া দাম সস্তা, তাই জেলার মাছঘাট ও হাট-বাজারগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষণীয়। গভীর রাত পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে সুস্বাদু রূপালি ইলিশ। সোমবার ১৭ই(জানুয়ারী) বিকালে শশীগঞ্জ মাছঘাট ও বাজার ঘুরে দেখা যায়, একেকটি মাছ ২৫০-৪০০ গ্রাম ওজনের প্রতি হালি (৪টা) ইলিশ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, ৪৫০-৭০০ গ্রামের প্রতি হালি ইলিশ ৯০০ থেকে ১৬০০ টাকা এবং প্রতিটি ৭৫০-৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতি হালি ইলিশ ১৭০০ থেকে ২৫০০ টাকা, ১ কেজির উপরে প্রতি হালি (৪টা) ২৬শ’ থেকে ৩৫শ’ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। অথচ বর্ষার মৌসূমে ১ কেজির বেশী ওজনের ইলিশের হালি বিক্রি হয়েছে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকায়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি আবুল হাসেম মহাজন। মাছ ধরে ফিরে আসা শশীগঞ্জ ঘাটের জেলে মফিজ মাঝী জানান, ছোট নৌকায় ৬ জেলে নিয়ে মাছ ধরে একদিন পরপর ঘাটে আসি, মাছ বিক্রি করে ১৯ হাজার ৫শত টাকা হাতে পেয়েছি। আলাউদ্দিন মাঝী, জামাল মাঝী, মতিন মাঝিসহ কয়েকজন জানান, এখন তারা দৈনিক ২০-২৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে পাড়লেও বর্ষা মৌসূমে দৈনিক সর্বোচ্চ ১০হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে পারেনি। বর্তমানে এসব জেলেরা সংসার পরিচালনা করে দেনা পরিশোধ করার আশা করছেন। চৌমুহনী বাজার এলাকার শ্রমজীবী আশ্রাফ, আরিফ বলেন, বর্ষার চেয়ে ইলিশের দাম অনেক কম হওয়ায় ছোট বড় মিলিয়ে ১০ হালি ইলিশ কিনেছি। মেঘনার টাটকা ইলিশ অনেক সুস্বাদু। ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজহারুল ইসলাম বলছেন, ইলিশের প্রজনন মৌসূম, অভয়াশ্রম, জাটকা রক্ষা অভিযান, অবৈধ জাল উচ্ছেদের অভিযান ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ রক্ষা অভিযান বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় নদ-নদীতে সফল ভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা সব ধরনের মাছ শিকার থেকে বিরত ছিলেন। সকল নিষেধাজ্ঞা মেনে জেলেদের অবরোধ পালন ফলপ্রসূ হয়েছে।