শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:৫৮ অপরাহ্ন

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে বিশ্লেষকদের দুই পরামর্শ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২২

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে দুটি পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, খোলাবাজারে চালের বিক্রি বাড়াতে হবে। সঙ্গে পরিমাণও। এ ছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা কঠোর করতে হবে। মিল থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত চাল সরবরাহ ব্যবস্থায় কঠোর নজরদারি করতে হবে, বর্তমানে যা খুবই দুর্বল। মাঠ থেকে শতভাগ আমন ধান উঠে গেছে। চালের সরকারি মজুদও যথেষ্ট। তার পরও বাজারে কমছে না চালের দাম। উল্টো মিলগেট, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েই চলেছে। খুচরায় এই দাম ক্রেতাসাধারণের নাভিশ্বাস তুলেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজখবর নিয়ে এবং কথা বলে যে চিত্র পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায়, মোটামুটি ছয় কারণে কমছে না চালের দাম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ ভোক্তা চিকন ও মাঝারি মানের চাল খায়। এই চাল উৎপাদন হয় বোরো মৌসুমে। গত বোরো মৌসুমের ধান-চালের মজুদ প্রায় শেষ। ফলে সরবরাহ কম। আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় পরিবহন খরচ বেড়েছে। বাড়তি এই পরিবহন খরচ চালের দামে প্রভাব ফেলেছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় ব্র্যান্ড কম্পানিগুলো বাজারে আসায় চালের মজুদদারি বেড়েছে। আবার সরকার ধানের চেয়ে চাল বেশি কেনায় মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই দাম কমাতে বাজার তদারকির বিকল্প নেই। এছাড়া ওএমএসর কার্যক্রম বৃদ্ধি পেলে দাম কমে আসবে বলেও জানান তারা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে চালের দাম ৪ শতাংশ বেড়েছে। আর গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৮ শতাংশ। সর্বাধিক বেড়েছে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম।
রাজধানীর বাবুবাজার, বাদামতলী ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আড়তগুলোয় বর্তমানে চিকন চাল জিরা নাজিরশাইল বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ থেকে ৬১ টাকা কেজি দরে। আর কাটারি নাজির (পুরনো) বিক্রি করা হচ্ছে ৬৭ টাকা কেজি দরে। সেগুনবাগিচা, মালিবাগ, মুগদাসহ রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ওই একই চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৬৬ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। পাইকারি থেকে খুচরায় কেজিতে দাম বেশি তিন থেকে ছয় টাকা। পাইকারি বাজারগুলোয় আকিজ, এসিআই, তীর, প্রাণ, রশিদ, মজুমদার, সিরাজÍএসব ব্র্যান্ডের চালের পরিমাণ বেশি। বর্তমানে পাইকারিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৫৭ থেকে ৬১ টাকা কেজি দরে। আর খুচরা বাজারে এই চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। পাইকারি ও খুচরায় কেজিতে দামের পার্থক্য চার থেকে পাঁচ টাকা।
পাইকারি বাজারে বিআর আঠাশ ও উনত্রিশ বিক্রি করা হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৭ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজারে এই চাল ভোক্তারা কিনছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে। দুই বাজারে কেজিতে দামের পার্থক্য পাঁচ থেকে ছয় টাকা। পাইকারি বাজারে পাইজাম বিক্রি করা হচ্ছে ৪৪ টাকা কেজি দরে। খুচরায় তা ৪৮ টাকা কেজি। দামের পার্থক্য চার টাকা। তবে উপজেলা পর্যায়ে ওএমএস কার্যক্রমের মাধ্যমে চাল বিক্রি শুরু হওয়ায় বাজারে দাম কমবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, মিলগেট থেকে পাইকারি বাজার পর্যন্ত পরিবহন খরচ কেজিতে এক টাকা ২০ পয়সা থেকে এক টাকা ৪০ পয়সা। মিলগেট থেকে ঢাকার পাইকারি বাজারে লাভসহ কেজিতে দাম বাড়ে দুই টাকা ৪০ পয়সা। রাজধানীর পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত পরিবহন খরচ হয় বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০ থেকে ১২ টাকা। আর রাজধানীর আশপাশের উপজেলায় নিতে বস্তাপ্রতি খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ টাকা। লেবার খরচ হয় প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ পয়সা। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, গড়ে সরকারের গুদামে সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন বা দেশের মোট চাহিদার ১৫ দিনের চাল মজুদ থাকলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত সপ্তাহের হিসাবে সরকারি গুদামে ১৯.৭৮ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এর মধ্যে চাল রয়েছে ১৬.০৯ লাখ মেট্রিক টন। তবে ধানের পরিমাণ কম, মাত্র ৩৮ হাজার মেট্রিক টন। পাইকারি আড়তগুলো ঘুরেও দেখা গেছে, ১০ থেকে ১৫ দিন বিক্রি করার মতো চাল তাদের মজুদ রয়েছে।
এত মজুদের পরও চালের দাম না কমার কারণ নিয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘চালের দাম বাড়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। মিলাররা সরকারি গুদামে চাল দিলেও খোলাবাজারে সঠিকভাবে সরবরাহ করছে না। ইচ্ছামতো সরবরাহ করে বাজারে দাম বাড়াচ্ছে। আবার এক শ্রেণির ব্যবসায়ী চাচ্ছেন দেশে চাল আমদানি হোক। এর জন্য দাম বাড়িয়ে বাজারে চাপ তৈরি করছেন। তৃতীয়ত, বড় মিলাররা, বিশেষ করে করপোরেট কম্পানিগুলো চালের বাজার ও ছোট ছোট মিল নিয়ন্ত্রণ করছে। ’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নওগাঁ ও কুষ্টিয়ার বাজারগুলোয় ধানের সংকট নেই। গত বছরের তুলনায় দামও বাড়েনি। নওগাঁ সদর উপজেলা ধান-চাল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দীন খান টিপু জানান, বর্তমানে হাটগুলোয় প্রতি মণ (৩৭.৫ কেজি) স্বর্ণা ধান সংগ্রহের পর মিল পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ পড়ছে এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৫৫ টাকা, যা গত বছর একই সময়ে ছিল এক হাজার ১৩০ থেকে এক হাজার ১৪০ টাকা। বর্তমানে নাজিরশাইল (সরু) ধান সংগ্রহের পর মিল পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ পড়ছে মণপ্রতি এক হাজার ৪৪০ টাকা। গত বছর একই সময়ে ছিল এক হাজার ৩৭২ টাকা।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (মার্কেটিং) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘কৃষকের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। ফলে আমাদের বাড়তি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। এই ধান থেকে চাল উৎপাদন করায় দাম কিছুটা বেশিই পড়ছে। ’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com