অবশেষে অনশন ভেঙ্গেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অনশনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার মাঝরাতে শাবিপ্রবির সাবেক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের আশ্বাসে অনশন ভাঙতে রাজি হন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার সকাল ৮টায় সকলে একযোগে অনশন ভাঙবেন শাবিপ্রবির উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে অনশনে বসা শিক্ষার্থীরা। বুধবার মাঝরাতে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী ও অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করে জনপ্রিয় লেখক ও অধ্যাপক জাফর ইকবাল তাদের অনশন ভাঙতে অনুরোধ করেন। তার কথার আশ্বাসেই অনশন ভাংছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন জনপ্রিয় এই লেখক এবং তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতের শুরুতে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে বুধবার রাত ৪ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছান শাবিপ্রবির সাবেক এই দুই অধ্যাপক। তারা গিয়েই শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করে সার্বিক পরিস্থিতির ব্যাপারে খোঁজখবর নেন এবং তাদের সকল দাবি পূরণ হবে আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙতে অনুরোধ করেন।
শিক্ষার্থীদের প্রিয় শিক্ষক জাফর ইকবাল এসময় বলেন, ‘আজ উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আমার বাসায় আলোচনা হয়েছে। তারা আমার বাসায় এসেছিল। তারা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তোমরা যা চাইছো, তোমাদের সকল দাবি পূরণ হবে। তোমাদের উছিলায় বাংলাদেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ঠিক হবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা আর দেরি করিনি, সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে এসেছি। আমরা তোমাদের অনশন না ভাঙিয়ে কোনোভাবেই ফিরবো না।’ শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হবে এটি নিশ্চিত হয়েই এসেছেন বলেও জানান ২৫ বছরের শিক্ষকতা জীবন ছেড়ে ২০১৯ সালে অবসরে যাওয়া সাবেক এই অধ্যাপক।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের পানি পান না করিয়ে তিনি ক্যাম্পাস ছেড়ে যাবেন না বলেও ঘোষণা দেন এসময়। প্রিয় শিক্ষকের কাছে এমন আশ্বাস পেয়ে তারপরেই শিক্ষার্থীরা সকাল ৮টায় অনশন ভাঙতে রাজি হয়। এদিকে শিক্ষার্থীদের অর্থ যোগানের অভিযোগে আটক সাবেক ৫ শিক্ষার্থীর জামিন দিয়ে দেয়া হবে বলে আশ্বাস পেয়েছেন এমন কথা জানিয়ে তিনি নিজে ১০ হাজার টাকা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়ে বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি আর্টিকেল লিখে ১০ হাজার টাকা পেয়েছি। টাকাটা আমি তোমাদের হাতে তুলে দিলাম। আমাকে অ্যারেস্ট করুক। আমি দেখতে চাই আমাকে এখন কে অ্যারেস্ট করে। তোমাদের সাহায্য করলে যদি অ্যারেস্ট হতে হয়, সেটাও হবো।’
এদিকে নিজেদের প্রিয় শিক্ষকের আগমনের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। অবশেষে তাদের অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে বুধবার প্রায় ভোরের দিকে শিক্ষার্থীদের মাঝে হাজির হন জাফর ইকবাল। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এসময় তিনি বলেন, ‘তোমরা কেন তোমাদের নিজেদের জীবন অপচয় করবা? তোমাদেরকে তো বাঁচতে হবে।সারা দেশের মানুষ আজ তোমাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে গেছে। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ঘুম হারাম করে দিয়েছো তোমরা। তোমরা ইতোমধ্যেই বিজয়ী হয়েই গেছো।’ শাবিপ্রবির সাবেক এই অধ্যাপক শিক্ষার্থীদের উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘জীবন অনেক মূল্যবান। তুচ্ছ বিষয়ে তোমরা নিজদের জীবন অপচয় করবা না।’ নিজেদের প্রিয় এই শিক্ষককে কাছে পেয়ে শিক্ষার্থীরাও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে এসময়।
‘১০ হাজার টাকা দিলাম, আমাকে অ্যারেস্ট করুক’: ‘এখানে শিক্ষার্থীরা সবাই বাইরে থেকে শীতে কষ্ট করছে। তাদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। কোনো মেডিকেল টিম তাদের জন্য নেই।’ গতকাল বুধবার ভোর ৪টার কিছুক্ষণ আগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে পৌঁছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করে এসব কথা বলেন সাবেক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল। শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে টানা আন্দোলন করছেন। আর্থিক সহায়তা দেওয়ায় সাবেক শিক্ষার্থীদের গ্রেফতারের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা আন্দোলনকারীদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল, তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, যা খুবই নিন্দনীয়। ছাত্রদের সাহায্য করে যদি অ্যারেস্ট হতে হয়, তাহলে আমি হব। আমি তোমাদের ১০ হাজার টাকা দিলাম। এ টাকা দিয়ে তোমাদের তেমন কিছু হবে না জানি। কিন্তু আমি দেখতে চাই সিআইডি আমাকে অ্যারেস্ট করে কি না।’
শিক্ষার্থীদের সব অভিযোগ ও দাবি শোনার পর ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমরা আমাকে গণমাধ্যমের সামনে কথা দিয়েছ, এ অনশন ভাঙবে। তোমাদের জীবন অনেক মূল্যবান। একজন মানুষের জন্য তোমরা জীবন দিয়ে দেবে, এটা মানা যায় না। গ্রেফতার সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর বিষয়ে কথা হয়েছে। যেহেতু মামলা করা হয়ে গেছে, তাদের তো আদালতে তোলা হবে। আশ্বাস পেয়েছি ছাত্রদের জামিন দেওয়া হবে।’ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই ড. জাফর ইকবালের ক্যাম্পাসে আসার খবর ছড়িয়ে পড়ে। রাত ৯টার দিকে তিনি ও ইয়াসমিন হক ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন। ক্যাম্পাসে পৌঁছে তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং অনশনরতদের মাথায় মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।