ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে চিনি, আলু, ঝোলা গুড় আর বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণে তৈরি হচ্ছে খেঁজুর গুড়। স্বাদ-গন্ধহীন সেই ভেজাল গুড়েই সয়লাব উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গুড় প্রস্তুতকারকরা বাড়তি লাভের আশায় এবং চাহিদা বেশি থাকায় ঝোলা খেজুর গুড়ের সাথে চিনি আর আলু মিশিয়ে উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন। বাজার থেকে কমদামে নিম্নমানের ঝোলা ও নরম গুড় কিনে তাতে চিনি, রং, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকারি মিশিয়ে গুড় তৈরি করছেন। সেই গুড় স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করছেন। পৌরসভার গুড় বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি খেজুর গুড় ১৫০-২৫০ টাকা ও ঝোলাগুড় ১০০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রান্তিক পর্যায়ের মৌসুমি গুড় উৎপাদনকারীরা এসব গুড় বিক্রি করছেন। গুড় উৎপাদনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কার্তিক মাসের মধ্যভাগ থেকে চৈত্রমাসের প্রথম সপ্তাহ জুড়ে খেজুর গুড় উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব গুড় উৎপাদনকারী ও বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, প্রতি ৮-১০ লিটার খেজুর রসে এক কেজি গুড় উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি কেজি গুড় উৎপাদনে জ্বালানি ও মজুরিসহ খরচ হয় ১৫০ টাকার মতো। পক্ষান্তরে ১০ লিটার রসের সাথে দুই কেজি চিনি মেশালে গুড় বেড়ে হয় দ্বিগুন। একাধিক গাছির সাথে কথা বলে জানা গেছে, চিনি বা অন্য কোন ভেজাল দ্রব্য না মেশালে প্রতি কেজি গুড়ের দাম পড়বে কমপক্ষে ৫০০ টাকা। কেউ কেউ ৬০০ টাকাও বলছেন। কিন্তু এই টাকায় গুড় কেনার ক্রেতা খুব বেশি নেই। তাই চিনি এবং ঝোলা গুড় মিশিয়ে গুড়ের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা হচ্ছে। গুড়ের রং ফর্সা ও শক্ত করতেও চিনি মেশাতে বাধ্য হন বলে জানান তারা। চিনি মেশানো এই গুড়ে প্রকৃত স্বাদ-গন্ধ থাকে না। চিনিমুক্ত গুড়ের রং হয় কালো। তাতে প্রকৃত স্বাদ-গন্ধ অটুট থাকে। বোয়ালমারী বাজারের প্রসিদ্ধ গুড় ব্যবসায়ী মানিক রায়ের অকপট স্বীকারোক্তি, শতভাগ খাঁটি খেজুর গুড় আমাদের কাছে পাবেন না। নির্ভেজাল খেজুর গুড় পেতে চাইলে গাছিদের বাড়ি গিয়ে আনতে হবে। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মো. নাজমুল হক জানান, প্রকৃত খেজুর গুড় চেনার উপায় নেই। গুড়ে ফ্লেভার ব্যবহার করা হচ্ছে। খেজুর গুড়ের সেই ঐতিহ্য আজ আর নেই। গুড় উৎপাদনকারীরা ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। গুড়ের রং ফর্সা ও শক্ত করতে তারা যথেচ্ছভাবে চিনির সাথে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. খালেদুর রহমান জানান, খেজুর গুড়ে চিনি, রং, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকারিরমত ভেজাল মিশ্রণ করলে খাদ্যনালীতে ক্যান্সার, কিডনী ড্যামেজ, লিভারের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।