টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মোঃ শফিকুল ইসলামকে বাসে নির্যাতনের ঘটনার পর ডাকাত দলের আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। রোববার তাদের গ্রেফতার করা হয়। গতকাল সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, তারা প্রথমে বাসের ড্রাইভার ও হেলপারকে জিম্মি করে নিজেরাই বাসটি চালিয়ে ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন সড়কে ঘুরতে থাকে এবং টার্গেট করে যাত্রী উঠায়। পরে যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-মুখ বেঁধে তাদের কাছ থেকে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে সকালের দিকে বিভিন্ন নির্জন জায়গায় নামিয়ে দেয়। চক্রটি সাভার, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় একইভাবে ডাকাতি করত বলে জানান তিনি। গত ২০ জানুয়ারি রাতে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে বাসে টাঙ্গাইলে যাওয়ার পথে ডাকাতের কবলে পড়েছিলেন ডা. শফিকুল ইসলাম। আব্দুল্লাহপুর থেকে বাসে ওঠার পর যাত্রীবেশী সংঘবদ্ধ ডাকাতরা তাকে আটকে রেখে সাত-আট ঘণ্টা পর যাত্রাবাড়ীর কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় বাস ফেলে রেখে যায়।
ওই ঘটনার পর অভিযানে নেমে গত রোববার ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে মোঃ নাইমুর রহমান নাইম, মোঃ আবু জাফর বিপ্লব, মোঃ সজিব মিয়া, মোঃ জহুরুল ইসলাম, মোঃ আলামিন, দিলীপ ওরফে সোহেল, মোঃ আলামিন ও শাহনেওয়াজ ভূইয়া আজাদ নামের আট ডাকাতকে গ্রেফতারের কথা জানায় পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, চিকিৎসক শফিকুল তার বন্ধুকে নিয়ে আব্দুল্লাহপুর পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে আর কে আর পরিবহন নামের বাসে উঠেন।
‘বাসে উঠার সঙ্গে সঙ্গেই ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের দুই হাত ও চোখ বেঁধে বাসের পেছনে নিয়ে যায়। এরপর তাদের কাছে থাকা নগদ এক লাখ ১৫ হাজার টাকা, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এছাড়া দুটি এটিএম কার্ড ও পিন নম্বর নিয়ে আরো এক লাখ ৬০ হাজার টাকাসহ মোবাইল ফোন ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়।’ ডাকাতরা প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বাসে যাত্রী তুলে এভাবে ডাকাতি করে বলে জানান তিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ডাকাতরা ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে বলে জানান তিনি।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি বলেন, তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আর কে আর পরিবহনের বাসটি ভাড়া নেয়ার কথা বলে সাভারের গেন্ডা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে তারা প্রথমে বাসের ড্রাইভার ও হেলপারকে জিম্মি করে নিজেরাই বাসটি চালিয়ে ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন সড়কে ঘুরতে থাকে এবং টার্গেট করে যাত্রী উঠায়। পরে যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-মুখ বেঁধে তাদের কাছ থেকে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে সকালের দিকে বিভিন্ন নির্জন জায়গায় নামিয়ে দেয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে দেশি অস্ত্র, ১০টি মোবাইল ফোন, দুটি খেলনা পিস্তল ও নগদ নয় হাজার আট শ’৮০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার। তাদের বিরুদ্ধে রোববার রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি ডাকাতির মামলা করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।