নাজমুন নাহার শোভা পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার বাসিন্দা। সর্বশেষ পাসপোর্ট করেছিলেন ২০০৯ সালে। প্রয়োজন না থাকায় ২০১৪ সালে মেয়াদ-উত্তীর্ণ হওয়া পাসপোর্টটি আর নবায়ন (রিনিউ) করেননি। চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবেন বলে ২০২১ সালের নভেম্বরে সেটি নবায়ন করে ই-পাসপোর্টের আবেদন করেন। সাধারণ আবেদনকারী হিসেবে আবেদনের পর নির্ধারিত কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়ার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত দিনের পরেও পাসপোর্ট পাননি তিনি। পরে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে জানতে পারলেন সেটি পুলিশ ভেরিফিকেশনে আছে। আবেদনের প্রায় আড়াই মাস পরও ভেরিফিকেশন শেষ হয়নি। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পাসপোর্ট না পেয়ে বিপর্যস্ত শোভা বলেন, আমি জানতাম পাসপোর্ট নবায়নে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন হয় না। নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই হাতে পাওয়ার কথা ছিল পাসপোর্ট। তবে আমি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে শুনলাম আমার পাসপোর্টে থানার নাম পরিবর্তন হয়েছে, তাই এই ভেরিফিকেশন। এ কারণেই প্রায় আড়াই মাসেও হাতে পাইনি পাসপোর্ট। শোভার বাসা ২০০৯ সালের আগে ঢাকার কোতোয়ালী থানার অধীনে ছিল। তবে নতুন করে বংশাল থানা হওয়ার কারণে তার বংশালের আগের বাড়িটিই নতুন থানার মধ্যে পড়ে। তাই তার এই ভোগান্তি। সরেজমিন বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে গিয়ে দেখা গেল অধিদপ্তরের অনুসন্ধান রুমে অনেকেই একই সমস্যা নিয়ে ঘোরাফেরা করছেন।
তেজগাঁও এলাকার শাহাবউদ্দীন চৌধুরী বলেন, আগে আমার বাসা হাতিরঝিল সংলগ্ন তেজগাঁও এলাকায় তেজগাঁও থানার অধীনে ছিল। বর্তমানে এটি হাতিরঝিল থানার সীমানার মধ্যে পড়েছে। এ কারণে আমার পাসপোর্ট নবায়নে ভেরিফিকেশনসহ বেশ কয়েকটি লম্বা ধাপ পেড়িয়ে হাতে পেতে দুই মাস সময় লেগেছে। পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানায়, গত ১০ বছরে ঢাকায় মোট ১০টি নতুন থানা হয়েছে। অনেকের ঠিকানা ও থানা পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণেই ভেরিফিকেশন। স¤প্রতি বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের জারি করা একটি পরিপত্রে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আবেদনকারীরা উদ্বেগে আছে। তবে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এই দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
২০১৯ সালের জারি করা সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী, কোনো আবেদনকারী পাসপোর্ট নবায়নের সময় তার নিজের নাম, বাবার নাম ও মায়ের নামে আংশিক কিংবা পূর্ণাঙ্গভাবে পরিবর্তন করতে পারবে না। বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য তার নিকাহনামা অথবা তালাকনামা দিতে হবে। আর স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য তার পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে।
বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোনো মানুষের অস্থায়ী ঠিকানা (বর্তমান ঠিকানা) পরিবর্তন হলে সেটা কোনো সমস্যা হয় না। অধিদপ্তরে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি দেখিয়ে তারা পাসপোর্টের বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারবে। তবে অধিদপ্তরের জারি করা সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী, কারো যদি স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন হয়, সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে সেটি ভেরিফিকেশনের জন্য পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে (এসবি) পাঠানো হয়। তাদের তদন্তে যদি তথ্য সঠিক ও ‘সন্তোষজনক’ বলে প্রমাণ হয় তাহলে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। পাসপোর্ট পাওয়ার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিনই আমরা এ ধরনের কিছু আবেদনকারী পাই, যাদের পোস্ট অফিস, পোস্ট কোড কিংবা পুলিশ থানা পরিবর্তন হয়েছে। এ ধরনের আবেদনকারীর আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনলাইনে পুলিশের কাছে চলে যায়। পুলিশ সেগুলো দেখে ভেরিফিকেশন করে রিপোর্ট দিয়ে দেয়। অনেকক্ষেত্রে পুলিশ দেখে যে, গ্রাহক আবেদনপত্রে যে ঠিকানা দিয়েছে, সেখানে সে নেই। ঠিকানা মোতাবেক তাকে না পাওয়ার কারণে প্রতিবেদন দিতে দেরি হয়। এর কারণে পাসপোর্ট প্রদানেও বিলম্ব হয়। তবে বিলম্ব হওয়াদের সংখ্যা অনেক কম।
রয়েছে ফাঁক : অধিদপ্তরে আসা বেশ কয়েকজন আবেদনকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা পাসপোর্ট নবায়নের ফরম পূরণের সময় পুরোনো থানার নামটিই রেখে দিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে তথ্য পরিবর্তন না হওয়ায় পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই দ্রুত পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছেন। এমন কমপক্ষে সাতজনের সঙ্গে কথা হয় দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে আবেদনকারীদের অসত্য তথ্য দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে আবেদনকারীর কাছ এসব তথ্য সংগ্রহ করেন এমন একটি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, কোনো আবেদনকারী যদি পুরোনো থানার নাম দিয়েই পাসপোর্ট করেন তাহলে অধিদপ্তরের সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই তথ্য নিয়ে পাসপোর্ট প্রিন্টে পাঠিয়ে দেয়। হোল্ডিং নম্বরের সাথে থানার নাম সম্বলিত ডাটা এখনো পাসপোর্টের সার্ভারে সংযুক্ত হয়নি। তাই আবেদনকারীর সর্বশেষ থানার নাম জানার কোনো উপায় নেই অধিদপ্তরের। এই সুযোগ নিয়ে অনেকেই ভেরিফিকেশন এড়িয়ে পাসপোর্ট নবায়ন করছেন।- ঢাকা পোস্ট।