কুরআনুল কারিমে বর্ণিত ‘তাওবাতুন নাসুহা’ নিয়ে একটি ভ্রান্ত, বানোয়াট, মিথ্যা গল্প সমাজে প্রচলিত আছে। এমনকি কোনো কোনো বক্তার বক্তব্যেও এই বানোয়াট কেচ্ছা শোনা যায়। গল্পটি এমন যে, ‘তোমরা নাসুহার মতো তাওবাহ করো। নাসুহা হলো সেই যুবক যার চেহারা-সুরত দেখতে নারীসদৃশ। তো সেই যুবকের জীবনের একটি ঘটনা এমন যে, এক রাজার দরবারে ঘোষণা করা হয়, তার কন্যা অর্থাৎ রাজকুমারীর খেদমতে একজন পরিচারিকা প্রয়োজন। বিষয়টি নারীর চেহারাসদৃশ তথাকথিত যুবক নাসুহার গোচরীভূত হয়। সেই মওকায় সে ছদ্মবেশে রাজদরবারে চলে যায়। অতঃপর রাজকন্যার খাদেমা হিসেবে তার চাকরি হয়ে যায়। ঘটনাচক্রে সে তখন এক পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। ঘটনাটি এমন যে, রাজপ্রাসাদ থেকে রাজকন্যার গলার হার খোয়া যায়, রাজা ঘোষণা দেন প্রাসাদে কর্মরত সবার দেহ তল্লাশি করা হোক। তল্লাশির কথা শুনে নাসুহা নামের সেই যুবকটি নিজের প্রতারণার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ধরা পড়ে গেলে তার হয়তো কঠিন শাস্তি হয়ে যাবে। তাই আল্লাহর সাহায্য কামনা করে তার পাপের জন্য ক্ষমা চায়। এরই মধ্যে একটি পাখি রাজপ্রাসাদে উড়ে এসে রাজকন্যার গলার হারটি ফেলে দেয়। যার ফলে এ যাত্রায় নাসুহা বেঁচে যায়। আর এ কারণেই তার এই তাওবাহকেই তাওবাতুন নাসুহা বলা হয়।’ এ কাহিনী সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
এবার আসা যাক কুরআনুল কারিমে বর্ণিত তাওবাতুন নাসুহার মূল কথা। তাওবাতুন নাসুহার অর্থ হলো- বিশুদ্ধ বা খাঁটি তাওবাহ। দয়ালু-দয়াময় আল্লাহ তায়ালা সূরা আত-তাহরিমের ৮ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘…তুবু ইলাল্লাহি তাওবাতান নাসুহা’। অর্থাৎ- তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি মনে তাওবাহ করো। এখানে আয়াতের কিছু অনুবাদ উল্লেখ করছি- ‘হে ঈমানদাররা তোমরা নিজের গুনাহখাতার জন্য আল্লাহর দরবারে একান্তভাবে খাঁটি তাওবাহ করো। … আল্লাহ তায়ালা তোমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন এবং এর বিনিময়ে তিনি তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে ঝরনাধারা।’
উল্লেখ্য, ‘খাঁটি তাওবাহ হৃদয়কে খাঁটি ও বিশুদ্ধ বানায়। অতঃপর তা আর তাকে ধোঁকা দেয় না ও বঞ্চিত করে না। তাওবাহ হচ্ছে খারাপ কাজ থেকে ফিরে আসা ও বিরত থাকার নাম। এর শুরু হয় অনুশোচনা দিয়ে এবং শেষ হয় সৎকাজ ও আনুগত্যের মাধ্যমে। এই পরিপূর্ণ তাওবাহর মধ্য দিয়েই হৃদয় গুনাহের কলুষ থেকে মুক্ত হয় এবং মানুষকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করে। এটাই হচ্ছে তাওবাতুন নাসুহা, তথা খাঁটি তাওবাহ, যা হৃদয়কে ক্রমাগত সতর্ক করে এবং কখনো আর গুনাহের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে দেয় না। … আল্লাহ তায়ালা তাওবাহ দ্বারা সব গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং তাওবাহকারীদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। … সে দিন কাফেরদের এমনভাবে লাঞ্ছিত করবেন যে, সে দিন তাদের কোনো ওজর-বাহানার সুযোগ থাকবে না’ (তাফসির ফি জিলালিল কুরআন)।
তাওবাহর ব্যাপারে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আবু বুরদাহ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি নবী সা:-এর সাহাবা আগার রা: থেকে শুনেছি, তিনি ইবনে উমার রা:-এর কাছে হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবাহ করো। কেননা, আমি আল্লøাহর কাছে প্রতিদিন একশ’বার তাওবাহ করে থাকি’ (সহি মুসলিম-৬৭৫২)। এই যদি হয় আল্লাহর রাসূল সা:-এর আমল, তা হলে আমাদের কতবার তাওবাহ করা উচিত তা সহজেই অনুমেয়। দয়াময় আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি তাওবা করার তাওফিক দিন। আমীন। লেখক : সাংবাদিক ও ছড়াকার