উৎকট গন্ধ ও পরিবেশ দূষণরোধে শহরের বাইরে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সরকারপ্রধান এ নির্দেশনা দেন। একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সভায় অংশ নেন। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
৩৩৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত এলাকায় বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা, সড়ক মেরামতে ব্যবহৃত আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং ম্যাকানাইজড পার্কিং স্থাপনের মাধ্যমে যানজট নিরসন’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সিটি করপোরেশনের বর্জ্য শোধনাগার লোকালয়ের বাইরে স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়িগুলোতে দক্ষ চালক নিয়োগের নির্দেশনা দেন তিনি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটির ময়লার গাড়ি চালকরা বেশকিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন। এতে আমরা সবাই দুঃখ পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বিষয়গুলো অবগত। এজন্য তিনি বলেছেন, নতুন প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ সিটিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যেসব গাড়ি কেনা হয়েছে সেগুলোতে যেন দক্ষ লোক নিশ্চিত করা হয়। যেসব গাড়ি কেনা হয়েছে সেগুলোর চালকদের বিশেষ ট্রেনিং দিতে হবে। এসব ঘটনা (দুর্ঘটনা) আর দেখতে চাই না। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এসব শোধনাগার শহরের বাইরে স্থাপন করতে হবে। সেগুলোতে মডার্ন টেকনোলজি যোগ করতে হবে। কেমিক্যাল এবং ফিজিক্যাল দুই ক্ষেত্রেই সর্বশেষ টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, একনেক সভায় ‘চট্টগ্রাম-কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহ (ত্রিশাল) মিলিটারি ফার্ম আধুনিকায়ন’ নামে ২৬৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অন্যান্য এলাকায়ও এসব ফার্ম স্থাপন করতে হবে। এতে বেসরকারি খাতে প্রযুক্তি স্থানান্তর হবে। এই শিল্প এগিয়ে যাবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বরাবরের মতোই বলেছেন, যে কোন প্রকল্পের কাজ যেন সঠিক সময়ে শেষ হয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে লুক্সেমবার্গ: লুক্সেমবার্গ বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত ও গভীর করার নতুন সুযোগ অন্বেষণের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদেরকে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশকে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেভিয়ার বেটেলের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করার সময় এই আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে। প্রায় আধা ঘন্টা স্থায়ী কথোপকথনের সময় দুই প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যেকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরও বিস্তৃত ও গভীর করতে নতুন সুযোগ অন্বেষণ করতে সম্মত হন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় লুক্সেমবার্গকে অবিচল সমর্থক ও বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে চলমান টিকাদানের অগ্রগতি এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলা সম্পর্কে অবহিত করেন।
তিনি গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সময় লুক্সেমবার্গের গ্র্যান্ড ডিউকের পাঠানো একটি অভিনন্দন বার্তার কথা স্মরণ করেন। রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লুক্সেমবার্গের সহায়তা চাইলে জেভিয়ার বেটেল এই বিষয়ে লুক্সেমবার্গের সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন।
রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (আরআইবিএ) সাতক্ষীরার শ্যামনগরে অবস্থিত লুক্সেমবার্গের সাহায্যপুষ্ট ‘ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’ ভবনটিকে ২০২১ সালের জন্য পুরস্কৃত করায় জেভিয়ার বেটেল তার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
ডিজাইনার একজন বাংলাদেশী হওয়ায় শেখ হাসিনা ভবনটির স্থাপত্যেরও প্রশংসা করেন।
কথোপকথনের সময় দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বিমান পরিষেবা চুক্তিটি শিগগির সম্পাদন করতে সম্মত হন। লুক্সেমবার্গ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু করতে আগ্রহী।
তারা উভয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে তাদের সদিচ্ছা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনায় লুক্সেমবার্গের দক্ষতার প্রশংসা করেন এবং এর থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ গ্রহনের আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বেটেল আনন্দের সাথে উল্লেখ করেন যে, তার দেশে এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বসবাস করে এবং বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী সেখানে পড়াশোনা করছে।
শেখ হাসিনা জেভিয়ার বেটেলকে জানান যে, বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৬ সালে জাতিসংঘের এলডিসি পর্যায় থেকে উত্তীর্ণ হবে এবং উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে জিএসপি+ এর মতো বাণিজ্য সুবিধার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে তার সরকারের সহযোগিতা চান।
লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতি আন্তরিক সহায়তা দিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন।
উভয় নেতা অভিন্ন উদ্বেগের বিষয় সংশ্লিষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়েও আলোচনা করেন। শেখ হাসিনা অবকাঠামো, পানি শোধন, নগর উন্নয়ন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে লুক্সেমবার্গের জলবায়ু-স্মার্ট বিনিয়োগকে স্বাগত জানান।
জেভিয়ার বেটেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার সুবিধামত সময়ে লুক্সেমবার্গ সফরের আমন্ত্রণ জানান। এ সময় শেখ হাসিনা চলমান আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি দেখার জন্য জেভিয়ার বেটেলকে যথাশিগিগির বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
শুরুতে দুই নেতা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে এবং সর্বত্র বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা বজায় রাখার জন্য একে অপরকে অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা বাজেটে সহায়তা এবং ভ্যাকসিন দানের মাধ্যমে মহামারী প্রভাব কমাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য ‘টিম ইউরোপ’কে ধন্যবাদ জানান।